Samakal:
2025-09-18@03:02:45 GMT

সময় এখন সত্য অনুধাবনের

Published: 13th, April 2025 GMT

সময় এখন সত্য অনুধাবনের

বাংলা নববর্ষ বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব। দেশের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে একই ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলা নববর্ষ। এই উৎসব নিয়ে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, বাংলা নববর্ষ একটা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি। অনুরূপভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকরা বলেছিল– বাংলা যথেষ্ট মুসলমানি ভাষা নয়। ফলে বাংলা ভাষাকে মুসলিম বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কবি নজরুল ইসলামের রণসংগীতের ‘নব নবীনের গাহিয়া গান, সজীব করিব মহা শ্মশান’ অংশের শ্মশানকে গোরস্তান পড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনতা এমন ধোঁকাবাজি কথায় কান দেয়নি। পূর্ববঙ্গের মানুষ প্রশ্ন করেছে– ভাষার কি কোনো ধর্ম হয়? কিংবা কোনো একটা ভাষায় পূজা অর্চনা করলে সে ভাষা কি অপবিত্র হয়? আরবের পৌত্তলিকদের ভাষা ছিল আরবি। তাতে যদি আরবি মুসলমানদের ভাষা হতে পারে, বাংলা কেন বাঙালি মুসলমানের ভাষা হবে না?


ইরানে নববর্ষের প্রথম দিন হলো নওরোজ। ইরান, তুরস্ক, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় নওরোজ পালিত হয়। বিগত ৩০০০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া, ককেশাস, বরাক সি উপত্যকা ও বলকানে নওরোজ পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর ২১ মার্চ বা তার একদিন আগে-পরে নওরোজ পালিত হয়। প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা তাদের দিনপঞ্জির প্রথম দিনটিতে ভোজ অনুষ্ঠান উদযাপন করত কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে ইতিহাস বলছে, শরৎ ও বসন্তকাল উভয়কালে প্রাচীন ইরানিরা শস্য কাটা এবং বীজ বপনের সূত্রে নওরোজ পালন করত। এভাবেই গড়ে উঠেছিল নববর্ষ পালনের রীতি। ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে মুসলিম বিজয়ের পরও নওরোজ উদযাপন বন্ধ হয়নি। প্রাচীন আব্বাসীয় যুগেও নওরোজকে প্রধান রাজকীয় পার্বণ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামকে উৎসর্গিত নওরোজনামা বা নববর্ষ গ্রন্থ বইটিতে নওরোজ পালনের জ্বলজ্বলে ছবি আঁকা হয়েছে। 


বাংলা দিনপঞ্জিকে হিন্দুয়ানি মনে করার অন্যতম কারণ বাংলা মাসের নামসমূহ। আমরা জানি, ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ১২ বা ১৪ এপ্রিল গৌড়ের নৃপতি শশাঙ্ক প্রথম ‘বঙ্গাব্দ’ শুরু করেন। সংস্কৃত জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রন্থ ‘সূর্য সিদ্ধান্ত’র ওপর ভিত্তি করে এই সাল গণনা শুরু হয়। অনেকে এই মতের সঙ্গে দ্বিমত করে বলেন, আলাউদ্দিন হোসাইন শাহ্ (১৪৯৪-১৫১৯) বাংলা ও আসাম অঞ্চলে প্রচলিত সৌর ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ইসলামী চান্দ্রেয় ক্যালেন্ডার যুক্ত করে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। এই দুই মত নিয়ে মতপার্থক্য আছে। মোগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) খাজনা আদায় সহজতর করার লক্ষ্যে বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। তখন এই ক্যালেন্ডারকে বলা হতো ‘তারিখ-ই-ইলাহি’। ইসলামী চন্দ্র ক্যালেন্ডারের সাথে এখানকার সৌর ক্যালেন্ডারের বড় রকমের পার্থক্য ছিল। যার ফলে স্থানীয় কৃষকদের সাথে খাজনা ও ফসল কাটা নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হত। এই সংকট নিরসনকল্পে আকবরের নির্দেশে তার অর্থমন্ত্রী টোডর মল ক্যালেন্ডার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। পরে আকবরের রাজসভার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতুল্লা সিরাজি ফের ইসলামী চান্দ্রেয় মাসের বদলে সৌর ও চান্দ্র বর্ষের মিলন মুহূর্তে নতুন ক্যালেন্ডারে বর্ষ গণনা শুরু হয়। যার নাম দেওয়া হয় ‘ফসলি সন’। ৯৬৩ হিজরিতে (১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) মোহররম বাংলা ক্যালেন্ডারের বৈশাখের সাথে এক হয়েছিল। তারপর থেকে বৈশাখ বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। ‘তারিখ-ই ইলাহি’ পঞ্জিকায় প্রতিটি মাসের আলাদা আলাদা নাম ছিল। যা আজকের নাম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।


আকবরের পুত্র শাহজাহান সাত দিনে এক সপ্তাহ চালু করেন। রোববার ছিল সপ্তাহের শুরুর দিন। চৈত্রের শেষ দিন নাগাদ মালিকের সব হিসাবনিকাশ পরিশোধ করতে হতো। সেই দিনে আকবর ‘চৈত্রসংক্রান্তির’ প্রচলন করেন। তার পরের দিন পহেলা বৈশাখ চালু করেন। সে বিষয়ে আজ কোনো দ্বিমত নেই। অন্যদিকে ‘সূর্য সিদ্ধান্ত’ পঞ্জিকা থেকে নক্ষত্রগুলোর নাম নেওয়া হয়। এবং বাংলা বারো মাসের নাম ঠিক করা হয়। সেখানে বিশাখা নক্ষত্রের নামে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামে জ্যৈষ্ঠ, উত্তরাষঢ়ার নামে আষাঢ়, শ্রাবণার নামে শ্রাবণ, পূর্বভাদ্রপদের নামে ভাদ্র, আশ্বিনীর নামে আশ্বিন ইত্যাদি। ফলে বাংলা নববর্ষকে হিন্দুয়ানি আখ্যা দেওয়া অজ্ঞতা ভিন্ন কিছু নয়।


১৯৫৮ সালে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন ‘বাংলার মুসলিম, বাংলার হিন্দু আমরা সবাই বাঙালি’ এই চেতনায় ঐক্য গড়ে উঠল। সরকারের অবৈধ ঘোষণাকে প্রতিরোধের জীবন্ত হাতিয়ার হয়ে উঠলেন– বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কাব্যে-দ্রোহে-প্রেমে রবীন্দ্রনাথ মাথার তাজ হয়ে ধরা দিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রথম সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। এরই ধারাবাহিকতায় ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। পরের বছর ঢাকা শহরের রমনার বটমূলে ‘ছায়ানট’ ভোর ৬টায় নববর্ষের অনুষ্ঠানের সূচনা করে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগম সাংবাদিকদের বিস্মিত করে। প্রাদেশিক সরকার নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। 


বাঙালির অফুরন্ত আবেগ পাকিস্তান সরকারকে ক্রুদ্ধ করে তোলে। এবং সমস্ত ক্ষোভ রবীন্দ্রনাথের ওপর গিয়ে পড়ে। রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত বন্ধ করার চক্রান্ত শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বাজেট অধিবেশন বসে। সেখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথের শক্তিশালী উপস্থিতিকে টেনে আনা হয়। সরকারি ও বিরোধী দলের প্রচণ্ড রকম বাগ্‌বিতণ্ডা বাধে। পাকিস্তানিরা বলেন, পহেলা বৈশাখ ও রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের নামে পূর্ব পাকিস্তানে বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে পাকিস্তানে ইসলামী জীবনাদর্শের পরিপন্থি কার্যকলাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।  সরকারি দলের এমন বক্তব্য বাংলাদেশের নেতাদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে। অধিবেশনে পশ্চিম পাকিস্তানের সবুর খান উত্তেজিত হয়ে হাউলিং ইডিয়ট বা বোকার হদ্দ বলে গালি দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর তথ্যমন্ত্রী সাহাব উদ্দিন রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রতিবাদে পূর্ব বাংলা আবার উত্তাল হয়ে ওঠে। 


রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বাঙালির অন্তরে পাকিস্তানের ধর্মীয় বিদ্বেষের পোড়া মাটিতে যে সবুজ ঘাসের জন্ম হলো তা মুক্তিকামী মানুষকে আরও বেশি প্রতিবাদমুখর করল। তথ্যমন্ত্রীর ঘোষণার বিরুদ্ধে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকরা কলম ধরলেন। মওলানা ভাসানী হুংকার ছাড়লেন– ‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্য, সাহিত্য, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস ও সংগীতের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে নতুন গৌরবে অভিষিক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের অবদান সর্বজনীন। ইসলাম সত্য সুন্দরের জন্ম ঘোষণা করেছে। এই সত্য ও সুন্দরের পতাকা তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই যারা ইসলামের নামে রবীন্দ্রনাথের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, তারা আসলে ইসলামের সত্য ও সুন্দরের নীতিতে বিশ্বাসী নন। তাই আমি দেশের মানুষের প্রতি সরকারের এই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ গণ-আন্দোলনের চাপে সেদিন পাকিস্তান সরকার তাদের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয়। 


প্রচলিত আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা আছে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশিষ্ট্য হলো বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের লোকসংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্যের নিদর্শন উপস্থাপিত করা। ইউনেস্কো ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘অমূল্য ভাব সম্পদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উত্তরাধিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই বৈচিত্র্যই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে শোভামণ্ডিত করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা কোনো ধর্মের জন্য নয় বরং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ফুটে ওঠে এক শোভাযাত্রায়।  
বাংলা সংস্কৃতি নষ্ট করে দিয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে। যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে কিছু অসাধু রাজনৈতিক দল ও মতের ব্যক্তিবর্গ। এখন সময় সত্য অনুধাবনের। 

রিয়াজ মাহমুদ: কবি ও প্রাবন্ধিক     

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল নববর ষ রব ন দ র অন ষ ঠ ন নববর ষ র জন ম সরক র ইসল ম প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।

গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’

উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি