স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতন আর অভাবের তাড়নায় মেয়েশিশু বিক্রি করে দিয়েছেন এক মা। সাতক্ষীরার আশাশুনির একটি গ্রামে তিন মাসের বেশি সময় আগে ঘটলেও তা জানাজানি হয়েছে গতকাল রোববার। শিশুটিকে কিনে নেওয়া দম্পতি তার নাম রেখেছেন রাফিয়া জান্নাতুল। নতুন মা-বাবাই নন, শিশুটিকে নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মেতে আছেন।

শিশুটির মা-বাবার নাম আশামনি খাতুন ও শামিম হোসেন। সাড়ে চার বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। শামিম পেশায় দিনমজুর। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাঁদের ঘরে আসে একটি কন্যাসন্তান।

শিশুটির নানি মনোয়ার খাতুন জানান, দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকে কারণে-অকারণে আশামনিকে মারধর করতেন শামিম। খেতে দিতেন না। এ অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাঁদের আরও একটি কন্যাসন্তান হয়। হাসপাতাল থেকে ১৫ জানুয়ারি ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আশামনিকে আর ভরণপোষণ দিতে পারবেন না বলে জানান শামিম। তাঁকে মৌখিকভাবে তালাক দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আশামনি তাঁর মেয়েশিশুটিকে একই উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের চায়ের দোকানি রবিউল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী কাজল খাতুনের কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

কাজল খাতুন জানান, ২০১৩ সালের ৬ জুন তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১১ বছর পার হয়ে গেলেও তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি। এ জন্য তাঁদের একটি সন্তানের চাহিদা ছিল। ২৮ জানুয়ারি কাজল খাতুনকে হামকুড়া গ্রাম থেকে তাঁর মা মাজেদা খাতুন মুঠোফোনে জানান, তাঁদের বাড়ির সামনে একজন মা তাঁর একটি শিশুকে নিয়ে কান্নাকাটি করছেন। দুধ কেনার সামর্থ্য নেই ওই মায়ের, তিনি সন্তান বিক্রি করতে চান। এই কথা শুনে স্বামী রবিউল ইসলামকে নিয়ে ওই দিনই বাবার বাড়িতে গিয়ে তাঁরা নবজাতকের মা আশামনির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিশুটিকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে রাজি হন। পরে শিশুটির বাবা শামিম হোসেনের সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা বলেন তাঁরা। সন্তান বিক্রিতে তিনিও কোনো আপত্তি জানাননি। পরের দিন ২৯ জানুয়ারি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উভয় পক্ষের স্বাক্ষরসহ শিশুটিকে ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন বলে জানান কাজল খাতুন।

নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপরে লেখা রয়েছে ‘দানপত্র’। নিচে আশামনির বয়ানে লেখা রয়েছে, ‘বাচ্চার প্রতি আমার কোনো দাবি নেই। আমার বাচ্চা আমি স্বেচ্ছায় আপনাদের দিয়া দিলাম। আমার বাচ্চার গার্জেন শুধু আমি। আমার স্বামী বাচ্চার কোনো খোঁজখবর নেয় না। আমার স্বামী মেয়ে হবে, জানতে পেরে ছয় মাসে আমার বাচ্চা নষ্ট করতে চেয়েছিল। জানতে পেরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আমি বাচ্চা রেখে দিয়েছি। তাই আমি আমার এক বোনকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার বাচ্চা দিয়ে দিলাম। আমি খুব অসুস্থ, তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য এ টাকা নিলাম। আমার দেখার ইচ্ছা হলে বাচ্চা দেখতে যেতে পারব।’

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাদাকাটি গ্রামে আশামনির মা মনোয়ারা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আশামনি মায়ের সঙ্গে প্রথম মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তিনি সামনে আসেননি। প্রতিবেশীরা বলেছেন তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। আশামনির বাবার সঙ্গে মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়েছে অনেক আগে। পরিবারটিতে হাল ধরার কেউ নেই।

শামিম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আশামনির মা মনোয়ারা জানান, তাঁর মেয়ে দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার পর শামিম কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না। মৌখিকভাবে তালাক দিয়েছেন। মনোয়ারা খাতুনের দাবি, শামিম আশামনিকে নিয়ে পাঁচটি বিয়ে করছেন। প্রত্যেককে তালাক দিয়েছেন।

শিশুটিকে কিনে নেওয়া তেঁতুলিয়া গ্রামের দম্পতির বাড়িতে গিয়ে রবিউল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। কাজল খাতুনের মামিশাশুড়ি বিলকিস ও আসমা খাতুন জানান, রাফিয়া জান্নাতুলকে নিয়ে রবিউল ও কাজল দম্পতি খুবই ভালো আছেন। মেয়ের জন্য প্রতিদিন আড়াই শ টাকার দুধ লাগছে। এ জন্য কাজল সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। আর প্রতিবেশীরা মিলে প্রতিদিন দুধ কিনে দিচ্ছেন। চায়ের দোকান ভালো চলছে না বলে নতুন মেয়ের জন্য রবিউল নওগাঁয় শ্রমিকের কাজ করতে গেছেন।

বিষয়টি নজরে আনা হলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামছুল আরেফিন জানান, ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসের। তিনি ১৫ এপ্রিল এ থানায় যোগ দিয়েছেন। শোনার পর ঘটনাস্থলে একজন উপপরিদর্শককে আজ সোমবার দুপুরে পাঠিয়েছেন। কেউ সন্তান বিক্রি করতে পারে না, দত্তক দিতে পারে। তবে কারও যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রে সেখানে কিছু করার থাকে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০ হ জ র ট ক আম র ব চ চ মন য় র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’

এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স