মক্কায় রাসুলের (সা.) অন্যতম শত্রু ছিল উকবা ইবনে আবি মুঈত। সে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহকে অপমান করতে নির্লজ্জ কাজ করত। নামাজে সেজদায় গেলে সে মৃত উটের নাড়িভুঁড়ি রাসুলের ওপর ছুঁড়ে মারত।

বদর যুদ্ধে উকবা নিহত হয়।

উকবার স্ত্রীর নাম ছিল আরওয়া বিনতে কুরাইয। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। উকবার ৬ জন সন্তানের প্রত্যেকেই পরবর্তীকালে মুসলমান হন। তাদের একজন ছিলেন উম্মে কুসলুম (রা.

)।

উকবার মেয়ে উম্মে কুলসুম ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কায়, কিন্তু সাহাবিদের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করতে পারেননি। ষষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় তিনি একাকী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। পেছন থেকে তাঁকে অনুসরণ করেন তাঁর দুই ভাই ওয়ালিদ ও আম্মার। দুই ভাই তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। বোনের পিছু নেন তারা, যাতে করে তাঁকে মক্কায় ফিরিয়ে নিতে পারেন।

আরও পড়ুনদুই কিশোরের বীরত্বে মারা গেল আবু জাহেল১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি ধারা ছিল, মক্কা থেকে কেউ যদি মদিনায় চলে যায়, তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। সেই ধারা অনুযায়ী উম্মে কুলসুমকে তাঁর ভাইদের হাতে তুলে দিতে হতো। দুই ভাই চুক্তি অনুযায়ী রাসুলের কাছে আবেদন জানান।

উম্মে কুলসুম (রা.) আপন ভাইদের সঙ্গে মক্কায় ফিরে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। চুক্তির প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এতে নারীদের কথা উল্লেখ ছিল না বা নারীদের বোঝানো হয়নি। মক্কা থেকে মদিনায় চলে যাওয়া বলতে মূলত কোনো পুরুষকে বোঝাচ্ছিল, যাতে সে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হতে না পারে। সেই জায়গা থেকে উম্মে কুলসুম (রা.) আবেদন করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাকে কাফিরদের কাছে ফিরিয়ে দেবেন? অথচ, আমার ধৈর্যধারণের ক্ষমতা নেই। আর নারীরা যে কী দুর্বল অবস্থায় আছে, তা তো জানেনই!’

আরও পড়ুনযে সাহাবির কোরআন তিলাওয়াতে মুগ্ধ হন ফেরেশতারা২৮ জানুয়ারি ২০২৫

মদিনায় তখন পিনপতন নীরবতা। একজন নারী একাকী এত দূর চলে এসেছেন, এবার তাঁকে যদি তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফেরত পাঠানো হয় তাঁর কেমন লাগবে? তার ওপর চুক্তি। এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই মুহূর্তে আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত নাজিল করলেন।

আল্লাহ জানিয়ে দেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, বিশ্বাসী নারীরা দেশত্যাগী হয়ে তোমাদের কাছে এলে তোমরা তাদের পরীক্ষা করো। আল্লাহ তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ভালো করে জানো। যদি তোমরা জানতে পারো যে তারা বিশ্বাসী, তবে তাদের আর অবিশ্বাসীদের কাছে ফেরত পাঠিয়ো না।’ (সুরা মুমতাহানাহ, আয়াত: ১০)

যাঁর বাবা নবীজিকে (সা.) অপদস্থ করতে চাইত, তার মুসলিম মেয়ের নিরাপত্তা, সুরক্ষার জন্য আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত নাজিল করেন। আয়াত অনুসারে নবীজি সিদ্ধান্ত নিলেন, উম্মে কুলসুম (রা.)-কে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হলো না, তাঁকে মদিনায় থাকার অনুমতি দেওয়া হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,১৮০)

উম্মে কুলসুমের (রা.) দেখাদেখি আরো কয়েকজন নারী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মক্কায় থাকা মুসলিম নারীদের জন্য উম্মে কুলসুম পরিচিতি লাভ করেন একজন সাহসী নারী হিসেবে। উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেন যায়িদ ইবনে হারিসা (রা.); একমাত্র সাহাবি, যার নাম পবিত্র কোরআনে আছে।

আরও পড়ুনসুরা মুজাদালাহর ২২ নম্বর আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক রআন মদ ন য় আল ল হ ক লস ম

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে