চীনে ১১ তলা থেকে পড়ে গ্যাবানিজ ফুটবলারের মৃত্যু
Published: 16th, April 2025 GMT
২৮ বছর বয়সেই চলে গেলেন গ্যাবন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার অ্যারন বুপেন্দজা। আজ চীনে একটি ভবনের ১১ তলা থেকে পড়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে গ্যাবন ন্যাশনাল ফুটবল ফেডারেশন (ফেগাফুট)। বুপেন্দজা চীনের ফুটবল ক্লাব জেনজিয়াং এফসিতে খেলতেন।
ফেডারেশনের এক্স পোস্টে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলা হয়, ‘বুপেন্দজা আমাদের মধ্যে একজন গ্রেট স্ট্রাইকারের স্মৃতি রেখে গেছেন, যিনি ক্যামেরুনে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে নিজের পদচিহ্ন এঁকেছিলেন।’ ২০২২ সালে আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ আসরে কমরোসের বিপক্ষে গ্যাবনের জয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন বুপেন্দজা।
বুপেন্দজার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু ২০১৫ সালে গ্যাবানিজ ক্লাব মোনানা দিয়ে। ২০১৭ সালে যোগ দেন ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর দল বোর্দোয়। এরপর আরও কয়েকটি ক্লাবে ঘুরে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন চীনের জেনজিয়াং এফসিতে।
গ্যাবনের সংবাদমাধ্যম গ্যাবন টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, ঠিক কীভাবে ১১ তলা উঁচু থেকে নিচে পড়েছেন জানা যায়নি, ‘কোন পরিস্থিতিতে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান।’
বুপেন্দজা ক্লাব ক্যারিয়ারে ২১৮ ম্যাচে করেছেন ৯৬ গোল, যার মধ্যে জেনজিয়াং এফসিতে ৬ ম্যাচেই ৪টি। তবে এমন চমৎকার শুরু থেমে গেল চার মাসেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য বন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ