ভারতের কলকাতা টেস্টে হারের ৫ কারণ
Published: 17th, November 2025 GMT
২০১০ সালের পর ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ছিল না। না থাকার কারণ যতটা না প্রোটিয়াদের ব্যর্থতা, তার চেয়ে বেশি ঘরের মাঠে ভারতের শক্তিমত্তা। তবে রোববার শেষ হওয়া কলকাতা টেস্টে ধারা পাল্টে গেছে। ১২৪ রান তাড়া করতে নেমে ভারত ৯৩ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছে।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতের ক্রিকেটাঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনা। সাবেক অধিনায়ক ও কোচ অনিল কুম্বলে, সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইরফান পাঠান ও চেতেশ্বর পুজারারা এ নিয়ে কথা বলেছেন। সার্বিক আলোচনা থেকে কলকাতা টেস্টে ভারতের হারের ৫টি কারণ উঠে এসেছে।
১.টার্নিং পিচ উল্টো ফল
ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর ম্যাচের পর স্বীকার করেছেন যে তাঁরা এমন একটি পিচ চেয়েছিলেন, যা প্রথম দিন থেকেই স্পিন করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পেসনির্ভর দলকে আটকাতে উপমহাদেশের দলগুলো সাধারণত এমন কৌশলই অবলম্বন করে। তবে ভারতের এবারের কৌশল কাজে দেয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের মতো ভারতীয়রাও ব্যাটিংয়ে হাঁসফাঁস করেছেন; বরং প্রোটিয়ারা দুবারই দেড় শর বেশি রান করলেও ভারত একবার গুটিয়ে গেছে এক শর কমেই।
যশস্বী জয়সওয়াল ও ধ্রুব জুরেল দুই ইনিংসেই ব্যর্থ, আর অভিজ্ঞ লোকেশ রাহুল ও ঋষভ পন্ত প্রথম ইনিংসে শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি। ম্যাচের পর গম্ভীর বলেছেন, ‘এই উইকেটে কোনো ভূত ছিল না। খেলা যাচ্ছে না এমন উইকেটও নয়। পিচ আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম, সেটিই দেওয়া হয়েছিল।’
গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিননির্ভর উইকেট বানিয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ভারত। আবারও একই উইকেট বানানোয় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্পিন কিংবদন্তি কুম্বলে, ‘আমার মনে হয়েছে ভারত পিচ আর কন্ডিশন দেখে একটু বেশি ভয় পেয়েছিল। আর সেটা বল দেখা ও খেলার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।’
২. দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ব্যর্থতা১৮৯ আর ৯৩—দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারত তুলতে পেরেছে ২৮২ রান।
প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫৯ রানে অলআউট করার পর ভারত বড় লিড নেওয়ার ভালো অবস্থানে ছিল। ৪ উইকেটে ১৫৪ রানও উঠে গিয়েছিল; কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা দ্রুত ভারতের লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের ছেঁটে ফেলেন। ভারত ১৮ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে লিড নিতে পারে মাত্র ৩০ রান, যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটসম্যানেরা প্রথম ইনিংসের চেয়েও খারাপ করে ৩৫ ওভারে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যান, সর্বোচ্চ ৩১ ওয়াশিংটন সুন্দরের।
ভারত ‘এ’-এর হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি ধ্রুব জুরেল দুই ইনিংসে করতে পেরেছেন ১৪ ও ১৩ রান। আর পন্ত দুই ইনিংসেই আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ২৭ ও ২ রানে আউট হন।
গিলের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা পন্ত তৃতীয় দিনে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দিন শুরু করেন দুই বাঁহাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজাকে দিয়ে। যা দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বা বাভুমা ও করবিন বশকে কিছুটা সহজেই রান তোলার পথ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত বাভুমা অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে, বশের (২৫ রান) সঙ্গে তাঁর জুটিতে আসে ৪৪ রান। মূলত এই জুটিই ৭৫ রানে ৬ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেড় শ পার করাতে মূল ভূমিকা রাখে। নতুন বলে বা সকালের আর্দ্রতায় ভারতের হয়ে যিনি সবচেয়ে ভালো বোলিং করেন, সেই বুমরাকে আক্রমণে আনা হয় দিনের ১৩তম ওভারে। আর ওই ওভারেই বশকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন বুমরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ২৭ রানে ৫ উইকেট নেওয়া বুমরা প্রথম দিনই সবচেয়ে বেশি অসমান বাউন্স পেয়েছিলেন, অথচ তাকেই তৃতীয় দিনের শুরুতে কাজে লাগানো হয়নি।
৪. চার স্পিনার খেলানোভারতের দল নির্বাচন নিয়েও বেশ সমালোচনা হয়েছে। ভারত খেলিয়েছে চার স্পিনার—জাদেজা, অক্ষর, কুলদীপ যাদব ও ওয়াশিংটন সুন্দর, সঙ্গে দুই পেসার বুমরা ও সিরাজ। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পুনে টেস্টে ১১ উইকেট নেওয়া সুন্দরকে এই ম্যাচে মাত্র এক ওভার বোলিং করানো হয়েছে। সুন্দরকে ব্যাটিং করানো হয়েছে তিন নম্বরে, বাদ দেওয়া হয়েছে ইংল্যান্ড সফর থেকে তিনে খেলা সাই সুদর্শনকে। সুন্দর নিচের দিকের ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরোয়ায় দারুণ কার্যকারিতা দেখালেও তাঁকে তিন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তুলে আনা অনেকেরই যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। বিশেষ করে দলে যখন সুদর্শন ও দেবদূত পাডিক্কালের মতো খেলোয়াড় বসেই রয়েছেন। স্পিনার হিসেবে কাজে লাগানো যাবে ভাবনা থেকেই হয়তো সুন্দরকে একাদশে বিবেচনা করা হয়েছে, সেটি আসলে কাজে লাগেনি।
৫. গিলের চোটে ধাক্কাশুভমান গিল ভারতের প্রথম ইনিংসে মাত্র তিন বল খেলে ঘাড়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। সাইমন হারমারকে সুইপ করে বাউন্ডারি মারার পরই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় চেপে ধরে মাঠ ছাড়েন, পরে তাকে কলকাতার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভারত যখন দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া করছে, তখন তিনি হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত ভারতকে ৯ উইকেটেই থামতে হয়েছে। গিল থাকলে লো-স্কোরিং ম্যাচে ভিন্ন কিছু হলেও হতে পারত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব য টসম য ন প রথম ইন দ ই ইন স ন দর উইক ট কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
৯৩ রানে অলআউট ভারত, ১৫ বছর পর ভারতের মাটিতে দ. আফ্রিকার টেস্ট জয়
টেম্বা বাভুমার সাহস আছে বলতে হবে। কলকাতা টেস্টে জিততে ভারতের তখন দরকার ৪৭ রান। হাতে ৩ উইকেট। খাতা কলমে ৩ উইকেট থাকলেও আসলে উইকেট ছিল ২টি। কারণ চোটের কারণে শুবমান গিল হাসপাতালে। উইকেটে অক্ষর প্যাটেল ও যশপ্রীত বুমরা। মানে অক্ষরের ওপরই সব ভরসা। এমন সময়ে বাভুমা বল তুলে দিলেন কেশব মহারাজের হাতে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে একজন বাঁহাতি স্পিনারকে আনলেন।
অক্ষর এটাকে দেখলেন বড় সুযোগ হিসেবে। প্রথম চার বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে নিলেন ১৬ রান। বাভুমার সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ধারাভাষ্যকক্ষে প্রশ্ন। এমন সময়ে ওভারের পঞ্চম বলে মহারাজকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাভুমার হাতেই ক্যাচ দেন অক্ষর। ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ সিরাজকেও আউট করে দেন মহারাজ। তাতে ভারতকে ৯৩ রানে গুটিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ৩০ রানে। ১৫ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিস্তারিত আসছে...