দিনটি ভালোভাবে শুরু করার জন্য সকালে পাঁচটি কাজ করতে পারেন। এই ছোট ছোট কাজগুলো আপনার শরীর, মন এবং আপনার সার্বিক কার্যকলাপেরও ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুস্থ থাকতে সকালে কোন কোন অভ্যাস গড়ে তুলবেন – এই বিষয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট শাজিয়া শাদাবের পরামর্শ জেনে নিন।

পানি পান করে দিন শুরু করুন: সকালে পানি পান করুন। শরীরে জমা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য হাইড্রেশন অপরিহার্য। এরপর সারাদিন কী খাবেন, কখন খাবেন এর পরিকল্পনা সাজিয়ে নিন। এতে অপ্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন ।

৫-১০ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করুন: ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে, ধীরে ধীরে শুরু করুন। কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করুন। এতে স্ট্রেস হরমোন কমবে। পেটের চর্বিও কমবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন এবং নমনীয়তা জাগানোর জন্য ভালো। শরীরকে সারাদিন ভালোভাবে চলাফেরা করার জন্য প্রস্তুত করবে এই অভ্যাস। এতে  আঘাত পাওয়অর ঝুঁকি কমবে এবংবং আপনার ওয়ার্কআউটগুলো আরও ভালো হবে।

আরো পড়ুন:

যে ভুলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করা সম্ভব না

মিডলাইফ ক্রাইসিস মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

নাস্তা গ্রহণের আগে আগে ২০ মিনিট হাঁটা:  শরীরের স্বক্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সকালে নাস্তা গ্রহণের আগে ২০ মিনিট হাঁটতে পারেন। অথবা ২০ মিনিট ছোট-খাটো কাজ করতে পারেন।  এতে আপনার বিপাক ক্ষমতা বাড়বে।  সকালে সূর্যালোকের সংস্পর্শেও কিছু সময় থাকতে পারেন। এই অভ্যাস শুধুমাত্র আপনার ভালোলাগা অনুভূতিই দেবে না, হার্টের সার্কাডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। 

প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা গ্রহণ করুন: সকালের খাবারে অধিক চিনিযুক্ত খাবার রাখবেন না। অধিদদক চিনিযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং দুপুরের খাবার গ্রহনের সময় হওয়ার আগেই অনেক ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। এর পরিবর্তে, প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি মিশ্রিত নাস্তা বেছে নিন। শাজিয়া শাদাব বলেন, ‘‘প্রোটিন হজম করতে শরীর বেশি শক্তি ব্যয় করে এবং প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। প্রোটিন পেশী রক্ষণাবেক্ষণেও সাহায্য করে—যখন প্রোটিন  চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

খাওয়ার পরে শুয়ে পড়বেন না: শাজিয়া শাদাবের পরামর্শ, ‘‘ সকালের নাস্তা গ্রহণের পরে সোফায় শুয়ে পড়বেন না। হজম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, এবং পেট ফাঁপা কমানোর জন্য ১০-১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন অথবা ধীরে ধীরে হাঁটাতে পারেন। হালকা নড়াচড়াও পুষ্টির শোষণে সহায়তা করতে পারে। খাবার গ্রহণের পরে দাঁড়িয়ে থাকা বা ধীরে হাাঁটার অভ্যাস রপ্ত করলে দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্য ভালো ফলাফল পেতে শুরু করতে পারে। 

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র জন য গ রহণ র র পর ম আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই’

‘অবাজি ডাইল আর চইল কিনতে পরাণ বাইর যার, মাছ-গোস্ত হডে পাইয়ুম। গোস্ত হত্তে খাইয়্যি ইয়ান মনতও নাই।’ (বাবা ডাল আর চাল কিনতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মাছ-মাংস কোথায় পাব? মাংস কখন খেয়েছি সেটা মনেও নেই।)
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিক কবির হোসেন (৬৫)। তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার পেকুয়ায়। তিনি ২০ বছর ধরে লবণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। দুই ছেলে, তিন মেয়ে, স্ত্রীসহ সাত সদস্যের সংসার তার। সংসার তাকে একাই চালাতে হয়। প্রতিদিন কাজ পেলে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মাসে গড়ে ২০ দিন কাজ পান। আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ৭ সদস্যের সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর আছে ঋণের কিস্তি শোধের দায়।
কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নৌকা ও ট্রাক থেকে লবণ খালাসের কাজ করি। মেয়ের বিয়ের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি এনজিও থেকে। এগুলো প্রতি সপ্তাহে শোধ করতে হয়।’
গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার ইন্দ্রপুল এলাকার লবণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বেশির ভাগ শ্রমিক জানান, তাদের সংসারে অভাব লেগেই আছে। অনেকেই ঋণগ্রস্ত। সরেজমিন দেখা যায়, সারিবদ্ধ কারখানা আর গুদামে ঠাসা সরু গলিতে দিনের আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। প্রতিদিন কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও পরিবেশ একেবারেই নোংরা। 
ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টি লবণ কারখানা আছে ইন্দ্রপুল এলাকায়। ৭৭ বছর আগে ১৯৫২ সালে ইন্দ্রপুলে লবণ শিল্প গড়ে ওঠে। দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ লবণ সরবরাহ হয় এখানকার কারখানাগুলো থেকে। ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লবণ মাঠ থেকে নৌপথ ও সড়কপথে পটিয়ার ইন্দ্রপুলে অপরিশোধিত লবণ আসে। এখানকার অর্ধশতাধিক কারখানায় লোড-আনলোড ও ক্রাশিং কাজে যুক্ত শ্রমিকরা। লবণশিল্পের পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে চটশিল্প, সুতা, পলিব্যাগ, রাইস মিল, তুষ ও কালো কাঠের মিল, সেমাই ও ময়দা কারখানা।
লোড-আনলোডের কাজ করেন ভোলার আবুল হাশেম (৬০)। তিনি বলেন, ‘আমরা দিনে হাজার টাকা মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন করা অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
মোহাম্মদ রিয়াজ (৩৬) বলেন, ‘আমাদের শ্রমে-ঘামে লবণ আমদানি রপ্তানির কাজ চলে পটিয়ায়। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবারও জোটে না। ২ বছর আগে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এখনও শোধ করতে পারিনি।’
হাবিবুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া বর্ষা এলে কাজ থাকে না। এতে আমরা অভাবে পড়ি।’
১৯৫২ সালের দিকে চানখালী খালের পাড়ে লবণশিল্পের সূচনা হয়। তখনকার দিনে ওই এলাকায় কোনো লবণ কারখানা ছিল না। সে সময় সাম্পান বা বোটে করে বাঁশখালী এলাকা থেকে কালো লবণ এনে ইন্দ্রপুলে বিক্রি করা হতো। প্রথম দিকে এ শিল্পের সূচনা করেন হাজী চুন্নু মিয়া, পরবর্তী সময়ে চুন্নু মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ সওদাগর লবণশিল্পের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পরে আবদুল কাদের সওদাগর, আবদুর রহমান, নজু মিয়া, ফজর রহমান, আফাজুর রহমান, আবদুল খালেক, আবদুস ছামাদ, আবদুস সাত্তার, নুরুল হুদা, ইউসুফ, এজাহার মিয়া, মনীন্দ্রলাল, আবদুর রহিম, নজির আহমেদ, আলী আহমেদ, আজিজ সওদাগর, মতি সওদাগর, কবির আহমেদ, গাজী আবদুল কাদের, গাজী আবদুল হক, মুনসেফ আলী, আবুল খায়ের লবণশিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখেন। 
বর্তমানে চানখালী খালের শাখা উপশাখা খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে লবণশিল্পও পড়েছে সংকটে। ব্যবসায়ীরা খাল খননের দাবি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ