ঈদের আনন্দ ভুলে গেছেন ২ বিধবা চা শ্রমিক
Published: 31st, March 2025 GMT
একই ঘরে দুই বিধবা নারী চা শ্রমিকের বসবাস। সখিনা (৫০) ও মেহেরজান (৫৫)। ৩০ বছর আগে তারা স্বামী হারিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে জীর্ণ কুটিরে বসবাস করছেন। ঈদের আনন্দ যে কী, তারা তা ভুলেই গেছেন।
তারা জানান, তারা ননদ ও ভাবী তিন দশক ধরে এভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। এবার ঈদের আগে সপ্তাহিক মজুরী পাননি। এই যৎসামান্য আয় দিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সখিনার অভিযোগ তিনি নিয়মিত শ্রমিক হয়েও চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বরাদ্দকৃত কোনো সাহায্য বার বার চেষ্টা করেও পাননি। এ নিয়ে কথা হলে বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, কোনো মজুরী অপরিশোধিত নয়। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে হয়ত পেতে দেরি হচ্ছে। জীবনমান উন্নয়নের বরাদ্দকৃত সহায়তা সমাজসেবা বিভাগ পরিচালনা করে থাকে।
চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত জনগোষ্ঠীর জীবনে রয়েছে নানা বঞ্চনার গল্প। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানে ঈদের আগের দিন এই দুই নারী শ্রমিকের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। এতে জানা যায়, তারা দুইজন ননদ ও ভাবী। মেহেরজান এক সময় চা বাগানে কাজ করলেও এখন দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেন। সখিনা (ভাবী) ওই বাগানের নিয়মিত শ্রমিক।
এ সময় সখিনা বলেন, ‘‘আমার ঘরে ঈদের আনন্দ কেমনে আসবে? ৩০ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে। ছন্দহীন জীবনে মলিন মনে কি আর আনন্দ আসে?’’
ঈদে নতুন কাপড় কিনেছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাগানের সাহেবরা ঈদের আগের মজুরী দেয়নি। তাই নতুন কাপড় কিনতে পারেননি। তবে বাগানের এক হুজুর একখানা শাড়ি দিয়েছেন, তা দিয়েই চলবে। তিনি জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার কিছু দিন পর ননদ মেহেরজানেরও স্বামী মারা যান। এরপর থেকে দুইজন এক ঘরে বসবাস করছেন। তার চা শ্রমিকের মজুরীর আয় ও মেহেরজান ভিক্ষার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলেন তারা।
বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নাসিম আহমদ জানান, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়টি পরিচালনা করেন সমাজসেবা বিভাগ। এখানে তাদের হাত নেই।
ইটা বাগানের ব্যবস্থাপক কে জি আজম জানান, ঈদের আগে তারা শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করে দিয়েছেন। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে হয়ত পেতে দেরি হচ্ছে।
ঢাকা/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।