থাইরয়েড হরমোন মানুষের বৃদ্ধি, বিকাশ, শারীরবৃত্তিক আর বিপাকীয় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম বা বেশি হলে শরীরে দেখা দেয় নানা বিপত্তি। এগুলো হরমোনের কার্যগত সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ হয়। থাইরয়েডজনিত সমস্যার মধ্যে হাইপোথাইরেডিজম রোগীর সংখ্যা বেশি। এটি থাইরয়েডের সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। সাধারণত মহিলারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। প্রতি আটজন মহিলার মধ্যে একজন হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যায় ভুগে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অটোইমিউন কারণে এটি দেখা দেয়। এছাড়া থাইরয়েডে অস্ত্রোপচার, থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ, আয়োডিনের ঘাটতি, রেডিয়েশন ও কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হয় বলে বেশির ভাগ রোগী সমস্যা বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে রুটিন পরীক্ষার সময় থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। হাইপোথাইরোডিজম আক্রান্ত ব্যক্তির অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ, ওজন বেড়ে যাওয়া, শীত শীত ভাব, অবসাদ, চুল ও ত্বকের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক বা অতিরিক্ত মাসিক, গর্ভ ধারণে অক্ষমতা, অকাল গর্ভপাত প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নবজাতকদের সাধারণত কনজেনিটাল হাইপোথাইরোডিজম দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে দৈহিক ও মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশ ব্যাহত হয়, এমনকি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয়তার কারণে থাইরয়েড হরমোন বেশি নিঃসৃত হলে তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। এর ফলে বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম, বারবার ক্ষুধা লাগা, ওজন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত গরম লাগা, মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা কম হওয়া, বন্ধ্যত্ব প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত কিছু রোগ রয়েছে। যেমন গয়টার বা গলগন্ড, থাইরয়েড নডিউল এবং থাইরয়েড ক্যান্সার।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ থাইরয়েড জটিলতায় ভুগছেন। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে থাইরয়েডজনিত সমস্যা হার বেশি দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে থাইরয়েডের
রোগী চিকিৎসকের কাছে কম আসে। বয়স ও লিঙ্গ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ও জটিলতা দেখা যায়। অনেক সময় উল্লেখযোগ্য কোনো উপসর্গ না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন না।
ফলে অনেকের ক্ষেত্রে এটি শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। এর দরুন পরবর্তীকালে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই থাইরয়েডের বিপত্তিজনিত কারণে যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় তা সম্পর্কে অবগত হতে পারলে এ রোগের ব্যাপারে
সচেতন হওয়া সম্ভব। সন্দেহজনক যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা থাইরয়েডের বিপত্তি শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। v
[ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ]
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড হরম ন র ত সমস য উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”
ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”
সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”
“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।