ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে, তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার ওপর। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষ যেমন গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টারের কর্মী, কণ্ঠশিল্পীদের জন্য কণ্ঠই সবকিছু।

কণ্ঠনালির প্রদাহ

এ প্রদাহ দুই ধরনের। সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস। ভাইরাস, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য কণ্ঠনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার করলে বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার

অতিরিক্ত চিৎকারের কারণে যেমন স্বর ভেঙে যায়, তেমনি আবার মৌসুম বদলের সময়ও এমন সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাপমাত্রার তারতম্যের সময় কণ্ঠনালি বা টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ হিসেবে স্বর ভেঙে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগী স্বর ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন: কণ্ঠস্বরের ওপর যাঁদের খুব বেশি চাপ পড়ে (যেমন গায়ক, আবৃত্তিকার, শিশুদের শিক্ষক)। তাঁদের স্বরতন্ত্রীতে ছোট ছোট গোটা হতে পারে (নডিউল)। এ রকম হলে স্বর অস্বাভাবিক রয়ে যায় দীর্ঘদিন। স্বর ভাঙার অন্যান্য কারণ হলো থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসার, স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার ইত্যাদি।

মৌসুমের কারণে কণ্ঠনালির প্রদাহ হলে গলাব্যথা, জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ওজন বৃদ্ধি, শীতপ্রবণতা, দুর্বলতা, বিষণ্নতা, চিন্তায় ও কাজে ধীরতা, চুল পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।

ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ওজন হ্রাস, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করতে হবে

● কণ্ঠস্বরের সমস্যা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

● আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।

● কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হোন। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না।

● ধূমপান, অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। 

● ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন।

● অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। 

● অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার ও কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

● শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে, এটি কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতা বৃদ্ধিকারী যন্ত্র ব্যবহার করুন।

● গলা শুকনো থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা ক্ষতিকর। 

● যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয়, তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি প্রধানত কণ্ঠের মাধ্যমে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাওয়ার বদভ্যাস কণ্ঠস্বরের নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই সঠিক কণ্ঠস্বর বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।


অধ্যাপক ডা.

এম আলমগীর চৌধুরী, অধ্যাপক, ইএনটি হেড নেক সার্জারি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ভ ঙ ব যবহ র র জন য হ র কর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

শীতের শুরুতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। কেউ কেউতো এই ঋতুতে প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগতে থাকেন। কারণ এই সময় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। গলার স্নায়ু ও টিস্যুতে জ্বালা, খসখসে ভাব এবং ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গলা ব্যথা ছোট একটি সমস্যা মনে হলেও, এটি কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি ঘুমের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতকালে এই ধরনের অস্বস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়। 

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এবং কোভিড-১৯ সবচেয়ে বেশি গলা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। এসব ভাইরাস গলার ভেতরের টিস্যুকে আক্রান্ত করে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা খসখসে ভাব তৈরি করে।

আরো পড়ুন:

পেটে ভর দিয়ে ঘুমানোর প্রভাব 

শীতকালে কত সময় ধরে গোসল করা ভালো

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ
স্ট্রেপ থ্রোট নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ তীব্র গলা ব্যথার জন্য দায়ী। এতে গলায় প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর এবং লালচে ভাব দেখা যায়।

অ্যালার্জি
ধুলোবালি, পোলেন, পশুর লোম ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জি থাকলে নাক ও গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরা বাড়ে, যা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।

শুষ্ক বাতাস
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আরও শুষ্ক হয়। এতে গলার টিস্যু শুকিয়ে গিয়ে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

ধূমপান
ধোঁয়ার রাসায়নিক উপাদান গলার ভেতরের অংশকে উত্তেজিত করে। এতে গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা বাড়ে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স
পেটের এসিড গলার দিকে উঠে আসলে সেখানকার টিস্যুতে জ্বালা ধরায় এবং ব্যথা হয়।

গলা ব্যথার সাধারণ উপসর্গ

গলায় ব্যথা বা খসখসে অনুভূতি গিলতে সমস্যা বা গলায় চাপ অনুভব গলা বা চোয়ালের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া মুখের ভেতর লালভাব বা প্রদাহ স্বর ভাঙ্গা, কর্কশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া কখনো কখনো হালকা জ্বর, কাশি বা নাক বন্ধ হওয়া

গলা ব্যথা প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

নিয়মিত হাত ধোওয়া
২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুলে সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। বাইরে থেকে এসে, খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্রচুর পানি ও গরম পানীয় পান
শীতকালে শরীর সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা গরম পানীয় পান করলে গলা আর্দ্র থাকে এবং ব্যথা কম হয়।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার
ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ালে গলার শুষ্কতা কমে যায়। বিশেষ করে ঘুমের সময় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার খুব উপকারী।

জ্বালামূলক উপাদান থেকে দূরে থাকা
ধোঁয়া, কড়া গন্ধের ক্লিনার, স্প্রে, ধুলোবালি এগুলো গলা উত্তেজিত করে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

গলা ব্যথা উপশমে ঘরোয়া কার্যকর উপায়

লবণ-পানির গার্গল: গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করলে গলার ফোলা কমে এবং ব্যথা হ্রাস পায়।

মধু: এক চামচ মধু গলার ভেতরকে নরম করে এবং আরাম দেয়। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের কখনো মধু দেওয়া যাবে না।

হার্বাল চা: ক্যামোমাইল, আদা বা লাইকোরিস রুট চা গলার প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।

লজেন্স বা হার্ড ক্যান্ডি: এগুলো লালা নিঃসরণ বাড়ায়, যা গলা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত গলা ব্যথা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে নিচের অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি—

•  গলা ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
•  উচ্চতাপমাত্রার জ্বর, শ্বাস নিতে সমস্যা বা তীব্র ব্যথা থাকলে
•  গিলতে খুব বেশি কষ্ট হলে
•  গলায় সাদা দাগ বা পুঁজ দেখা দিলে

সূত্র: ফ্যামিলি কেয়ার সেন্টার

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন