ভোলা জেনারেল হাসপাতাল: হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে চিকিৎসক ও নার্সদের কর্মবিরতি
Published: 13th, April 2025 GMT
চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আজ রোববার সকালে পূর্বঘোষণা ছাড়াই তাঁরা এই কর্মসূচি শুরু করেন।
এর ফলে হাসপাতালের ভর্তি রোগী ও বহির্বিভাগে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে পুলিশের প্রহরায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারী চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাত আটটায় ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুজিবুল হকের স্ত্রী আলেফা খাতুন (৮৫) বাধ্যক্যের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯টায় তিনি মারা যান। তখন তাঁর স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসককে মারতে যান। হাসপাতালের কর্মচারীরা বিপদের আশঙ্কা দেখে চিকিৎসককে পেছনের দরজা দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। আজ সকালেও ওই রোগীর স্বজনেরা আবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের খোঁজ করেন। এরপরই চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
এ ছাড়া গত শুক্রবার বেলা সোয়া একটার দিকে ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মাকসুদুর রহমান (৪২) বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এ সময় চিকিৎসক জুমার নামাজ পড়তে যান। পরে চিকিৎসক আসার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। এতে রোগীর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎসক নাঈমুল হাসনাতসহ সাত থেকে আটজন কর্মচারীকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সরিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক শেখ আবু সুফিয়ান (রুস্তম) গতকাল দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। তবে মীমাংসিত অবস্থায় বৈঠক শেষ হয়।
চিকিৎসক শেখ আবু সুফিয়ান বলেন, হুমকির হামলার ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ভোলা সদর হাসপাতালে ৬০ জন চিকিৎসকের মধ্যে পদায়ন আছেন মাত্র ২০ জন। ৯৬ জন স্টাফ নার্সের মধ্যে আছে ৩০ জন। এই বিশাল শূন্যতা নিয়ে হাসপাতাল চলছে। এর মধ্যে রোগীর পরিবার ও রোগীরা চিকিৎসকদের সহযোগিতা না করে হামলা, মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
শেখ আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ‘চিকিৎসকেরা কোনো ধর্মঘটের ডাক দেননি। বিনা নোটিশে আমাকে ঘেরাও করে রেখেছেন। তাঁদের নিরাপত্তা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন না। আমাকেও দায়িত্ব পালন করতে দেবেন না। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে পুলিশি পাহারায় জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাহাদাৎ মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক ও র স বজন র চ ক ৎসক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে চিকিৎসকের লাথি মারার ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে কমিটি
হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁদের পাশে আরও কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। দুজনের বাগ্বিতণ্ডায় এক পর্যায়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এ সময় ওই চিকিৎসককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আরেকজন। তখন চিকিৎসকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তি কিছু একটা বলেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে লাথি দিয়ে বসেন ওই চিকিৎসক।
এমন একটি ভিডিও গতকাল রোববার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে জুবায়ের আহমদ (২২) নামের এক রোগীকে নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জের কলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের শুক্রবার থেকে পেটের নিচে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল দুপুরে জুবায়েরের পাশে তাঁর বন্ধু মিজান আহমদ (২২) ছিলেন। মিজানের সঙ্গেই তন্ময় দেবনাথ নামের ওই চিকিৎসকের বাগ্বিতণ্ডা এবং লাথি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তন্ময় দেবনাথ নামের ওই চিকিৎসক স্নাতকোত্তর ‘ফেজ-বি’–এর আবাসিক শিক্ষার্থী। রোগীর স্বজনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে কোনো কথার জেরে মেজাজ হারিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। রোববারের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজান আহমদ ওই চিকিৎসককে ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। পরে মিজানকে ডেকে নিয়ে ব্যবহার ঠিক করার কথা বলেছেন ওই চিকিৎসক। একপর্যায়ে চিকিৎসকের সঙ্গে মিজানের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এতে ওই চিকিৎসক লাথি দিয়েছেন।
জুবায়ের জানান, তিনি বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। তাঁর বন্ধু মিজান আহমদ তাঁদের পার্শ্ববর্তী আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা। মিজান মিস্ত্রির কাজ করেন। ওই ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিষয়টি জানার জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। জুবায়ের এখন অনেকটা সুস্থ আছেন চিকিৎসকেরা তাঁকে আজ–কালকের মধ্যেই ছাড়পত্র দিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই চিকিৎসককে আপাতত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।