আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়ে গেল অথচ খুনিরা আজও গ্রেপ্তার হলো না: শহীদ সজলের মা
Published: 24th, April 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানে সাভারের আশুলিয়ায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেছেন, জুতাচোর গ্রেপ্তার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় আমরা জুতা চোর গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়ে গেল সে খুনীদের কেন এখনও ধরতে পারলো না? আমি ধিক্কার জানাই প্রশাসন, বিচার বিভাগকে। আমি ধিক্কার জানাই প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে। তারা আজ পর্যন্ত আমার সন্তানের বিচার করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার-বিচার, বিচারপূর্বক আওয়ামীলীগের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে’ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে জুলাই মঞ্চ। এতে তিনি এ সব কথা বলেন।
সজলের মা শাহিনা বেগম আরো বলেন, আমার সন্তানরা জীবন দিয়ে গেছে। বাংলাদেশকে সুন্দর করে গড়ার জন্য। কিন্তু তারা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। আমি নির্বাচন দিয়ে কী করবো? আমার সন্তানের বিচার যদি না হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তো সুন্দর করে গড়ে ওঠেনি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এত মায়ের বুক খালি হওয়ার পরেও উনি কীভাবে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে না চাইলে উনি আপোসে সরে যাক। এখনো সময় আছে ওনাকে যেন অসম্মান হতে না হয়। সজল নাই কিন্তু সজলের মা হিসেবে আমি বেঁচে আছি। সামনের কাতারে থেকে সজলের মা জীবন দিতে প্রস্তুত। আমার আর হারানোর কিছু নাই।
শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, আমার ছেলে ভালো রেজাল্ট করে বনানী নৌবাহিনীর কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ৪ আগস্ট চারটায় ফার্মগেটে পুলিশের গুলিতে সে শাহাদাত বরণ করে। আমরা আজ সব হারিয়ে নিঃস্ব। এ সরকারের সময়ে যদি শহীদদের বিচার না হয়, তাহলে কোন সরকারের সময় বিচার পাব আমরা জানি না। প্রধান উপদেষ্টারকে অনুরোধ করি, এ সরকারের সময় বিচার না হলে জাতি আপনাদের ছাড়বে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল বন্ধ করতে হবে। যারা আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করবে, তাদেরকে খুঁজে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আপনারা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে যান যেন আর কোনো দল এমন আচরণ করতে না পারে।
শাহরিয়ার আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, গত আগস্টের চার তারিখ মিরপুর আমার ছেলে শহীদ হয়। আমার একমাত্র ছেলে। আজকে আট মাস হয়ে গেল, বিচারের ন্যূনতম চিত্র দেখছি না। বিচারের নামে প্রহসন চলতেছে। ট্রাইবুনালকে রঙ্গমঞ্চ করে রাখা হয়েছে, তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও গ্রেফতার হয় না।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এনসিপির মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শরাফত হোসেন, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, শাহবাগ থানা জামায়াতের আমির শাহ মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, রোড টু রিফর্মের তামজীদ হোসেনসহ শহীদ পরিবার এবং আহতরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য সজল র ম জ বন দ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।
টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।
জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।
এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।
দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।
ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।
মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।
বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।
ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।
ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।
ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।
গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।