সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায় কয়েক দিন ধরে পাথর লুট করছিল একটি চক্র। এ খবর পেয়ে আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা স্থানীয় প্রশাসনের টাক্সফোর্স অভিযান চালায়। এ সময় পাথর উত্তোলনকারী ৯ জনকে ২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সকাল ছয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, কালাইরাগ ও বাঙ্কার এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে টাক্সফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার।

এ সময় পাথর উত্তোলনে জড়িত ১০ জনকে অভিযানকারী দল আটক করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পাথর লুটে সম্পৃক্ত থাকায় নয়জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালদের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া আটক ব্যক্তিদের একজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাঁকে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দলইরগাঁওয়ের মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন, নতুন মেঘারগাঁওয়ের মকবুল হোসেন, দক্ষিণ কলাবাড়ির মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কালাইরাগের ফুল মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলার লাকি গ্রামের ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ কিবরিয়া আহমেদ, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বাসাকর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও আলী নূর এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মোহাম্মদ জজ মিয়া।

অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযান চলাকালে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা সংঘবদ্ধভাবে তিন দিক থেকে অভিযানকারীদের ওপর পাথর ছুঁড়ে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা পাথর লুটপাটকারীদের ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান। এ সময় আভিযানিক দলটি ২০টি পাথরবাহী নৌকা ধ্বংস করে পানিতে ডুবিয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও ১৮টি নৌকা জব্দ করে বিজিবির জিম্মায় দেয়। এ সময় ১০ জনকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুটপাটের খবর পেয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৯ জনকে ২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাথর লুট বন্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ উপজ ল র বছর কর এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

লাখ লাখ মানুষের সমাগমে চাঙা সিলেটের পর্যটন ব্যবসা

সিলেটে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষা মৌসুম। কিন্তু এবার পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা ঋতু শুরু হওয়ার আগেই দফায় দফায় বৃষ্টি নামায় বর্ষার আমেজ এসে গেছে। নদ-নদী, হাওর-খাল–বিল সব জায়গা নতুন পানিতে ভরেছে। টইটম্বুর পানিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো মোহনীয় রূপ পেয়েছে। এ রকম অবস্থায় ঈদের লম্বা ছুটি মিলেছে। তাই বেড়ানোর মওকা পেয়ে অনেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন গন্তব্য সিলেটে ছুটে এসেছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার আমেজে সিলেটের পর্যটন ব্যবসা এবার চাঙা হয়ে উঠেছে। গত দেড় সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ পর্যটক এসেছেন এই জনপদে। হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও পরিবহন খাতের পাশাপাশি চা-পাতা, মণিপুরি কাপড়, সাতকরা ও আচার কেনাবেচাসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। এতে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন।

জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ফয়েজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের ছুটি কিংবা পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এবারই সবচেয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্রেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও জমেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন রমরমা অবস্থায় খুশিতে আছেন এখানকার পর্যটন খাত–সংশ্লিষ্ট সবাই।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র আছে। আর ভ্রমণ পর্যটনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও সিলেট নগরে অবস্থিত হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জের শ্রীশ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সিলেটে আসেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেন্দ্রিক ট্যুরিজমের পাশাপাশি ধর্মীয় ট্যুরিজম বিবেচনায় পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ট্যুরের জন্য অনেকেরই এখন পছন্দের জায়গা সিলেট। সাধারণত সিলেটের চার জেলায় বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে সিলেটে আসেন ১২ থেকে ১৩ লাখ। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে প্রায় ৫ লাখ করে ১০ লাখ এবং হবিগঞ্জে প্রায় ২ লাখ পর্যটক আসেন। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই চার জেলায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের ছুটি কিংবা পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এবারই সিলেটে সবচেয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সব কটি পর্যটনকেন্দ্রেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও জমেছেফয়েজ হাসান, সভাপতি, সিলেট চেম্বার

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেটে এবারের ঈদের ছুটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ পর্যটক এসেছেন। এতে পর্যটন খাতে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে। যেহেতু পর্যটন মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে, সেহেতু চলতি বছর বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।’

সিলেট ছাড়া অন্য তিন জেলায় ঈদের ছুটিতে কী পরিমাণ পর্যটক এসেছেন কিংবা কেমন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই মৌসুমের শুরুতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন। এর মধ্যে সিলেটে ৫ লাখ, মৌলভীবাজারে ২ লাখ এবং সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় দেড় লাখ পর্যটক এসেছেন। চার জেলায় পর্যটন খাতে কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

ষড়্‌ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকে বর্ষাকাল বলা হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ শনিবার পয়লা আষাঢ়। অর্থাৎ কাগজে–কলমে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের বর্ষাকাল।

এবারের ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় হয়েছে। এসব জায়গায় জল-পাথর আর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন দেশের নানা এলাকা থেকে আসা পর্যটকেরা। সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২ উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: যুবদল নেতাকে বহিষ্কার, ছাত্রদল নেতাকে শোকজ 
  • উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: যুবদল নেতাকে বহিষ্কার, ছাত্রদল নেতাকে শোকজ 
  • লাখ লাখ মানুষের সমাগমে চাঙা সিলেটের পর্যটন ব্যবসা
  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী