দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে অবেসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবায় সরকারকে নীতি সহায়তাও দিয়ে যাচ্ছে সংগঠন। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের এক পাঁচ তারকা হোটেলে পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে এসব কথা বলেন অতিথিরা।

এবারের সম্মেলনে ভারত-পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দেশ-বিদেশের পতিতযশা আড়াই শতাধিক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নেন। ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা.

কামরুন নেসা রুনার সভাপতিত্বে সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার, সান শাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ বলেন, ‘দেশের মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের পেছনে ওজিএসবির বড় অবদান রয়েছে। গবেষণাতেও এই সংগঠনের সদস্যদের অবদান রয়েছে। আশা করছি, দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে সংগঠনটি আরও বড় ভ‚মিকা রাখবে।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওজিএসবির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডা. শামসুন নাহার, অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম, অধ্যাপক ডা. মারুফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা, অধ্যাপক ডা. বেগম রোকেয়া আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. ফওজিয়া হোসেন, অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. দিপি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. আফজালুন্নেসা চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. ডালিয়া আকতার, ওজিএসবি চট্টগ্রাম শাখার সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. শর্মিলা বড়ুয়া প্রমুখ।

এর আগে সকালে শুরু হওয়া দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রসূতি ও স্ত্রী রোগের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও তার প্রতিকারের দিকনির্দেশনা বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গত ২৪ এপ্রিল শুরু হওয়া সেমিনারের প্রথম দিনে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
  • কালীগঞ্জ পৌর শহর যেন মশার স্বর্গরাজ্য