চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ, চার বছর পর অভিযান
Published: 22nd, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের প্রাণকেন্দ্র জামালখানের আসকার দীঘিরপাড় এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ইতোমধ্যে ছয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণযজ্ঞ শুরুর চার বছর পর হুঁশ ফিরেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। সোমবার ভবনটি উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে তারা। অবশ্য সিডিএ কর্মকর্তাদের দাবি, এতদিন আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় অভিযান চালাতে পারেননি তারা। যদিও আদালত নিষেধাজ্ঞা দেন গত বছরের ৩০ এপ্রিল।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর আসকার দীঘির পূর্বপাড়ে শহীদ সাইফুদ্দিন সড়কের পাশের পাহাড়টি গ্রিনলেজ ব্যাংক পাহাড় নামে পরিচিত। ১২৭ ফুট উঁচু পাহাড়টিতে নির্মাণাধীন ভবনের জমির ক্রয়সূত্রে মালিক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী, খোকন ধর, হিমেল দাশ, সুভাষ নাথ, রনজিত কুমার দে, রূপক সেনগুপ্তসহ ৯২ জন। ২০১৯ সালে জমিটি কেনেন তারা। ২০২২ সালে আবাসন কোম্পানি ‘স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর নামে সিডিএর ইমারত নির্মাণ কমিটির কাছ থেকে তিনটি বেজমেন্ট ও ১৪ তলাসহ মোট ১৭ তলা ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, ভবন নির্মাণের আগে টিনের উঁচু ঘেরা দিয়ে পাহাড়টিকে দৃষ্টির আড়ালে নেওয়া হয়। এর পর সেটি ধীরে ধীরে কেটে ফেলা হয়। সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, সিডিএ ৩০ কাঠার জমিতে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ জায়গা খালি রাখার শর্ত দিয়ে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল। পাশাপাশি পাহাড়ের অবয়ব ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণের শর্ত ছিল অনুমোদনে। সিডিএর এসব শর্ত না মেনে টিনের বেষ্টনী দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করেন মালিকরা। পাশাপাশি খালি জায়গা না রেখে পুরো জায়গায় ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সিডিএর অথরাইজড কর্মকর্তা তানজিব হোসেন বলেন, পাহাড় কাটার পাশাপাশি শর্ত না মেনে ভবন নির্মাণ করায় ২০২৩ সালে তাদের নোটিশ দেয় সিডিএ। পরে সিডিএর আদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দন হাইকোর্ট। এই সুযোগে গোষ্ঠীটি ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সিডিএ চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে। আপিল বিভাগ গত রোববার শুনানি শেষে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এর পর আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।
সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়টি কয়েক ধাপে কাটা হয়েছে। সড়কের পাশে পাহাড়ের সামনের অংশে তিন তলা বেজমেন্টসহ ছয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। আর পাহাড়ের ওপরের অংশে ভবনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। সিডিএর অভিযানে বুলডোজার দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে টিনের প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়। আর ভবনের পশ্চিম পাশের পিলারের একাংশ ভাঙা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিডিএর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান এ জি এম সেলিম, উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনছারী ও অথরাইজড কর্মকর্তা তানজিব হোসেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ন ভবন ন র ম ণ কর মকর ত স ড এর ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।