হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন তারা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সেখানে অবস্থান করছেন ২০-২৫ শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। 

শিক্ষার্থীদের দাবি ও উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আজ সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রফেসর রাজু আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল রবিবার রাত থেকে প্রশাসনিক ভবনের বাথরুম তালাবদ্ধ করে রেখেছে। যে কারণে তাদের পার্শ্ববর্তী ভবনে গিয়ে বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। খাবার খেতে কিংবা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে গেলে পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে নিরাপত্তা কর্মীরা হেনস্থা করছে। আজ সকালে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দেন। তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

আরো পড়ুন:

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ, প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান

রাবি ছাত্রীর ভিডিও ধারণ, বহিরাগত দুজনকে পুলিশে সোপর্দ

শিক্ষার্থীরা জানান, দুঃখের বিষয়, এবছর বাংলা নববর্ষের দিন বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলার দাবিতে আমাদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাত কাটাতে হলো।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, আজ সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রফেসর রাজু আহমেদ এসে তাদের জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তিনি সভার এজেন্ডা সম্পর্কে কিছু জানাননি বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। 

কুয়েট শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়াসহ তাদের দাবির স্বপক্ষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে খুলনা আলিয়া মাদরাসাসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে সহমত পোষণ করেছেন।

গতকাল রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। বিকালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। হলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা রাত ৮টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাত্রিযাপন করেন।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ