ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা: চলাচলে বিধি প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা চেয়ে রিট
Published: 4th, May 2025 GMT
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিধিমালা বা নীতিমালা প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে ওই প্রক্রিয়া শুরু করতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ রোববার রিট করা হয়।
রিটে ঢাকা শহরে কতগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, বিদ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থা; এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা আছে কি না এবং নীতিমালার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার নৈরাজ্য: নিরাপত্তা–শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস নয়’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। একই দিন প্রথম আলো অনলাইনের ইংরেজি সংস্করণে তা প্রকাশিত হয়। সেটি যুক্ত করে তিন আইনজীবী ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে প্রয়োজনীয় বিধিমালা বা নীতিমালা প্রণয়নের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন। তিন আইনজীবী হলেন মো.
বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী বিবেক চন্দ্র। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। দুর্বল গতি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং অতিরিক্ত গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সনদও নেই।
বিবেক চন্দ্র আরও বলেন, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ১২৪ ধারা অনুসারে জনস্বার্থে নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার যেকোনো আদেশ বা নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। অটোরিকশার কারণে সড়কে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, দৃশ্যত তা রোধে কোনো বিধিমালা বা নীতিমালা নেই। যে কারণে রিটটি করা হয়।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, জননিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় ঢাকা শহরে কতগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে এবং বিদ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ বিস্তারিত তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, আইনসচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ আটজনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আইনজ ব ব যবস থ প রণয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ৬ মে
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত দুটি মামলায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিদেরকে হাইকোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ৬ মে তারিখ নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি তিন সদস্যের বেঞ্চে আজ দুটি লিভ টু আপিল পিটিশনের শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিল। পরে আদালত সেগুলোর শুনানির জন্য ৬ মে তারিখ ধার্য করেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ, যিনি আজ বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না, পিটিশনগুলোর শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তি করবেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১ ডিসেম্বর এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সে রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশো মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন: আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ করে রাষ্ট্রপক্ষ।