চৈত্রের আকাশে তপ্ত সূর্য। রোদের তীব্রতাকে সঙ্গী করে শুরু হয় দিনটি। সকাল বেলাতেই তেতে উঠে প্রকৃতি। রোদ আর প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে ছেলে মেয়ে আর নাতি-নাতনিকে নিয়ে প্রাণের বিদ্যাপীঠে হাজির হন ৭৫ বছর বয়সী আব্দুল আওয়াল। পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় পর পুরোনো সহপাঠী ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া আব্দুল আওয়াল। স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েন তিনি। ফিরে যান হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোতে, শৈশবে। আওয়ালের মতো প্রবীণদের সঙ্গে যোগ দেন নবীনরাও। এ প্রজন্মের সঙ্গে সে প্রজন্মের মেলবন্ধন। এভাবেই ৩ হাজার শিক্ষার্থীর আড্ডা, সেলফি আর স্মৃতিমন্থনে জমে ওঠে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। স্কুলটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার দিনভর চলে জমকালো আয়োজন। 

অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া। ‘এসো স্মৃতির প্রাঙ্গণে মিলি প্রীতির বন্ধনে’ স্লোগানে আনন্দ উৎসবের জন্য সাজানো হয় পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সকাল সকাল বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। স্কুলে আসা মাত্রই আয়োজক কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকের হাতে টি-শার্ট, ব্যাগ ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন। সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ের মাঠ বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, কৃষক, গাড়িচালক কিংবা রিকশা চালক-এ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সকল শ্রেণিপেশার মানুষের গায়ে একই পোশাক। সাদা টি-শার্ট। কারো সঙ্গে কারো ভিন্নতা নেই। পরে বিশাল প্যান্ডেলে সহস্রাধিকার চেয়ারে সারিবদ্ধভাবে বসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় প্রবীণ ও নবীন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান। মধ্যাহ্নভোজের পরও চলে স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান। বিকেলে চা বিরতির পর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন এ স্কুলের ১৯৯০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। বর্তমানে তিনি বরিশালের জেলা প্রশাসক। প্রায় ৩৫ বছর পর প্রাণের বিদ্যাপীঠে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ স্কুলে আমার হাজারো স্মৃতি রয়েছে কোনটা রেখে কোনটা বলব। বাল্যকালের অনেক বন্ধু এসেছে। ভীষণ ভালো লাগার একটি দিন কাটল স্কুলে এসে। আয়োজনটাও বেশ চমৎকার। 

১৯৭৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা বলেন, এই বয়সে এসে এমন একটি দিন পাবো এটা কল্পনা করতে পারি না। ৫০ বছরের বন্ধুদের পেয়েছি। গল্প করছি। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া আড্ডা। আবার বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও পেয়েছি। 
১৯৯৫ ব্যাচের ছাত্রী শাহীন সুলতানা বলেন, মিলনমেলাটা আমাদের সবাইকে এক করে দিয়েছে। পেশাগত কারণে সবাই ব্যস্ত। এই আয়োজন সব ব্যস্ততা কাটিয়ে সবাইকে এক করে দিয়েছে। সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবার বিষয়ে জানা হয়েছে। সত্যিই দিনটি খুবই আনন্দে কেটেছে। 

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় পুরো আয়োজন। রাতে দেশের খ্যাতিমান শিল্পীদের গান পরিবেশনায় মুগ্ধ হন সবাই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ