কয়েক বছর আগেও কেউ যদি আমাকে বলত যে আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাব, সেখানে এক বছর থাকব এবং এরপর আইবি (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট) কারিকুলামে পড়াশোনা করব, তাহলে আমি তা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করতাম না। ২০২৩ সালের আগে আমি মনিপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। সেখানে আমি ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি ভার্সনে পড়েছি। তখন মাত্রই এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি; ওই সময় জীবনের মানেই যেন ছিল শুধু পড়াশোনা আর পরীক্ষার ধারাবাহিক চক্র। আমার কেবল মনে হতো, এই মুখস্থ করা ছাড়া কী শিক্ষা গ্রহণের আর কোনো উপায় নেই!

এই কৌতূহল থেকেই আমি কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি (ইয়েস) প্রোগ্রামে আবেদন করতে উৎসাহী হই। এটি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটি অনন্য স্কলারশিপের সুযোগ। যদিও আমি এর আগে কখনোই দেশের বাইরে যাইনি। এরপরও সাহস করে আবেদন করে ফেলি। আবেদনপ্রক্রিয়া বেশ জটিল ছিল, আর আমি এতটা নিশ্চিতও ছিলাম না যে সুযোগটি আমি পাব। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর, হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে আমাকে বাছাই করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মোট ১৫ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়।

এ ঘটনা আমার জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে আমি অভূতপূর্ব সব অভিজ্ঞতা অর্জন করি। কখনো আমি কল্পনাও করিনি যে আমার এমন সব অভিজ্ঞতা হবে। সেই সময়গুলোতে আমি নানা রকম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই—নতুন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া, জিজ্ঞাসা ও জানাশোনার মনোভাব তৈরি হওয়া এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করি।

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল পরিদর্শন, ‘সিভিক এডুকেশন উইক’ চলাকালে এর কমিউনিটি ক্লিনআপে অংশ নেওয়া; সঙ্গে ওহাইওতে বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির মিউজিক ক্লাস—আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে কানায় কানায় পূর্ণ করে তোলে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই আমি বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাই এবং বুঝতে পারি, যেকোনো জায়গা থেকেই এলে শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। আর তা ক্লাসরুম থেকে শুরু করে নীতিপ্রণয়ন করার জায়গা ‘সিনেট চেম্বার’ পর্যন্ত হতে পারে।

আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫

২০২৪ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। এ সময় আমার মনে হতে থাকে, আমি হয়তো আর কখনোই আমার পুরোনো কারিকুলামে ফিরে যেতে পারব না। আমি নতুন সুযোগ খুঁজতে শুরু করি আর শেষ পর্যন্ত একটি নতুন সুযোগ পেয়েও যাই। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকায় (আইএসডি) স্কলারশিপের আবেদন করার সুযোগ পাই আমি। সেখানে আইবি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামটিকে আমার নিজের জন্য একদম যথার্থ মনে হয়; কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছিল যে একাডেমিক শিক্ষা ও বাস্তব বিশ্বের সমন্বয় করতে পারবে, এমন একটি কারিকুলামই আমার জন্য উপযুক্ত হবে। সেখানে আমার শিক্ষক ও সহপাঠীরা শুরু থেকেই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। সবার সহযোগিতায় পড়াশোনা শুরু করি আমি। আর স্কুলটিতে ৩০টি দেশের শিক্ষার্থী থাকায় প্রতিদিন নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই আমি।

বর্তমানে, আমি আইএসডিতে আইবি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের গ্রেড ১১-এর শিক্ষার্থী। এখানে আমি রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, বাংলা ও ইংরেজিকে বিষয় হিসেবে বাছাই করি। তবে এর মধ্যে অর্থনীতি ও ইংরেজি আমার পছন্দের বিষয়, আমার আগের কারিকুলামে আমি এই দুটি বিষয়ে খুবই সামান্য জানার সুযোগ পেয়েছি। এর পাশাপাশি, আইবির এক্সটেনডেড এসে (ইই) আমাকে স্বাধীনভাবে গবেষণায় দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে; আর সিএএস (ক্রিয়েটিভিটি, অ্যাকটিভিটি, সার্ভিস) আমাকে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করতে উত্সাহিত করছে। এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি আসলে যা করছি এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আইবি কারিকুলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও আমাদের প্রস্তুত করে তুলছে, যা অন্য কারিকুলাম করছে না।

এখন বুঝতে পারছি, মনিপুর হাইস্কুল থেকে শুরু করে ইয়েস প্রোগ্রাম, আর এখন এই আইবি কারিকুলাম, সবকিছুই আজকের আমাকে কীভাবে গড়ে তুলেছে! একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এই আমি ওহাইও ও আইএসডি দুই জায়গা থেকেই স্কলারশিপ পেয়েছি। এই সুযোগ না পেলে হয়তো আমি জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা থেকেই বঞ্চিত থাকতাম। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে অর্থ কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

যেসব শিক্ষার্থী এই লেখা পড়ছেন, বিশেষ করে, ন্যাশনাল কারিকুলামের যেসব শিক্ষার্থীর চোখে এই লেখা পড়ছে, তাঁদের জানাতে চাই, আপনি কোত্থেকে আসছেন, তা কখনোই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে না। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না, নতুন কিছু করুন; আইবি কারিকুলাম বা কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জের মতো প্রোগ্রামগুলোয় আবেদন করুন। প্রথম দিকে ভয় পেতে পারেন। তবে এগুলোই সেই পথ, যা আপনাকে ভবিষ্যতে সফলতা ও স্বপ্নপূরণের দিকে নিয়ে যাবে।

আর মনে রাখবেন, এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি; আমি নিজেই এর প্রমাণ।

*লেখক: হুমায়রা আফিয়া অর্থি, ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম (ডিপি) শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য কখন ই

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ভেজাল বিদেশি প্রসাধনী বিক্রি, গ্রেপ্তার ১

বিদেশি প্রসাধনীর নামে পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজারে নকল এবং ভেজাল প্রসাধনী অনলাইনে পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের পুরাতন ভাড়ালিয়ায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৯ ধরনের নকল ও ভেজাল প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন খবরের ভিত্তিতে সিআইডির একটি বিশেষ দল ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী কারখানায় পণ্য উৎপাদন ও মোড়কজাত করার সময় মো. হৃদয় হোসেন (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোট ৯ ধরনের ১ হাজার ৭০ প্যাকেট বিভিন্ন রকমের নকল ও ভেজাল প্রসাধনী এবং ২০০টি খালি মোড়ক জব্দ করা হয়। তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকার পুরাতন ভাড়ালিয়ায়। হৃদয়ের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ভেজাল প্রসাধনী ও মোড়ক উদ্ধার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে এসব বিদেশি প্রসাধনী উৎপাদিত হতো, এ বিষয়ে গ্রেপ্তার হৃদয়ের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। উৎপাদিত ভেজাল প্রসাধনী ঢাকার লালবাগ ও চকবাজারের বিভিন্ন অসাধু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করত প্রতারক চক্রটি। এমনকি অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সেই ভেজাল পণ্য সস্তায় কিনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখধাঁধানো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতেন।

উদ্ধার ভেজাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে ১৪০টি কেম কট থাই, ১৪০টি এল অ্যাভিনিউ হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ১৭০টি অর্গানিক হেয়ারফর অয়েল, ১৪০টি বডি হোয়াইটনিং ক্রিম, ১৪০টি কেম বো হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ১৪০টি অজুফি হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ৬০টি হোয়াইটনিং বডি লোশন, ৫০টি হোয়াইটনিং বডি লোশন, ৯০টি কোরিয়ান ফেয়ার লুক পারমান্যান্ট হোয়াইটনিং বডি লোশন। এ ছাড়া ২০০টি নিউ ফ্রেশ অ্যান্ড হোয়াইট, স্কিন বডি লোশনের মোড়ক।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় হোসেন জানান, এসব প্রসাধনী বাংলাদেশে উৎপাদন বা আমদানি হয় না। চক্রের অন্য সদস্যরা বিদেশের লাগেজ পার্টির মাধ্যমে স্যাম্পল এনে তা কপি করেন এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করেন। তাঁদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব প্রসাধনী তৈরি করে তিনি লালবাগ ও চকবাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতেন। পরে তাঁরা বিদেশি প্রসাধনী বলে স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া অনেক গ্রাহক তাঁর কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন।

প্রতারক চক্রের সহযোগীদের শনাক্ত করে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ