ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করলেও ভারতে হিন্দুত্ববাদের মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) সাধারণত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন না। বরং তিনি অতীতে বলেছেন, আরএসএসে ভালো লোক আছেন। কিন্তু ১১-১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক খোলাচিঠিতে মমতা সরাসরি আরএসএসের সমালোচনা করেছেন।

‘শান্তির আবেদন’ শীর্ষক ওই খোলাচিঠি গতকাল শনিবার রাতে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসে।

খোলাচিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএসও আছে। আমি আগে আরএসএসের নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা (মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা) ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। এরা “ডিভাইড অ্যান্ড রুল”-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’

আরএসএসকে ভারতে হিন্দুত্ববাদের প্রধান পরিচালক বলা হয়ে থাকে। এই সংগঠনের অধীনে অসংখ্য শাখা, সংগঠন বা অনুসংগঠন আছে। ভারতের জাতীয় স্তরে ক্ষমতাসীন বিজেপি আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরএসএসের সম্পর্ক খারাপ নয়। অতীতে তিনি আরএসএসের কাজকর্মের প্রশংসাই করেছেন। একসময় বিজেপির সরকারকে সমর্থনও দিয়েছিলেন মমতা। সে সময় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি, যাঁর প্রতি মমতা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি সমালোচনা করলেন আরএসএসের। এটা তিনি অতীতে করেননি।

মমতা উল্লেখ করেন, ‘আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রামনবমী দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী উদ্‌যাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। এরপর ওরা ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়।’

বিজেপি ও তার সঙ্গীরা মিথ্যা ও সংকীর্ণতার ওপরে ভিত্তি করে রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করে মমতা খোলাচিঠিতে বলেন, ‘তারা যা বলছে তা অসত্যের ঝুড়ি, অপব্যাখ্যায় ভর্তি। দয়া করে ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা দাঙ্গা বাধাতে চায়। দাঙ্গায় সবার ক্ষতি হয়। আমরা সবাইকে ভালবাসি। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা দাঙ্গার নিন্দা করি, আমরা দাঙ্গার বিরুদ্ধে। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।’

মমতা আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এবং মানুষের প্রাণ ও সম্মান রাখার প্রয়োজনে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশের দুজন অফিসার-ইন-চার্জকে সরানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন, দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয়, দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পেছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।’

আরও পড়ুনমুর্শিদাবাদে ওয়াক্‌ফ আইন ঘিরে সহিংসতায় তিনজন নিহত১২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরএসএস র র জন ত র র জন স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে

ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবারও দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) দেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, স্বয়ং সরদার বল্লভভাই প্যাটেল সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

খাড়গে বলেছেন, বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাই ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে হবে।

আজ শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি আরএসএসের আদর্শকে ‘বিষের’ সঙ্গে তুলনা করেন।

খাড়গে বলেন, সরদার প্যাটেল বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালে আরএসএসের জন্য কাজ করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস এবং জামাত-ই-ইসলামীর কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। মোদি সরকার গত বছরের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমরা দাবি করছি, এই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করা হোক।’

বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী। ভারতে এবার বিজেপি সরকার দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।

খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল, এমন কথা সরদার প্যাটেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এই কট্টর হিন্দুবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেন।

মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেন, সরদার প্যাটেল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্বাস করতেন, সরদার প্যাটেলের অবদান ছিল অপরিমেয়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আরএসএস সম্পর্কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আরএসএস গান্ধীজির মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরপর সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

খাড়গে বলেন, প্যাটেলের কাছে পৌঁছানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের কারণে দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটাই গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।

বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই দাবির সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কংগ্রেস এত দিন ধরে প্যাটেলের অবদানকে ‘উপেক্ষা’ করে এখন আরএসএসকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করছে।

খাড়গের নিজ রাজ্য কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্য সরকার বিবাদে জড়িয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে