চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’ ওরফে বুড়ির নাতিকে জোড়া খুনের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইব্রাহীম খলিলের আদালত শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া আসামি সাজ্জাদকে নগর ও জেলার তিন থানার আরও আটটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালত।

কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আজ সকালে আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার হাটহাজারী থানার দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নাজমুন নাহারের আদালতে। একই দিনে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে নগরীর চান্দগাঁও থানার পাঁচটি মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালত এবং বায়েজিদ থানার একটি মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পঞ্চম আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, বাকলিয়া থানার জোড়া খুনের মামলায় পুলিশ ছোট সাজ্জাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চান্দগাঁও এবং বায়েজিদ থানার ছয়টি মামলায় আদালত সাজ্জাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১৫ মার্চ রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে। এর পরদিন নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে ছোট সাজ্জাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

গত ৫ এপ্রিল তাহসিন হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চান্দগাও অদুরপাড়ায় গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া খুনের মামলার আসামি সাজ্জাদ।

সন্ত্রাসী সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাটহাজারীর শিকারপুরের মো.

জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে। গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২৯ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেটকারে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. আব্দুল্লাহ ও মো. মানিক নামে দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় ১ এপ্রিল বাকলিয়া থানায় নিহত মোহাম্মদ মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

কে এই ছোট সাজ্জাদ   

চট্টগ্রামের একসময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদ। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এ আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হয়। তবে ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। তবে নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় এখনও কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই চাঁদা দাবি করে ফোন আসে সাজ্জাদের। টাকা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে চালানো হয় হামলা। দুই দশকের বেশি এভাবেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সাজ্জাদ। এর মধ্যে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন ভারতে মারা গেছে। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট ঢাকাইয়া আকবর। আর সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা পক্ষ ত্যাগ করে বাহিনী গড়েছে। এর পর ছোট সাজ্জাদকে শিষ্য হিসেবে গড়ে তোলে বড় সাজ্জাদ।

বর্তমানে নগরের অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার আধিপত্য নিয়ে লড়াই চলছে ছোট সাজ্জাদ ও বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস ও মাসুদ কায়ছার নামে দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালায় সাজ্জাদ। গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে প্রকাশ্যে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ ফের আলোচনায় আসে। এর পর গত ৫ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হন। গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে গ্রেপ্তার চেষ্টা চালানোয় বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে প্রকাশ্য পেটানোর হুমকিও দেন। এর পর ৩০ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক য় ন ওরফ নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়োগবিধির প্রজ্ঞাপন : প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতিতে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা, ২০২৫–এ পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন সংশোধন অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা ও বয়সসীমায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শক্রমে এই সংশোধনী জারি করা হয়েছে গতকাল রোববার (২ নভেম্বর)।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে হবে। পদোন্নতির জন্য প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত ১২ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পন্ন করতে হবে।

আরও পড়ুনইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত ৪ ঘণ্টা আগে

সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক—উভয় পদেই প্রার্থীদের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া তফসিল–২ অনুযায়ী গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনকুয়েতে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বেতন ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা০২ নভেম্বর ২০২৫

নতুন বিধিমালার মাধ্যমে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রার্থীরাও সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংশোধিত বিধিমালার ফলে শিক্ষক নিয়োগের মান আরও উন্নত হবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষ প্রার্থীরা সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নতুন ধারা আনতে চায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ