বিশ্ব বই দিবস আজ । দিনটি ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ নামেও পরিচিত। প্রতি বছর এ দিবসটি সারাবিশ্বের বইপ্রেমীরা বিশেষভাবে পালন করেন। বই পড়ার আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতার উদযাপন ও প্রচারণা চালানো হয় দিনটি ঘিরে। বইয়ের অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন অনেক পাঠক। জগৎ ও জীবনের রহস্য উন্মোচিত করে বই। চিত্তকে প্রশমিত করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমও বই। বইপ্রেমিকদের কাছে বই পরম ধন। বই বর্তমান ও অতীতের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। সাগরের তলদেশ, পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়া কিছুই বইয়ের কাছে অগম্য নয়। জীবনের সুন্দর আর রঙিন সবকিছু ধরা দেয় বইয়ের মধ্যে। কিন্তু সেই বই নিয়ে আছে হাজারো গল্প, কল্প-কাহিনি।
বই দিবসের সূচনা
বই দিবস হিসেবে ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। সাহিত্য জগতের তিন কিংবদন্তি উইলিয়াম শেকসপিয়ার, মিগুয়েল ডি সারভান্তেস ও ইনকা গার্সিলাসো দে ভেগার প্রয়াণ দিবস ২৩ এপ্রিল। ১৯৯৫ সালে প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে এ দিনটিকে বই দিবস হিসেবে উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এই তিন প্রয়াত সাহিত্যিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এদিন বেছে নেওয়ার মূল কারণ।
বইয়ের ইতিহাস বিস্ময়কর
কেউ কেউ বলেন বইয়ের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বড়জোর আছে একটা অতীত। এ কথা যতই বলা হচ্ছে বই ততই শিকড় গেড়ে, ডালপালা ছেড়ে বিকশিত হয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে বইয়ের রূপ একদিনে হয়নি। বইয়ের আজকের রঙিন ঝলমলে দৃষ্টিনন্দন বই হওয়ার পেছনে রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। বইয়ের ইতিহাস এমন সমৃদ্ধ আর বিস্তৃত যে এর সামান্য কিছু বিষয়কে ছোঁয়া যাবে মাত্র। বইয়ের ইতিহাস বিস্ময়কর; যা আমাদের অনেকেরই অজানা। কালের গর্ভে যা হারিয়ে গেছে, তা আমাদের চিন্তাকে হার মানাবে।
প্রথম বইয়ের সন্ধান
১৯৮৪ সালে সিরিয়ার তেলবার্ক নামক জায়গায় দুটি মাটির ফলক পাওয়া যায়। গবেষকদের মতামত ওই ছোট দুটি ফলকই পৃথিবীর প্রথম বইয়ের দুটি পৃষ্ঠা। এটা দেখে মনে হয় এটা হিসাবের খাতার দুটি পাতা। একটিতে দশটি ছাগলের ইঙ্গিত, অন্যটিতে ১০টি ভেড়ার। এ লিপির অধিকারী ছিলেন সুমেরিয়ানরা। খ্রিষ্টের জন্মের চার হাজার বছর আগে। এটা বাগদাদ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। পরে এ লিপি আরও উন্নত হয়; হয় আরও অর্থবহ। চিত্রাক্ষরের নান্দনিক সংস্করণ কিউনিফরম। এর জন্ম মেসোপটেমিয়ায়। হিসাব-নিকাশের গণ্ডি পেরিয়ে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, মহাকাব্য রচিত হতে থাকে এ লিপিতে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতকে আসিরিয়ায় প্রকাশ্য স্থানে জনসাধারণকে তথ্য অবহিত করার জন্য ৬৭ বর্গফুট মাপের মৃত্তিকা লিপি স্থাপন করা হয়। অশোকের শিলালিপি, তাম্র শাসন প্রভৃতির শুরু খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতক থেকে।
লিপির ইতিহাসও সুদীর্ঘ
বিশ্বময় কত না লিপি ছড়িয়ে আছে। অনেক লিপির পাঠোদ্ধার করা যায়নি এখনও। যেমন সুমেরিয়ান, মিনোয়াম, হরপ্পা লিপি ইত্যাদি। বইয়ের আদি পুরুষ তাহলে মাটির ফলক। মাটির ফলক, প্যাপিরাস, পার্সমেন্ট, অশোকের শিলালিপি, তাম্র শাসন প্রভৃতি আমাদের লেখালেখির ইতিহাসের শুরুর দিকে প্রধান ভূমিকা পালন করে। পার্সমেন্টে প্রথম বার্তা প্রেরণ করেন জুলিয়াস সিজার ২১৩ অব্দে। পার্সমেন্টে শুধু বার্তা প্রেরণ নয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চাও হতো।
উপমহাদেশীয় প্রসঙ্গ
এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের কথা একটু বলা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে জৈন পুঁথি লেখা হতো পান পাতায়। তালপাতা, কলাপাতা, শালপাতা-উপমহাদেশে কিসে লেখা হয়নি। শিলালিপি ও তাম্রলিপির কথা আগেই বলেছি। সোনা-রুপা এমনকি হাতির দাঁতেও লেখা হয়েছে। ৫ম শতকে লেখা হয় পাণিনির ব্যাকরণ। তারপর এলো নতুন বিস্ময় কাগজ। কাগজ আবিষ্কার করে চীনারা। এটা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের কথা। এ সময় হিমালয় অঞ্চলেও এক ধরনের কাগজ আবিষ্কার হয়। তখন শুরু হয় পুঁথির যুগ। পুঁথি লেখা হতো হাতে এবং এটা ছিল খুব কষ্টসাধ্য। সবচেয়ে বড় কথা– হাতে কতটাই আর লেখা সম্ভব ছিল। তারপরও পুঁথি চর্চার যে ইতিহাস আমরা পাই তাও বৈচিত্র্যময়। এ সময় বই সংগ্রহের ধরন ছিল অদ্ভুত।
পৃথিবীর সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার
আলেকজান্ডার প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর প্রাচীন ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়। আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর দিয়ে যত জাহাজ যাবে তাতে কোনো পাণ্ডুলিপি থাকলে বন্দরে জমা দিতে হবে। সেগুলো নকল করে ফিরতি পথে ফেরত দেওয়া হতো। আলেকজান্দ্রিয়ার পুঁথিশালায় ৫ লাখ পুঁথি ছিল। ভারতে নালন্দা তক্ষশিলা ও বিক্রমশিলায় পুঁথি চর্চা ছিল। আরব অঞ্চলেও ছিল বাগদাদ, কায়রো এবং অন্যত্র। তবে আলেকজান্দ্রিয়া ছিল অনন্য। এ প্রসঙ্গে এক পুঁথি প্রেমিকের কথা বলা যায়। দশম শতকে পারস্যের উজির আবুল কাশেম ইসমাইল যেখানে উটের পিঠে তাঁর ১ লাখ ৭০ হাজার পুঁথি নিয়ে যেতেন। উটগুলো বর্ণমালা অনুসারে চলত।
মোগল আমলের গ্রন্থাগার
উপমহাদেশে মোগল আমলে বেশ জ্ঞানচর্চা হতো। মোগল সম্রাট বাবর লিখেছিলেন বাবরনামা। বাবরের পুত্র হুমায়ুন গ্রন্থাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা যান। নিরক্ষর আকবর হামজানামা নামক একখানা পুঁথি লিখিয়েছিলেন; যাতে ছবিই ছিল ১ হাজার ৪০০। বাদশার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের পুঁথি ছিল ২৪ হাজার। সম্রাট শাহজাহান লিখেছিলেন বাদশানামা। ছাপাখানার আবিষ্কার বইয়ের ইতিহাস একেবারে বদলে দেয়। তবে ছাপাখানার আগেও ৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দ বা তার আগে কাঠের বাক্সে ছবি আর অক্ষর খোদাই করে কাগজে ছাপ দিয়ে পৃথিবীর প্রথম গ্রন্থটি চীনারা বের করেন। নাম হিরকসূত্র। ১৯০৭ সালে এটা আবিষ্কৃত হয়। এখন এটা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আছে। লম্বায় ১৪ ফুট আর চওড়ায় দুই ফুট। এ বইটি ১ হাজার ১০০ বছর তার সৌষ্ঠব নিয়ে মরুভূমির গুহায় পড়ে ছিল। এটি খুঁজে বের করেন স্যার অরেলস্টাইন। বইয়ের প্রথমে দুই ফুট লম্বা ও ১ ফুট চওড়া পাতায় অপূর্ব একটি ছবি। চীনারা বইটি ব্রিটেনের কাছে ফেরত চাচ্ছে।
কালজয়ী তিনটি বই
ছাপার ইতিহাসে ১৪৫৬ সাল স্মরণীয়। ইয়োহানিস গুটেন বার্গ এ বছর বাইবেল ছেপে বিশ্বকে চমকে দেন। গুটেনবার্গ ধাতুর হরফ দিয়ে ছাপার কাজ শুরু করেন। গুটেনবার্গের বাইবেলের একটা কপি ১৯৯২ সালে ৫০ লাখ ডলারে একজন সুইস সংগ্রাহক কিনে নেন। ছাপার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বই ‘শেকসপিয়ারস ফাস্ট ফোলিও’। এটা ১৬২৩ সালে ছাপা হয়। আজ শেকসপিয়ারের যে ছবিটা বিশব্যাপী পরিচিত সেটা কান্নিক। মার্টিন ড্রোসহুটের আঁকা। ফাস্ট ফোলিওতে ছবিটা ছিল। বইটির সাইজ ১৩/৮। এক হাজার কপি ছাপা হয়েছিল। দাম ছিল এক পাউন্ড। এ বইটিও নিলামের জগতে সাড়া জাগানো। আলোচিত কালজয়ী তিনটি বইয়ের আবিষ্কারের কাহিনি বেশ চমকপ্রদ। হিরকসূত্র পাওয়া যায় গোবি মরুভূমির গুহায়, গুটেনবার্গের বাইবেলের শেষ কপিটা পাওয়া যায় ১৮৯৯ সালে শিশি বোতলের বাক্সের পেছনে। শেকসপিয়ারের ফাস্ট ফোলিও পাওয়া যায় ভেড়ার আস্তাবলে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় নেপালের রাজদরবার থেকে আর দ্বিতীয় নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পাওয়া গিয়েছিল গোয়াল ঘরে।
সৌন্দর্য ও উৎকর্ষতায় শিল্প
এক পুঁথি প্রেমিকের গল্প দিয়ে শেষ করি, একজন পুঁথি প্রেমিক তার একটি মূল্যবান পুঁথি কোনোভাবেই হাত ছাড়া করবেন না। কিন্তু একজন রাজার পুঁথিটি চাই-ই চাই। তিনি জোর করে পুঁথিটি ছিনিয়ে নেন। বইয়ের মালিকও কম যান না। তিনি বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় বিষ মিশিয়ে রেখেছিলেন। রাজা পড়তে পড়তে শেষ পৃষ্ঠায় গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আজ বই তার সৌন্দর্য ও উৎকর্ষতায় একটি শিল্প। কী চমৎকার তার অঙ্গ সৌষ্ঠব, কী আকর্ষণীয় ছাপা আর কত দ্রুতই না একটা বই তার পাঠকের কাছে চলে যায়। বইয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক। বই জয়ী হোক।
লেখক: সুহৃদ উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, রাজবাড়ী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ দ বস গ রন থ গ র উপমহ দ শ প রসঙ গ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩