ঈদযাত্রায় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্টেশনে কোনো মই ও টুল থাকবে না। আশা করব, ২৭ তারিখ থেকে মই ও টুল আপনারা স্টেশনে দেখতে পাবেন না।’

আজ মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

রেলসচিব বলেন, ‘ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা যাবে না। এটা আজকে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। এর আগে আপনারা দেখেছেন, মই ও টুল ব্যবহার করে ছাদে উঠে যেতেন। এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্টেশনে কোনো মই ও টুল থাকবে না। আশা করব, ২৭ তারিখ থেকে মই ও টুল আপনারা স্টেশনে দেখতে পাবেন না।’

ফাহিমুল ইসলাম বলেন, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ঈদ। তাই এবার যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেলওয়ে কর্মচারীর পরিচয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন ও পোস্টের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ে সচিব বলেন, কেউ কর্মচারীর পরিচয় দিলে সে যে কর্মচারী, তা তো নয়। এটি একটি প্রতারক চক্র। তারা টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে পরে উধাও হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে মন্ত্রণালয়কে জানাতে অনুরোধ করেন সচিব। তিনি বলেন, তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিনা টিকিটে যাত্রী ঠেকাতে তিন স্তরের তল্লাশিব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে ফাহিমুল ইসলাম বলেন, কমলাপুর স্টেশন থেকে খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি পকেট গেট বা আইসিবি রয়েছে। এগুলো দিয়ে অনেক সময় বিনা টিকিটে যাত্রীরা উঠে পড়ে। সেসব জায়গায় কেউ যাতে বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে না পারে, তা দেখতে রেলের সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রেলসচিব আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কমলাপুর স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন, রাজশাহী স্টেশন ও চট্টগ্রাম স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এমনকি রেলযাত্রার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবকে রেল পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, স্বস্তিতে যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন। কোনো ধরনের সমস্যা চোখে পড়েনি। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন কালোবাজারিকে ধরা হয়েছে।

রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পোশাক গার্মেন্টসগুলো ছুটি হলে ভিড় বাড়বে। সে জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা আছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’ রেল পুলিশের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, আনসারসহ অনেকে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমল প র র লওয

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ