টিসিবির কার্যক্রমে বাণিজ্যিক অংশীদারত্বে উৎসাহ বাণিজ্য উপদেষ্টার
Published: 23rd, April 2025 GMT
দেশের সুবিধাবঞ্চিত কোটি পরিবারকে সহায়তা করতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর আর্মি গলফ ক্লাবে টিসিবির আয়োজনে ‘ট্রেড উইথ টিসিবি’ শীর্ষক বিজনেস টকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “পাঁচ আগস্ট বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়েও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের মতো টিসিবিও দুর্বৃত্তায়নের বাইরে ছিল না। বিভিন্ন অঞ্চলে পরিদর্শনে গিয়ে এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অতীতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। জুট মিলের মালিক, পাঁচতলা বাড়ির মালিক, এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাসায় একাধিক টিসিবি কার্ড পেয়েছি, যা প্রকৃত উপকারভোগীদের অধিকার হরণ করেছে।”
টিসিবিকে কার্যকর ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “এক কোটি পরিবারের জন্য সরকার ১২-১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য কিনে থাকে। আমরা চাই এ বিপুল অর্থ যেন প্রকৃত উপকারভোগীদের কাজে লাগে। এজন্য সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন ও আরো অধিক পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা অর্জনে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরো বলেন, “গত রমজানে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাজার ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। আমরা একটি দুর্বৃত্তায়িত ব্যবস্থার উত্তরণে কাজ করছি। ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টিসিবি আরো কার্যকরভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড.
কি-নোট উপস্থাপন করেন টিসিবির পরিচালক (কমার্শিয়াল) এস এম শাহীন পারভেজ। প্রকিউরমেন্ট প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট ও ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট) মো. আবেদ আলী এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পরিচালক আল-আমীন হাওলাদার।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।