রাজবাড়ী সদর উপজেলায় জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তসুলতানাপুর ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামের ওহিদুল ইসলাম ও পার্শ্ববর্তী বানিয়য়ারি গ্রামের হাফিজ মোল্লার সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ-বৈঠক হলেও মীমাংসা হয়নি। গত ৬ এপ্রিল দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ছয়জন আহত হন। রেহাই পাননি ৯৫ বছরের বৃদ্ধও।  

ওহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় আলাউদ্দিন ফকিরের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে তিনি ১০ শতাংশ জমি কিনেন। এর কয়েক বছর পর তার জমির পাশে দুই শতাংশ জমি কিনেন হাফিজ মোল্লা। কিন্তু তিনি ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ জমিতে ঘর নির্মাণ করেন। এটি নিয়ে হাফিজ মোল্লার সঙ্গে তাদের বিরোধ। 

তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে নিজ জমিতে দোকান নির্মাণ করতে গেলে হাফিজ মোল্লা লোকজন নিয়ে বাধা দেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলাও হয়। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল ওহিদুলের ৯৫ বছরের বাবা খোরশেদ আলম দোকানে ছিলেন। হঠাৎ হাফিজ মোল্লা লোকজন নিয়ে তার বৃদ্ধ বাবাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। তার তিন ভাই মিজানুর রহমান, রেজাউল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম এগিয়ে তার বাবাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। 

ওই সময় তারা প্রতিহত করতে গেলে হাফিজের পক্ষের দু’জন আহত হন বলে জানান ওহিদুল। 

তিনি আরও জানান, তার আহত বাবা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ও ভাই মিজানুর রহমান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই চিকিৎসা নিয়ে যখন ব্যস্ত এ সুযোগে পরদিন ৭ এপ্রিল তাদের দোকানটি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে হাফিজ মোল্লা জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি ১৪ শতাংশ জমি কিনে বিদেশ চলে যান। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করেননি। এই সুযোগে ওই জমির ১০ শতাংশ কিনেন তার প্রতিপক্ষ। তিনি ফিরে এসে বাকি চার শতাংশ দাবি করেন। কিন্তু ওরা এই চার শতাংশ দিতে নারাজ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। ঘটনার দিন তিনি ও তার ছেলে সেখানে ছিলেন। তাদের ওপর হামলা করেছে প্রতিপক্ষ। তাদের কারা কুপিয়েছে ও কারা দোকান ভেঙেছে তা তিনি জানেন না।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মাহমুদুর রহমান জানান, জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওহিদুল ও হাফিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাল্টপাল্টি মামলা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 

দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি হওয়ার পর সেগুলো বিভিন্ন লাইটার জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ঘাট হয়ে গুদামজাত হয়। এরপর সেখান থেকে যায় বিভিন্ন বাজারে। লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করেন। তারপরও কষ্টে চলে তাদের সংসার।

চট্টগ্রাম মহানগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় ১৭টি ঘাটে আমদানি পণ্য খালাস হয়। আর এসব খালাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৪ হাজার ঘাট শ্রমিক। এই শ্রমিকরা পালাক্রমে কাজ করেন ঘাটে। দিন-রাত হাড় ভাঙা খাটুনির পরও দিন যায় কষ্টে। সময়ের সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্য বাড়লেও তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।

চট্টগ্রাম গুদাম ও ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল খালেক রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রতি বছর মে দিবসে অনেকেই আমাদের স্মরণ করেন। কিন্তু বছর জুড়ে আমাদের অবহেলা আর বঞ্ছনার জীবন। সারা দিন কাজ করে ঘাট শ্রমিকরা ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকে। কিন্তু এর বিনিময়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভারী বস্তা বহন করে শ্রম দিতে হয়। কখনো কখনো এই পারিশ্রমিকও জোটে না। আবার সব শ্রমিকের প্রতিদিন কাজও জোটে না।” 

ঘাট শ্রমিক আবদুল মতিন জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, গম, সার, চিনি, সাদা মটর, পাথর, কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, বল ক্লে, লাইম স্টোন, জিপসাম, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী পণ্য। এসব পণ্য মাদার ভেসের থেকে লাইটার জাহাজে খালাসের পর মাঝিরঘাটের বিভিন্ন গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে শ্রমিকরা খালাস করে বিভিন্ন ট্রাকে লোড করেন, আবার ট্রাক থেকে বিভিন্ন গুদামে মজুদের জন্য আনলোড করেন। প্রতিদিন একজন শ্রমিক একশ’ দেড়শো বস্তা পর্যন্ত পণ্য বহন করেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ভারী পণ্য বহনের এসব কাজ করেন। এতে তাদের দৈনিক মজুরি মিলে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।

মনিরুল মোল্লা নামে আরেক শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা দিনে হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবার সন্তানদের জন্য মাসে এক দুই বার মাছ মাংস খাওয়া সম্ভব হয় না।”

আবদুল সবুর নামের অপর একজন ঘাট শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের শ্রমে-ঘামে দেশের আমদানি রপ্তানি বড় কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামে। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবার জোটে না। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।”

ঘাট শ্রমিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, “৪ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন যা আয় করি তার অর্ধেক চলে যায় ব্যক্তিগত খরচে। বাকি অর্ধেক দিয়ে পুরো সংসার চালাতে হয়। জিনিসপত্রের যা দাম অর্ধেক আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিন বেলা খাওয়াও কষ্ট।”

সফি মোল্লা নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, “ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। অনেকেই কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে অনেক সময় ঘাট বন্ধ থাকে। তখন কাজ থাকে না। এতে আমাদের অভাবের শেষ থাকে না।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ