চাঁদার জন্য গুলি ছুড়ে যাত্রী পারাপারের ছিনিয়ে নেওয়া দুটি ট্রলার উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর ভাটিরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রলার দুটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে জড়িত কাউকেই পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এর আগে গতকাল বুধবার সাভার পৌর এলাকার কাতলাপুরের কর্ণপাড়া বংশী নদীর মিলন ঘাট থেকে ট্রলার দুটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এলাকাবাসী ও পুলিশ বলছে, নদী পারাপারের খেয়াঘাটের দখল নিয়ে সিংগাইর ও সাভারের ছাত্রদল ও যুবদল নেতার বিরোধের জের ধরে মিলন ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে অস্ত্র হাতে ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকার ছাত্রদল এক নেতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নদীর দুপারের মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় খেয়াঘাটের বর্তমান দখলদার সাভার পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক যুবদল নেতা মো.

কামরুল ইসলাম বুধবার রাতে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ গতকাল অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে।

মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাটটি তিনি পরিচালনা করছেন। কিছুদিন ধরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খান (২৬), মোর্শেদ খান (২৫), মোশাররফ খান (২৮), হৃদয় (২৫), রনি খানসহ (৪২) অজ্ঞাত ১০-১২ জন ঘাট পরিচালনায় বাধা দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। কিন্তু তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় বুধবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তারা পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মিলনঘাটে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা কামরুলকে মারধর করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অন্তর খান পিস্তল বের করে   গুলি ছোড়েন। এ সময় সন্ত্রাসীরা খোকন ও আরমান নামক দুজন মাঝিকে মারধর করেন। এরপর কামরুলের দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছিনিয়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কামরুল ইসলাম ও তার ছেলে হেদায়েত উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে ঘাটটি পরিচালনা করে আসছিলো। এ ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নদীর অপর পাড়ের সিঙ্গাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কামরুল ইসলাম বিরোধ চলছিলো। এর জের ধরেই   ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত অন্তর সিংগাইরের ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান স্থানীয়রা। তবে তিনি কোন পদে আছেন তা তারা জানাতে পারেননি।

কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েত উল্লাহ জানান, সিঙ্গাইরের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী মাসখানেক ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিল। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ নৌকায় করে তারা অস্ত্রসহ ঘাটে আসেন। এ সময় অন্তর খান পিস্তল বের করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে ঘাটপাড় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। 

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া জানান, ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আশপাশের লোকজন গুলির শব্দ শুনেননি বলে জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, খেয়াঘাট দখল ও নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।  ইতিমধ্যে ছিনতাই হওয়া ট্রলার দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

সাভার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুবকর সরকার সমকালকে বলেন, মিলন ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বেশ কিছু দরপত্র জমা পড়েছে। সেগুলো যাচাই–বাছাইয়ের কাজ চলছে। এখনো কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার শ্রমজীবী মানুষ

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। আশির দশকজুড়ে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন-আইটিইউসিতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসেরও নির্বাহী পরিচালক। মহান মে দিবস উপলক্ষে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফুর রহমান তপন

সমকাল: গত বছর মে দিবসে সমকালে আপনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। এর পর এক বছর কেটে গেল, এই সময়ে দেশের শ্রমিকদের জীবনে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: প্রথমেই বলব, এ বছর আমরা একেবারে ভিন্ন এক পরিবেশে মে দিবস পালন করছি। মে দিবসের শিক্ষা হলো, একটি রাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে যদি গণতন্ত্র চর্চা না হয়, রাষ্ট্রের অভিপ্রায় যদি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন না হয়, তাহলে শ্রমিকরা তার ন্যায্য হিস্যা পাওয়া দূরের কথা, ন্যায্য হিস্যার দাবিও করতে পারেন না। ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রক্ষমতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তার ফলে আমরা বর্তমানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখছি। সে হিসেবে বর্তমানে আমরা একটি মৌলিক পরিবর্তনের মধ্যে আছি। আরেকটি বিষয় হলো, এবারই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। সে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মে দিবসের ৯ দিন আগে। এ দুটি বিষয় যদি আমরা বিবেচনায় রাখি, তাহলে এবারের মে দিবসের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে।

একই সঙ্গে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও এ সময়ে ঘটেছে। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পরই ছিল শ্রমিকের অংশগ্রহণ। বহু রিকশা রীতিমতো আহত-নিহতদের হাসপাতালে নেওয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের পর শ্রমিকদের আবারও সেই পুরোনো বহু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারখানা বন্ধ, বকেয়া মজুরি না পাওয়া, ঈদের সময় বেতন-বোনাস বঞ্চনা, এগুলো চাইতে গিয়ে রাস্তায় আবারও গুলি খাওয়া ইত্যাদি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। 

আশা করা হয়েছিল, রাজনৈতিক পালাবদলের পর শ্রমিকরা তাদের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে অন্তত বাধার সম্মুখীন হবেন না। কিন্তু এখনও বহু শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকে জেলে আছেন। এটি অবশ্য আবারও দেখিয়ে দিল, শ্রমিকদের রাষ্ট্রক্ষমতার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে, যা মে দিবসেরই শিক্ষা। শ্রমিক শ্রম দিয়েছেন, তিনি তাঁর পাওনাটা চান। ওই পাওনা যিনি দিচ্ছেন না, আইনের দৃষ্টিতে তিনি অপরাধ করছেন। অথচ এখানে শ্রমিককে অপরাধী সাব্যস্ত করা হচ্ছে পাওনা দাবি করার জন্য। এই দুই ধরনের বাস্তবতাই এবারের মে দিবসে আমরা দেখছি।

সমকাল: এমন বাস্তবতায় শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো কী ভাগ্য হতে পারে?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: যে আন্দোলনের ফল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং শ্রম সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, তার মূল কথা ছিল বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বিদ্যমান রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার শ্রমজীবী মানুষ। এ বৈষম্য হ্রাসের দায় আছে বর্তমান সরকারের। তাই তারা আন্তরিকভাবেই চেয়েছে যে কমিশন ভালো কিছু সুপারিশ করুক। 

সমকাল: আপনি বলছেন, শ্রম কমিশনের সুপারিশগুলো বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: সুপারিশগুলো তৈরি করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, ১৯৭১ সালের  মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান– এই তিনটির নির্যাস হলো, একটি মর্যাদাকর বাংলাদেশ চাই, বৈষম্যহীন সমাজ চাই এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চাই। আর এগুলোই মে দিবসের চেতনা। আপনি দেখবেন, মে দিবস সৃষ্টির পর যেসব আন্তর্জাতিক কনভেনশন বা সনদ হয়েছে– জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, আইএলওর প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি– সবক’টিতেই ওই আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। তাই ওই তিনটি বিষয়কে আমরা সুপারিশের ভিত্তি ধরেছি। সেটা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষ পরিষ্কার দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের– যারা মোট শ্রমিকের ১০-১৫ শতাংশ– মোটামুটি আইনি সুরক্ষা আছে, তারা ভোগ করতে পারুক না-পারুক। বাকি ৮৫-৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, তাদের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই, শ্রমিক হিসেবেই স্বীকৃত না তারা। এই বৈষম্য আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। 

আরেকটি বড় বিষয় হলো, আয়বৈষম্য। কিছুদিন আগে সমকালেই গত সাত মাসে কোটিপতি বাড়ার খবর দেখেছি। আবার বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলমান অর্থবছরে নতুন ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। এগুলোর উত্তর হলো, একটি মর্যাদাকর মজুরির নিশ্চয়তা। এ জন্যই আমরা জাতীয় ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ করেছি, যা হতে হবে মর্যাদাকর জীবনের নিশ্চয়তাদানকারী, যেনতেন হলে চলবে না।

সমকাল: প্রাতিষ্ঠানিক খাতের মজুরিই তো পুরো কার্যকর হয় না। সেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কীভাবে কার্যকর করা যাবে?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: জাতীয় ন্যূনতম মজুরির দাবি আমাদের শ্রমিক আন্দোলনে অনেক পুরোনো। আমরা মনে করি, সস্তা শ্রম আমাদের রপ্তানি পণ্যকে প্রতিযোগিতাসক্ষম করছে– এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাকে এত টাকা মজুরি দিলেই চলবে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আর কিছু করতে হবে না। এ মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ফলে মজুরির বিষয় শুধু শ্রমিকের নয়, সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সমকাল: অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে তো সরকার এখনও আয়করের আওতায়ই আনতে পারেনি, সেখানে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করা যাবে?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: বিষয়টি জটিল, সন্দেহ নেই। কারণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কিন্তু শুধু অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবেও যে শ্রমিক যেমন– গাড়িচালক, গৃহকর্মী খাটানো হয়, তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যে বিশালসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ হয়, তারাও পড়বে এর আওতায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যদি একটি বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চাই, তাহলে প্রথমেই সবার জন্য একটি মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে মর্যাদাকর মজুরি অপরিহার্য।

সমকাল: আপনারা শ্রমঘন শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু শিল্পে অটোমেশন অনিবার্য। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কীভাবে করা হবে?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: আমরা যদি মে দিবসের চেতনা অনুসারে ৮ ঘণ্টা কাজের বিধান মেনে চলি, একজনকে অতিরিক্ত খাটিয়ে মুনাফা করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসি, তাহলে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফার পাশাপাশি শিল্পেরও বিকাশ নিশ্চিত করতে পারি। এখানে অটোমেশন কোনো সমস্য নয়। আমাদের এখানে এক সুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করতে গিয়ে বছরে বহু লোক মারা যায়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে কাজটা হয় যন্ত্রের মাধ্যমে, আপনি চাইলেও শারীরিকভাবে তা করতে পারবেন না; ওদের সিস্টেম এমনভাবেই তৈরি। যে যন্ত্র মানুষের কাজ করবে সেই যন্ত্র তৈরির জন্যই তো মানুষ লাগবে। আমাদের বিশাল কৃষি খাত পড়ে আছে, কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্ভাবনা বিশাল। উদ্যোক্তা, দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটালে আমি মনে করি, আমরা বিশ্বে অন্যতম শিল্পশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারি।

সমকাল: আপনারা ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা সহজ করার সুপারিশ করেছেন, যেখানে মালিক তো বটেই, নাগরিক সমাজেও ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে একপ্রকার ভীতি আছে। অনেকে মনে করেন, শিল্পের বিকাশে তা অন্তরায়। আপনাদের অবস্থান একটু ব্যাখ্যা করবেন?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: এ ভয় ট্রেড ইউনিয়নের নামে কিছু ব্যক্তির নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে জন্ম নিয়েছে, সত্যিকার ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা থেকে নয়। আমরা যে মর্যাদাকর মজুরির কথা বলি, মজুরি বৈষম্য অবসানের কথা বলি, তা নিশ্চিত হওয়ার অন্যতম শর্ত শ্রমিক ব্যক্তিগতভাবে বা যৌথভাবে তাঁর দাবি জানানোর সুযোগ পান কিনা। একটি শিল্প ইউনিটে উদ্যোক্তার মতো শ্রমিকও অপরিহার্য। কিন্তু এখানে পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে। এ দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রক্রিয়া হিসেবেই ট্রেড ইউনিয়নের ধারণা এসেছে। আজকে শিল্পে যে বিশৃঙ্খলা আমরা দেখি, তার প্রধান কারণ ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ সংকুচিত হওয়া। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশাসনের সঙ্গে হৃদ্যতা ছাড়া আজকে ট্রেড ইউনিয়ন করা খুব কঠিন। এর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা পূরণ করা সুস্থ ট্রেড ইউনিয়নপন্থি কারও পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন– একটি কারখানায় ৫০ হাজার শ্রমিক থাকলে তার ১০ শতাংশের সমর্থন যদি একটি সংগঠনের নিবন্ধন পেতে লাগে, তাহলে ৫ হাজার শ্রমিক কে জোগাড় করতে পারবে? ট্রেড ইউনিয়ন গড়া সহজ হলে সৎ, দক্ষ ও আন্তরিক মানুষ শ্রমিক আন্দোলনে আসবেন। ফলে একটি সুস্থ ধারার ট্রেড ইউনিয়ন অনুশীলন সম্ভব হবে। 

সমকাল: শেষ কথা হিসেবে কিছু বলবেন?

সুলতান উদ্দিন আহম্মদ: আমরা সুপারিশ করতে গিয়ে কোনোভাবেই শ্রমিককে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি বা শিল্পনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখিনি। শ্রমিকের কল্যাণকে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখিনি। উদ্যোক্তাদের সমস্যা আমরা জানি। সবাইকে যুক্ত করে একটি সমন্বিত নীতি ও কৌশল প্রণয়নের পক্ষে আমরা কথা বলেছি। মালিক ও শ্রমিকের সমস্যাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে আমরা শিল্পের সমস্যা সমাধান করতে পারব না। দেশও এগোবে না। এটিই আমাদের মূল বক্তব্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ