সুরিয়াবানশি দেখে ফেললেন ক্রিকেট বাস্তবতা
Published: 2nd, May 2025 GMT
গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সারা ক্রিকেট দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বৈভব সুরিয়াবানশি। অথচ পরের ম্যাচেই মুদ্রার ওপিঠ দেখে ফেললেন এই ১৪ বছর বয়সী কিশোর। বৃহস্পতিবার (১ মে) মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে বাস্তবতার জমিতে আছড়ে পড়তে হল তাঁকে। রানের খাতা খুলার আগেই সাজঘরে সুরিয়াবানশি। এই বিধ্বংসী কিশোর ওপেনারের ব্যাট হাসল না, তার দল রাজস্থান রয়্যালসেও ছিটকে গেল প্লে’অফের দৌড় থেকে।
আইপিএল ৫০তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে মুম্বাই ২ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানের বিশাল পুঁজি পায়। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দিশাহীন হয়ে পড়ে রাজস্থান। ২৩ বল আগে অল আউট হয়ে যাওয়ার আগে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৭ রান। ১০০ রানের বিশাল জয়ে টেবিলের চূড়ায় উঠে গেল মুম্বাই।
জয়পুরে ঘরের মাঠে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় রাজস্থান রয়্যালস। চোটের কারণে সন্দীপ শর্মা ছিলেন না। তবুও শুরুতে তাদের রাজস্থানের সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মনে হচ্ছিল। মুম্বাই ধীরগতির সূচনা পায়। এই সময়টায় রোহিত শর্মা রিভিউ নিয়ে অল্পের জন্য বেঁচে যান। কিন্তু কয়েক ওভার পরই ওপেনাররা হাত খুলেতে থাকে এবং পাওয়ারপ্লে শেষে ৫৮ রান তোলে কোনো উইকেট না হারিয়ে।
আরো পড়ুন:
আইপিএলে ম্যাক্সওয়েল অধ্যায়ের ইতি, সুযোগ পাচ্ছেন নতুন মুখ
চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা
রায়ান রিকেলটনকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বজায় রাখেন রোহিত। তাদের জুটি শতরান তোলে ওভার প্রতি প্রায় ১০ গড়ে। দুজনেই ফিফটি পাওয়ার পর পরপর দুই ওভারে আউট হয়ে যায়। তারা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন ঠিক সে জায়গা থেকে শুরু করেন সুরিয়াকুমার যাদব ও চার নাম্বারে নিজেকে উঠিয়ে আনা অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়া। দুজন মিলে ৪৪ বলে ৯৪ রান যোগ করেন।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ইনিংস শেষ করে ২১৭ রানে। রিকেলটন ৩৮ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন। রোহিত করেন ৩৬ বলে ৫৩ রান। অন্যদিকে হার্দিক ও সুরিয়াকুমার যাদব দুজনই সমান ২৩ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
স্বাগতিক রাজস্থানের ইনিংস শুরুই হয় দুঃস্বপ্নের মতো। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সুরিয়াবানশি দ্বীপক চাহারের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন। বাদ পড়ার আশঙ্কায় থাকা রাজস্থানের ব্যাটারদের আক্রমণাত্মক ছিল, ফলে চাহার, বোল্ট এবং বুমরার উইকেট পাওয়া সহজ হয়। মাত্র পাঁচ ওভারের মধ্যেই তারা প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান হারায়। যদিও রাজস্থান পাওয়ার’প্লে শেষে ৬২ রানে ছিল।
হার্দিক বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম বলেই তুলে নেন শুভম দুবের উইকেট। এরপর করন শর্মা আঘাত হানেন ধ্রুব জুরেলকে ফিরিয়ে। রাজস্থানের লোয়ার অর্ডার বিশেষ প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। কেবল জোফ্রা আর্চারের ৩০ রানের কল্যাণে দলীয় সংগ্রহ তিন অংকে পৌঁছায়। কারন ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন। যদিও মূল কাজ আগেই করে দিয়েছিলেন পেসাররা।
রাজস্থানের এখন আর সেরা চারে খেলার সুযোগ নেই। বাকি তিন ম্যাচে তারা হয়ত আগামী মৌসুমের প্রস্তুতি নিয়েই ভাববে। অন্যদিকে ১১ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে মুম্বাই। সেরা দুইয়ে থাকতে চাইলে অবশ্য তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।