মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে আঘাত করা শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রভাবে কেঁপে উঠেছে থাইল্যান্ডও। সেদেশে ভূকম্পনের ঝাঁকুনিতে বহুতল ভবনের রুফ টপ সুইমিং পুল থেকে পানি উপচে পড়তে দেখা গেছে।

বিবিসি লিখেছে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে মিয়ানমারে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়। তাকে কেঁপে ওঠে দেশটি। এই ভূমিকম্পের প্রভাব কম্পন অনুভূত হয়েছে থাইল্যান্ড, চীনের একাংশ, বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে।

ভূমিকম্পের প্রভাবে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর রাস্তায় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। তবে এই ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছ থাইল্যান্ডে, দেশটির রাজধানী ব্যাংককে বেশ কিছু ভবন ধসে গেছে, ফাঁটল দেখা গেছে রাস্তায়।

আরো পড়ুন:

আরসার প্রধানসহ ৬ জন গ্রেপ্তার, ১০ দিনের রিমান্ড

বাংলাদেশি ২৬ জেলেকে ফেরত আনল বিজিবি

বিবিসি বলছে, প্রবল ঝাঁকুনিতে ব্যাংককে একটি বহুতল ভবনের ছাদের ওপর সুইমিং পুলের পানি উছলে ওঠে। ভবনের ওপর থেকে বিভিন্ন তলায় পড়তে পড়তে সেই পানি রাস্তায় চলে আসে। এমন ঘটনা বেশ কয়েকটি ভবনে দেখা গেছে।

থাইল্যান্ডে আকস্মিক ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ। অনেকে ছোটাছুটি করে রাস্তায় নেমে আসে।

থাইল্যান্ড ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ নয়। ফলে হঠাৎ ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি ব্যাংককের বাসিন্দদের মধ্যে বেশি আতঙ্ক তৈরি করে।

বিবিসি লিখেছে, পরিস্থিতি শামাল দিতে থাই সরকার জরুরি বৈঠক করেছে।  

ব্যাংককে বসবাসকারী বিবিসির সাংবাদিক বুই থু বলেছেন, যখন প্রথম ঝাঁকুনি অনুভূত হয়, তখন তিনি রান্না করছিলেন।

“আমি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, খুবই আতঙ্ক বোধ করি,” বলেন তিনি।

“আমি জানি না, এটা কী হলো, কেন হলো। কারণ গত এক দশকে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি।”

বুই থু বলেন, “আমি যে ভবনে থাকি, সেটির দেয়ালে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, রুফ টপ সুইমিং পুল থেকে পানি ছিটকে নিচে পড়তে দেখেছি। মানুষজনের চিৎকার শুনেছি।”

বড় ঝাঁকুনির পর আরেকটি পরাঘাত হলে অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে বুই থু নিজেও নিচে নেমে রাস্তায় চলে যান।

বুই থু বলেন, তার জানা মতে ব্যাংককের ঘরবাড়ি ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈরি নয়, কারণ থাইল্যান্ডে ভূমিকম্প হয় না বললেই চলে।

ভূ-তত্ত্ব অনুযায়ী, থাইল্যান্ড কোনো টেকটোনিক প্লেটের ওপর পড়েনি। তবে মিয়ানমার পড়েছে। দেশটির মাঝ বরবার রয়েছে ফল্ট লাইন বা ফাঁটল। ফলে মিয়ানমারে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। আর এর প্রভাবে থাইল্যান্ড মৃদূ কেঁপে ওঠে। তবে এবার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে হওয়া ভূমিকম্পটি ব্যাংককে বড় ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে নিখোঁজ ৪৩

থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলা একটি ভবন ধসে  পড়েছে। এর ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছে অন্তত ৪৩ জন নির্মাণ শ্রমিক। তবে তাদের শেষ অবস্থা জানা যায়নি।

রাজধানীর চাতুচাক পার্কের কাছে নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে পঞ্চাশ জন শ্রমিক ছিলেন। সাতজন সরে গেলেও ৪৩ জন আটকা পড়েন বলে ধারণা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছে থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ইমার্জেন্সি মেডিসিন।

বাং সু জেলার ডেপুটি পুলিশ প্রধান ওরাপাত সুকথাই বলেছেন, “আমি যখন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পৌঁছাই, তখন আমি সাহায্যের আকুতি ভেসে আসতে শুনি। তারা বলছে, আমাকে বাঁচাও।”

ভবনটি সরকারি অফিসের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছিল।

বাংলাদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মিয়ানমারে আঘাত করা ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল দেশটির মান্দালয় অঞ্চল। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৫৯৭ কিলোমিটার।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলেছে, ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপশ্চিমে। ভূকম্পন্ন কেন্দ্র মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে।

মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ছাড়াও ভারত ও চীনে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ৫ মার্চ ভারতের মণিপুরে মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় প্রবল ভূমিকম্প হয়। এর প্রভাব অনুভূত হয় ঢাকা, সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার হিসাবে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৬।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ