Samakal:
2025-05-01@00:28:03 GMT

আঁধার পেরিয়ে বৈভব সূর্যের উদয়

Published: 29th, April 2025 GMT

আঁধার পেরিয়ে বৈভব সূর্যের উদয়

স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে শৈশবে সংসার বুঝে গেছে বৈভব সূর্যবংশী। জমি তো মায়ের মতো। সারা বছর অন্ন জোগায়। বোধ-বুদ্ধি হতেই সেই জমি বিক্রির সাক্ষী সে। বাবার কাজ ছেড়ে দেওয়া, সংসারে অভাব নেমে আসা দেখেছে। ১৪ বছর বয়সে মাত্র ৩৫ বল খেলে আইপিএলে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরির সময় বৈভবের চোখে হয়তো ভাসছিল, বাবার জায়গায় ভাইয়ের পরিবারের হাল ধরার দৃশ্য।

ম্যাচ জয়ের পর স্মৃতির সেই ঝাপি খুলে দিয়েছে বৈভব, ‘আমাদের সংসার খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। বাবা কাজ ছেড়ে দিলেন আমার অনুশীলনের জন্য। মা রাতে তিন ঘণ্টা ঘুমাতেন। রাতে উঠে আমাদের অনুশীলনে যাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুত করতে হতো তাকে। বাবার কাজ ভাই করতে শুরু করলেন। আমি আজ যা কিছু তাদের জন্য।’

বৈভবের প্রতিভা, পরিশ্রমের গল্প সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএলের নিলামে জায়গা পাওয়ার ও ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দল পাওয়ার পরই চাউর হয়েছিল। সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএলে অভিষেক হয় তার। এরপর সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক বনে গেছে তরুণ এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।

এই তরুণকে প্রস্তুত করেছেন বিহারের এক একাডেমির কোচ মানিশ ওঝা। মাজাঘষা করেছেন ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি ও অনূধ্র্ব-১৯ দলের কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ। আর তাকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে, সময় ও সুযোগ দিয়ে তারকা বানিয়ে দিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। ছোট্ট বৈভবও যে শিখে গেছেন ক্যারিয়ার, ত্যাগ প্রত্যয়গুলো।

যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় মনোজ ওঝার কথায়, ‘খাসি ও মুরগির মাংস দেখলে সে পাগল হয়ে যায়। যতই দেন না কেন, সাবাড় করে দেবে। সে খেতও খুব মজা করে। যে কারণে ওর চেহারায় নাদুসনুদুস ভাবটা এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু এখন সে খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, ডাক্তারের নির্দেশ। পিজ্জা আর খায় না। ওইটুকু ছেলের জন্য এগুলো কঠিন। কিন্তু কারণটা সে বুঝতে শিখেছে।’

বৈভবকে আইপিএল নিলামের ঠিক আগে ট্রায়ালে ডেকেছিল রাজস্থান রয়েলস। রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে তাকে পাঠিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। তাকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ডেকেছিলেন লক্ষ্ণণ। সেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৬ করে রান আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে কেঁদেছিল বৈভব। লক্ষ্মণ তাকে বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু রান দেখি না, দক্ষতা-প্রতিভাও দেখি।’

বৈভব আইপিএলে মাত্র ৩ ইনিংস খেলেছেন। অভিষেকেই প্রথম বলে ছক্কাসহ ঝড়ো ইনিংসে আগমণী বার্তা দেয়। এমন একজনকে এতো দেরিতে কেন খেলালেন ভারতের হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী কোচ দ্রাবিড়। ব্যাখ্যায় রাজস্থান কোচ বলেন, ‘সে অনুশীলনে খুব ভালো করছিল। কিন্তু আমরা তাকে আইপিএলের পরিবেশ, চাপ, ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত করতে চাইছিলাম। সরাসরি তাকে আইপিএলের মতো দর্শকভরা মঞ্চে নামিয়ে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারত। আমরা চাইনি সে ভয় পাক।’ বৈভব অবশ্য সেঞ্চুরি করেই বলেছে, ‘আমি ভয় পাই না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ