যে ঘটনা শিক্ষাজীবনে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে
Published: 10th, May 2025 GMT
কয়েক বছর আগেও কেউ যদি আমাকে বলত যে আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাব, সেখানে এক বছর থাকব এবং এরপর আইবি (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট) কারিকুলামে পড়াশোনা করব, তাহলে আমি তা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করতাম না। ২০২৩ সালের আগে আমি মনিপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। সেখানে আমি ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি ভার্সনে পড়েছি। তখন মাত্রই এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি; ওই সময় জীবনের মানেই যেন ছিল শুধু পড়াশোনা আর পরীক্ষার ধারাবাহিক চক্র। আমার কেবল মনে হতো, এই মুখস্থ করা ছাড়া কী শিক্ষা গ্রহণের আর কোনো উপায় নেই!
এই কৌতূহল থেকেই আমি কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি (ইয়েস) প্রোগ্রামে আবেদন করতে উৎসাহী হই। এটি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটি অনন্য স্কলারশিপের সুযোগ। যদিও আমি এর আগে কখনোই দেশের বাইরে যাইনি। এরপরও সাহস করে আবেদন করে ফেলি। আবেদনপ্রক্রিয়া বেশ জটিল ছিল, আর আমি এতটা নিশ্চিতও ছিলাম না যে সুযোগটি আমি পাব। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর, হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে আমাকে বাছাই করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মোট ১৫ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়।
এ ঘটনা আমার জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে আমি অভূতপূর্ব সব অভিজ্ঞতা অর্জন করি। কখনো আমি কল্পনাও করিনি যে আমার এমন সব অভিজ্ঞতা হবে। সেই সময়গুলোতে আমি নানা রকম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই—নতুন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া, জিজ্ঞাসা ও জানাশোনার মনোভাব তৈরি হওয়া এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করি।
ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল পরিদর্শন, ‘সিভিক এডুকেশন উইক’ চলাকালে এর কমিউনিটি ক্লিনআপে অংশ নেওয়া; সঙ্গে ওহাইওতে বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির মিউজিক ক্লাস—আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে কানায় কানায় পূর্ণ করে তোলে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমি বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাই এবং বুঝতে পারি, যেকোনো জায়গা থেকেই এলে শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। আর তা ক্লাসরুম থেকে শুরু করে নীতিপ্রণয়ন করার জায়গা ‘সিনেট চেম্বার’ পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫২০২৪ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। এ সময় আমার মনে হতে থাকে, আমি হয়তো আর কখনোই আমার পুরোনো কারিকুলামে ফিরে যেতে পারব না। আমি নতুন সুযোগ খুঁজতে শুরু করি আর শেষ পর্যন্ত একটি নতুন সুযোগ পেয়েও যাই। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকায় (আইএসডি) স্কলারশিপের আবেদন করার সুযোগ পাই আমি। সেখানে আইবি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামটিকে আমার নিজের জন্য একদম যথার্থ মনে হয়; কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছিল যে একাডেমিক শিক্ষা ও বাস্তব বিশ্বের সমন্বয় করতে পারবে, এমন একটি কারিকুলামই আমার জন্য উপযুক্ত হবে। সেখানে আমার শিক্ষক ও সহপাঠীরা শুরু থেকেই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। সবার সহযোগিতায় পড়াশোনা শুরু করি আমি। আর স্কুলটিতে ৩০টি দেশের শিক্ষার্থী থাকায় প্রতিদিন নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই আমি।
বর্তমানে, আমি আইএসডিতে আইবি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের গ্রেড ১১-এর শিক্ষার্থী। এখানে আমি রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, বাংলা ও ইংরেজিকে বিষয় হিসেবে বাছাই করি। তবে এর মধ্যে অর্থনীতি ও ইংরেজি আমার পছন্দের বিষয়, আমার আগের কারিকুলামে আমি এই দুটি বিষয়ে খুবই সামান্য জানার সুযোগ পেয়েছি। এর পাশাপাশি, আইবির এক্সটেনডেড এসে (ইই) আমাকে স্বাধীনভাবে গবেষণায় দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে; আর সিএএস (ক্রিয়েটিভিটি, অ্যাকটিভিটি, সার্ভিস) আমাকে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করতে উত্সাহিত করছে। এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি আসলে যা করছি এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আইবি কারিকুলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও আমাদের প্রস্তুত করে তুলছে, যা অন্য কারিকুলাম করছে না।
এখন বুঝতে পারছি, মনিপুর হাইস্কুল থেকে শুরু করে ইয়েস প্রোগ্রাম, আর এখন এই আইবি কারিকুলাম, সবকিছুই আজকের আমাকে কীভাবে গড়ে তুলেছে! একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এই আমি ওহাইও ও আইএসডি দুই জায়গা থেকেই স্কলারশিপ পেয়েছি। এই সুযোগ না পেলে হয়তো আমি জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা থেকেই বঞ্চিত থাকতাম। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে অর্থ কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
যেসব শিক্ষার্থী এই লেখা পড়ছেন, বিশেষ করে, ন্যাশনাল কারিকুলামের যেসব শিক্ষার্থীর চোখে এই লেখা পড়ছে, তাঁদের জানাতে চাই, আপনি কোত্থেকে আসছেন, তা কখনোই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে না। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না, নতুন কিছু করুন; আইবি কারিকুলাম বা কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জের মতো প্রোগ্রামগুলোয় আবেদন করুন। প্রথম দিকে ভয় পেতে পারেন। তবে এগুলোই সেই পথ, যা আপনাকে ভবিষ্যতে সফলতা ও স্বপ্নপূরণের দিকে নিয়ে যাবে।
আর মনে রাখবেন, এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি; আমি নিজেই এর প্রমাণ।
*লেখক: হুমায়রা আফিয়া অর্থি, ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম (ডিপি) শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি)
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শুভ জন্মাষ্টমী আজ
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ—এই বিশ্বাস পোষণ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আজ বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।