খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির চেষ্টা, কৃষক দল নেতা বহিষ্কার
Published: 22nd, April 2025 GMT
পাবনার চাটমোহরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসীর হাতে আটক হন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা সেলিম রেজা। ইউএনও যাওয়ার আগেই তিনি কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ভাঙ্গুড়া উপজেলা শাখার সভাপতি আখিরুজ্জামান মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের তথ্য জানা যায়।
অভিযুক্ত সেলিম রেজা ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক ছিলেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপি নেতার বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলের প্রতিবাদে বিএনপির সমাবেশ
এলাকাবাসী জানান, অষ্টমনিষা ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ৩০ বস্তা চাল ব্যাটারিচালিত ভ্যানে সোমবার দুপুরে চাটমোহরে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন সেলিম রেজা। বিষয়টি জানতে পেরে পৌর শহরের জারদিস মোড় এলাকায় চালসহ সেলিম রেজাকে আটক করেন স্থানীয়রা।
চাল কোথাকার এবং কোথায় যাবে স্থানীয়দের এমন প্রশ্নে একেক সময় একেক কথা বলেন ওই নেতা। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরীকে জানান। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান সেলিম রেজা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দাম নির্ধারণ করে নিলামের মাধ্যমে জব্দকৃত চাল ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
ঘটনা জানাজানি হলে উপজেলা জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে পাবনা জেলা কৃষক দলের সভাপতি আবুল হাসেম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফিপ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন কৃষক দল নেতা সেলিম রেজাকে বহিষ্কার করা হয়।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আখিরুজ্জামান মাসুম বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়কের পদ থেকে সেলিম রেজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চাল সংক্রান্ত ঘটনায় দলের অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সেলিম রেজার মোবাইলে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চাটমোহর উপজেলার ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। চালগুলো ডিলার কর্তৃক বিক্রি করা হয়নি। এই চাল পার্শ্ববর্তী উপজেলার একটি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ছিল। যিনি চাল নিয়ে আসেন তাকে পাওয়া যায়নি। নিলামের মাধ্যমে খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।