মেসির উত্তরসূরি নাকি মেসির সতীর্থ, কার রাত আজ
Published: 30th, April 2025 GMT
ইশ, বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচটি যদি এক সপ্তাহ আগে হতো! কে জানে, ইন্টার মিলান সমর্থকেরা এমন কিছু ভেবে হাহুতাশ করছেন কি না। এক সপ্তাহ আগেও লড়াইটা একরকম সমতাতেই ছিল। দুই দলের সামনে ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছিল ‘ট্রেবল’ জয়ের সম্ভাবনা। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর তো দুই দলেরই আত্মবিশ্বাস রীতিমতো টগবগ করে ফুটছিল।
কিন্তু সপ্তাহ না পেরোতেই মিলান শহরের নীল অংশজুড়ে কেবল হতাশা। নাহ, ইন্টারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের সম্ভাবনা এখনো হওয়ায় মিলিয়ে যায়নি। হাতছাড়া হয়ে যায়নি লিগ শিরোপাও। তবুও বাতাস ভারী হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের পতন্মুখ পারফরম্যান্স তো আছেই, পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বার্সেলোনার ছন্দে থাকাও এখন ইন্টার–সমর্থকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
বার্সার মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইন্টার–বার্সার আজ রাত ১টায় ম্যাচটি চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ চারের সূচি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। শুরুতে দুই দলকে একই সমতাতেও রাখা হয়েছিল, কিন্তু গত কদিনে পাল্লাটা হেলে গেছে বার্সার দিকেই। এর পেছনে অবশ্য যৌক্তিক কারণও আছে। এই কদিনে বার্সা যেখানে ট্রেবল জয়কে সামনে রেখে তেতে উঠেছে, সেখানে ট্রেবল সম্ভাবনার কবর রচনা করে সব হারানোর শঙ্কায় ইন্টার।
আরও পড়ুনস্পেনে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট: বার্সেলোনা-ইন্টার ম্যাচ হবে কি১৯ ঘণ্টা আগে১৬ এপ্রিল বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর ২–২ গোলে ড্র করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪–৩ অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইন্টার। এটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। বায়ার্নের মতো ফেবারিটকে হারিয়ে সেমিতে যাওয়া মোটেই সহজ ছিল না। মৌসুম শুরুর আগে এই ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলা হলে বেশির ভাগ রায় নিশ্চিতভাবে বায়ার্নের পক্ষেই যেত। ফলে সেই জয় বেশ উজ্জীবিত করে তুলেছিল ইন্টারকে।
কিন্তু সেই প্রেরণা ইন্টার পরের ম্যাচে অনূদিত করতে পারেনি। বোলোনিয়ার বিপক্ষে লিগ ম্যাচে ইন্টার হেরে যায় ১–০ গোলে। বোলোনিয়া সিরি আ–র অন্যতম সফল দল, তাদের কাছে হারাটা হতাশার হলেও অঘটন ছিল না। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে ইন্টার। কিন্তু সেই ফাইনালে আরও বড় ধাক্কা খায় নেরাজ্জুরিরা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের কাছে ১–০ গোলে হেরে হাতছাড়া হয়ে যায় কাপ শিরোপা, একই সঙ্গে শেষ হয় ট্রেবল জয়ের স্বপ্নও।
বার্সার দুই সেরা তারকা ইয়ামাল ও রাফিনিয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ট র বল ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।