গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ
Published: 10th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বরতম ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হকের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, চবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো.
আরো পড়ুন:
দেশের প্রথম জাহাজ নিয়ন্ত্রণ অফিস ‘দেয়াঙ কেল্লা’
৪৫ হাজার রোজাদারকে ইফতার করিয়েছে চবি শিবির
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আজ আমাদের একটাই এজেন্ডা, গাজাবাসিকে রক্ষা করা। আমাদের প্রতিবাদ তাদের বিরুদ্ধে, যারা নিয়মিতভাবে মানবতা লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের নিরপরাধ শিশু, বৃদ্ধা, নারীদের নৃশংসভাবে হত্যা করছে। আরব বিশ্ব রাজনৈতিক কারণে মানবতার পক্ষে কথা বলছে না। জায়োনিস্টরা জ্ঞানের জায়গায় বিচরণ করছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হবে।”
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা ছাত্রজীবন থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন মিছিল করছি। কিন্তু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনি। মানব সভ্যতায় এমন হত্যা পৃথিবীর আর কোথায় ঘটেনি। পৃথিবীর ১৪৮টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও জাতিসংঘ কেনো দিচ্ছে না? আরব লীগ, ইসলামী সহযোগী সংস্থাকে (ওআইসি) দ্রুত ফিলিস্তিনের পক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যত্থায় এসব সংস্থা ভেঙ্গে দিতে হবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, “গাজায় যে আক্রমণ হচ্ছে, তা আমরা বাল্যকাল থেকে দেখে আসছি। আন্তর্জাতিক মহল সব বিষয়ে সরব থাকলেও ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তারা নিরব কেনো? জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে শক্তিশালী জনসম্পদ তৈরি করতে হবে। পুরো পৃথিবী থেকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে হবে। মানবতাবিরোধী কাজ যেখানেই হবে, সেখানেই আমরা প্রতিবাদ করব।”
সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ উপ চ র য ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন।
বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে।
আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব।
সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।
আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।
আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।
সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ