বাংলাদেশপন্থী আর ফ্যাসিবাদপন্থী, দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত: হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 10th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট দলের নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত—বাংলাদেশপন্থী আর ফ্যাসিবাদপন্থী। যারা আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চায়, তারা বাংলাদেশপন্থী আর যারা চায় না, তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি।
আজ বেলা তিনটার পর থেকে শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত শুরু হয়েছে। সাড়ে তিনটা থেকে শাহবাগ মোড়ের ডিজিটাল স্ক্রিনের নিচে সিঁড়ির ওপর অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সোয়া তিনটার পর বক্তব্য দেন গণমায়েতের ডাক দেওয়া এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ঐক্য বিনষ্টের জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলন নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়, এটা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাস্তায় অবস্থান করার কথা উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আমি বলতে চাই, কোনো ষড়যন্ত্রে বা চাপে যদি আমার মুখ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে আমি যদি কোনো ঘোষণা নাও দিই, মনে রাখবেন আপনাদের মঞ্জিলে মকসুদ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।’
২০১৩ সালে এই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এখান থেকে ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনির শেষ পেরেকটা মারব। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে: মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘বিএনপি আমাদের সঙ্গে বসেনি। তারা তাদের মতো প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মান্না। আলোচনা সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি এবার জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাবে, নাকি সমমনাদের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বেশ কিছু আসনে তারা এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। জোট বা সমঝোতা যেটাই হোক, সমমনা দলগুলোকে কিছু আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়ের আগে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। তবে সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই বলে তিনি জোরের সঙ্গে বলেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, সময়টা খুব ভালো নয়, বেশ জটিল। বেগম খালেদা জিয়া অসাধারণ জনপ্রিয় নেত্রী। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করছেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা যদি এমনই থাকে, বিএনপি আদৌ নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি আপনাদেরই জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কি মনে করেন নির্বাচন হবে? কিন্তু নির্বাচন ছাড়া কি কোনো বিকল্প আছে? নেই। তাহলে নির্বাচন হতেই হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মান্না। তাঁর ভাষায়, এই সরকার ছলচাতুরী করে আবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সে সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহলও এখন আর আগের মতো সরকারের পাশে নেই।
আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, আজকে তার প্রতিক্রিয়ায় নিজস্ব ধর্মীয় বয়ান দিয়ে ধর্মের নামে কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হোক, তা আমরা দেখতে চায় না। বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে একটা গণতান্ত্রিক পথে চলবে।’
দেশের এ পরিস্থিতিতে দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া সমাধান হবে না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। বিএনপির সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা যা–ই হোক, আমাদের নিজেদের মত, নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়িয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বেশির ভাগ দলের মতামত উপেক্ষা করে আরপিও সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ, বিশেষ কোনো দলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারও এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেনি। সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকা দরকার। তা না হলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং দেশ ও দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হবে।
আজকের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। আরও বক্তব্য দেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান প্রমুখ।