চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আজ রোববার সকালে পূর্বঘোষণা ছাড়াই তাঁরা এই কর্মসূচি শুরু করেন।

এর ফলে হাসপাতালের ভর্তি রোগী ও বহির্বিভাগে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে পুলিশের প্রহরায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারী চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাত আটটায় ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুজিবুল হকের স্ত্রী আলেফা খাতুন (৮৫) বাধ্যক্যের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯টায় তিনি মারা যান। তখন তাঁর স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসককে মারতে যান। হাসপাতালের কর্মচারীরা বিপদের আশঙ্কা দেখে চিকিৎসককে পেছনের দরজা দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। আজ সকালেও ওই রোগীর স্বজনেরা আবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের খোঁজ করেন। এরপরই চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।

এ ছাড়া গত শুক্রবার বেলা সোয়া একটার দিকে ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মাকসুদুর রহমান (৪২) বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এ সময় চিকিৎসক জুমার নামাজ পড়তে যান। পরে চিকিৎসক আসার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। এতে রোগীর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎসক নাঈমুল হাসনাতসহ সাত থেকে আটজন কর্মচারীকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সরিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক শেখ আবু সুফিয়ান (রুস্তম) গতকাল দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। তবে মীমাংসিত অবস্থায় বৈঠক শেষ হয়।

চিকিৎসক শেখ আবু সুফিয়ান বলেন, হুমকির হামলার ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ভোলা সদর হাসপাতালে ৬০ জন চিকিৎসকের মধ্যে পদায়ন আছেন মাত্র ২০ জন। ৯৬ জন স্টাফ নার্সের মধ্যে আছে ৩০ জন। এই বিশাল শূন্যতা নিয়ে হাসপাতাল চলছে। এর মধ্যে রোগীর পরিবার ও রোগীরা চিকিৎসকদের সহযোগিতা না করে হামলা, মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।

শেখ আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ‘চিকিৎসকেরা কোনো ধর্মঘটের ডাক দেননি। বিনা নোটিশে আমাকে ঘেরাও করে রেখেছেন। তাঁদের নিরাপত্তা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন না। আমাকেও দায়িত্ব পালন করতে দেবেন না। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে পুলিশি পাহারায় জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাহাদাৎ মো.

হাচনাইন পারভেজ বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক ও র স বজন র চ ক ৎসক র

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসককে মারধর করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা

দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমানকে মারধর ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মামুনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত অবস্থায় মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমানের উপর হামলা চালান মামুনসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। 

মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘‘হাসপাতালে ফারুক ও তার স্ত্রী ১২ থেকে ১৩ দিন ধরে ভর্তি আছেন। তাদের সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখন তারা সুস্থ। তাদের আজকে রিলিজ দিতে চেয়েছি কিন্তু তারা রিলিজ নিতে চান না। এ বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে মামুনসহ ১০ থেকে ১২ জন এসে আমার উপর আক্রমণ করেন। মামুন আমার মুখে কিল-ঘুষি মারেন এবং সবাই আমার গলা চেপে ধরে বাহিরে নিয়ে যান। আমার মোবাইল ফোনও তারা কেড়ে নেন।’’ 

আরো পড়ুন:

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

সাভারে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন, দগ্ধ দম্পতি হাসপাতালে

হাকিমপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মামুন বলেন, ‘‘ডা. মশিউর রহমান আমাকে ধাক্কা দেন। তখন এ ঘটনা ঘটে। তবে আমি তাকে মারিনি। আমার সঙ্গের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’ মশিউর রহমানের মোবাইল ফোন তখনি ফেরত দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

হাকিমপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘‘হাসপাতালের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অভিযুক্ত মামুনকে চিকিৎসকদের সামনে মারধর করেছি। বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে।’’  

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’’  

হাকিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘হাসপাতালের ঘটনা অবগত হয়েছি। হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’

দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আসিফ ফেরদৌস বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির নেতারা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।’’
 

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত
  • চিকিৎসককে মারধর করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা