জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সর্বশেষ রোববার গাজীপুরে আক্রান্ত হয়েছেন।  গত বছরের নভেম্বরেও চট্টগ্রামে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। চব্বিশে অভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতা বারবার কেন আক্রমণের নিশানা হচ্ছেন? 


হাসনাত আবদুল্লাহর প্রকাশ্য শত্রু কারা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরও সোচ্চার আছেন। তবে এই প্রকাশ্য শত্রুর পাশাপাশি অপ্রকাশ্য শত্রু তৈরি হওয়াও বিচিত্র নয়। স্বাভাবিকভাবেই হাসনাত আবদুল্লাহ যখন হামলার শিকার হন, তা অবশ্যই উদ্বেগজনক। সেখানেই প্রশ্ন এসে যায়, তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার কেন উদাসীন?


বস্তুত যে কারও উপর এ ধরণের হামলা নিন্দার্হ। এ ধরণের অঘটন ঘটতে থাকলে তা বোঝায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। নাগরিক হিসেবে চলাচলের যে স্বাধীনতা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের, সেখানকার ব্যর্থতা অবশ্যই খুঁজে দেখতে হবে। তবে হাসনাতের ওপর বারবার হামলা গুরুতর ঘটনা। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারা এই ধরণের হামলার সঙ্গে যুক্ত তাদের ধরতে না পারলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটা অস্বাভাবিক নয়।


সেজন্যই হাসনাত আবদুল্লাহর নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। ব্যক্তি হিসেবে যদি আমরা দেখি, চব্বিশের অভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু হাসনাতকে সেদিক থেকে ব্যতিক্রমই আমরা দেখছি। তিনি লড়াইকে ব্রত হিসেবেই নিয়েছেন, কারও কারও মতো নিজের পকেট ভারীর উপলক্ষ হিসেবে নয়। তার চরিত্রের দৃঢ়তা তার সংগ্রামের পথে নিশ্চয়ই এগিয়ে রাখবে।


হাসনাত আবদুল্লাহ লড়াইয়ের এক কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন। অতীতেও সেজন্য তারা নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়েছেন। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখবেন বলেই বিশ্বাস। তাদেরকে এ ধরণের হামলার মাধ্যমে নিবৃত করা সহজ নয়। বরং এ ধরণের হামলার কাপুরুষতারই লক্ষণ। গাজীপুরের ঘটনায় পুলিশ বলেছে, ৪/৫টি মোটর সাইকেল এসে হাসনাত আবদুল্লাহর বহন করা গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়ি ভেদ করে তিনি নিজেও আহত হন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করেন।


বলাবাহুল্য, এ ধরণের হামলা কেবল হাসনাত আবদুল্লাহর ওপরই হচ্ছে না, সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, ৫ আগস্টের পর গত ৯ মাসে কমপক্ষে ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরে। 

পরিস্থিতি অনুযায়ী, হাসনাত আবদুল্লাহর নিরাপত্তায় দৃষ্টি দিতেই হবে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও সাবধান হবেন বলে প্রত্যাশা। তিনি এখনও ছাত্র জনতার ভরসার প্রতীক। মনে রাখতে হবে, তার সংগ্রামের পথ অনেক দীর্ঘ। তিনি যতদিন তার লড়াই চালিয়ে যাবেন, মানুষের স্বপ্ন তত বিস্তৃত হবে। তবে হামলাকারীদেরও জানা উচিত, কোনো একজনকে থামিয়ে সংগ্রামের পথ রুদ্ধ করা যায় না। 

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিবিসির বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কেন ভারতকে বিব্রত করবে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‍মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারতকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিবিসির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স রিপোর্টার অ্যানবারাসান ইথিরাজান। 

তিনি লিখেছেন, এখন আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে ফেরানোর জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ পাঠাবে। ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি ভারতে বসবাস করছেন।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার রায় নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া

বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের, প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: জামায়াত

ঢাকার আগের দাবিগুলোর জবাব ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে।

তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মনে হয় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা সৎউদ্দেশ্যে করা হয়নি, তাহলে ভারত সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ভারতে তাকে ফেরত না পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির সর্বদলীয় রাজনৈতিক পর্যায়েও এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে।

দিল্লির কাছে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী নয়, এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য।

অ্যানবারাসান ইথিরাজান লিখেছেন, ভারত যেন টানটান করে বাঁধা দড়ির ওপর হাঁটছে; কারণ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করলে তা কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপ করতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ