সাত শ কোটি টাকার ৩৩তলা ভবন মুহূর্তে ৩ তলার সমান ধ্বংসস্তূপ
Published: 29th, March 2025 GMT
ব্যাংককের আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অস্তরাগের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এই আবহে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কয়েক শ উদ্ধারকর্মী।
আকাশের কমলা রঙের আভার নিচে এই দৃশ্যের অদূরে একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সঙ্গে রয়েছেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের একটি দল। একটি নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবন মুহূর্তে তিনতলার সমান একটি কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হয়েছে, এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
কিন্তু সামান্য দূরে চোখের সামনেই তো বাঁকানো তার ও ধাতুর উপাদান বের হয়ে আছে।
এরই মধ্যে আরও বেশি পেশাদার উদ্ধারকারী ও সামরিক বাহিনীর দল এসেছে। জ্বালানো হয়েছে ফ্লাডলাইট। কিন্তু জীবিত কোনো ব্যক্তিকে উদ্ধারের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলে মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের মান্দালয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। ১১ মিনিটের মাথায় সেখানে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে ১৪৪ জন নিহত এবং ৭৩২ জন আহত হয়েছে বলে দেশটির জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন। তিনি যে কোনো দেশ ও সংগঠনের সহায়তা চেয়েছেন। রাজধানী নেপিডোসহ মিয়ানমারের ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মিয়ানমারের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে অনেক ভবন ধসে গেছে, রাস্তাঘাট চৌচির হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের পর অফিস ও বাসাবাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে এসেছেন মানুষ। ব্যাংকক, ২৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?