বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ অর্থাৎ জিপ গাড়ি কেনা হবে। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র ডাকা হবে না। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে। প্রতিটি পিকআপের দাম ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০০ পিকআপ কেনায় ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ব্যবহৃত প্রচুর গাড়ি অগ্নিসংযোগে নষ্ট হয়। তাই নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গাড়িগুলো কিনতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

নীতিগত অনুমোদনের প্রস্তাবে জননিরাপত্তা বিভাগ বলেছে, দেশে মোট ৬৩৯টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও এর জেরে উদ্ভূত ঘটনায় ৪৬০টি থানার পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ হয়। এ কারণে পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়ে যায়। সে জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি কেনা দরকার।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলসের ১ দশমিক ৩৬ একর জমি বিক্রির প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। ১৯৬১ সালে ২৭ দশমিক ২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় কারখানাটি।

২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রির প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। তখন কারখানাটির অব্যবহৃত জমি বিক্রির পরিবর্তে সরকারের উন্নয়নমূলক বা জনহিতকর কাজে ওই জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ দুটির পাশাপাশি কমিটি ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ, ২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের লট-২ এর আওতায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন মুদ্রণের কাজ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব।

এর আগে প্রকল্পটির লট-১–এর আওতায় মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে মাঠপর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানায় নির্বাচন কমিশন। আরেক প্রস্তাবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণকাজেরও নীতিগত অনুমোদন দেয় কমিটি।

বৈঠকে হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বার্জ মাউন্টেড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রকল্পের উদ্যোক্তা কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রা.

লি. এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) সঙ্গে বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য দুই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।

আসছে তিন কার্গো এলএনজি

এদিকে আজ মঙ্গলবার ক্রয় কমিটিতে আগামী মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য তিন কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ)। এক কার্গোর কাজ পেয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ কিনতে ব্যয় হবে ১১ দশমিক ১৫ মার্কিন ডলার। এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

আরেক প্রস্তাবে গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়বে ১১ দশমিক ২৭ ডলার। ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড আরেক কার্গো সরবরাহের কাজ পেয়েছে। এখানে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হয় ১১ দশমিক ৩৫ ডলার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব এমএমব ট ত অন ম দ ১ দশম ক উপদ ষ ট র জন য ব যবহ প কআপ

এছাড়াও পড়ুন:

পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, ভালো করে জানি না: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয় আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—যে দেশ থেকেই আনা হয় না কেন, তুলনামূলক দর দেখা হয়। বিষয়টি এত সহজ নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানিকে কাজ দিয়ে দেওয়া হবে। আর পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, তা ভালো করে জানিও না আমরা।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন।

অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল, এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না।

মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

অ্যাকসিলারেট এনার্জি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এলএনজি সরবরাহের পাশাপাশি এলএনজি রূপান্তরের ভাসমান টার্মিনাল ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে তারা।

বিভিন্ন দেশের ২৩টি কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে। এর মধ্যে অ্যাকসিলারেট এনার্জিও রয়েছে।

কর্মসংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশি কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা–বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, সেটা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতিটা কমানোর জন্য কী কী আমদানি করতে পারে, দেখছে। সেখানে মোটামুটি আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’

সার আমদানি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। চট করে ব্যবস্থা নেব না। বিস্তারিত জানি না, সার আনে বেশির ভাগ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা তাদের দায়িত্ব। বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্তর্জাতিক দর যাচাই করে আমদানি হচ্ছে এলএনজি
  • পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, ভালো করে জানি না: অর্থ উপদেষ্টা