ঝিনাইদহে ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সড়কের দুই ধারের জঙ্গল পরিষ্কারে নেমেছে পুলিশ
Published: 21st, November 2025 GMT
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের মহেশপুর অংশে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে ছিনতাইকারীরা তৎপরতা চালাচ্ছিল। সড়কের ধারে ঘন জঙ্গল থাকায় টহল পুলিশও অনেক সময় ছিনতাই ঠেকাতে পারছিল না। অন্ধকার নামলেই অপরাধীরা সড়কে রশি ফেলে বা মোটরসাইকেল-গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই করত। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার পুলিশের উদ্যোগে শুরু হয়েছে সড়কের দুই ধারের জঙ্গল পরিষ্কার কার্যক্রম। টানা তিন দিন ধরে চলছে এ অভিযান।
পুলিশ জানায়, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি জঙ্গলের কারণে ওই সড়কে দুর্ঘটনার ঘটনাও বেড়েছিল। বিশেষ করে শীতকালে ঘন কুয়াশায় জঙ্গলের মধ্য থেকে কিছুই দেখা যায় না। সড়কের বাঁক বেশি হওয়ায় সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ত। জঙ্গল পরিষ্কার হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছে পুলিশ।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের জগনাথপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা খুবই নির্জন। এখানে বেশ কয়েকটি বাঁক আছে। দূরের কিছু সেভাবে দেখা যায় না। তিনি জানান, ওই দুই কিলোমিটারের পাশাপাশি বারোমাসিয়া সেতু থেকে বকুন্ডিয়া পর্যন্ত এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। বড় গাছ ও ঝোপঝাড়ের কারণে রাস্তার নিচের অংশ তারা ঠিকমতো দেখতে পান না। টহল পুলিশ এক জায়গা থেকে সরে গেলে অন্য জায়গায় ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কখনো মোটরসাইকেল আরোহী, কখনো বড় গাড়ি থামিয়েও ছিনতাই করা হচ্ছে। পথচারীরাও প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই জঙ্গল পরিষ্কার ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি জঙ্গলের কারণে ওই স্থানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশায় সামনে থেকে আসা গাড়ির আলো খুব দূর যায় না। বাঁকও বেশি, তাই দুর্ঘটনা বাড়ছিল।
এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়কের দুই পাশের জঙ্গল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিন দিন ধরে জঙ্গল কাটার কাজ চলছে। ওসি বলেন, রাস্তার পাশ পরিষ্কার থাকলে পথচারীরা স্বস্তিতে চলতে পারবে। ছিনতাইকারীদের লুকিয়ে থাকার জায়গা না থাকলে ছিনতাই কমবে। সড়ক দুর্ঘটনাও কিছুটা কমবে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গল পরিষ্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজ তদারকি করছিলেন মহেশপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-আমিন। তিনি বলেন, সড়কের দুই প্রান্তে ১৮ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক অংশ পরিষ্কার হয়েছে। বাকি অংশের কাজও চলমান। দুই পাশের সব জঙ্গলই পরিষ্কার করা হবে।
পথচারীরাও পুলিশের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। খালিশপুরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, এই জঙ্গলের কারণে ওই রাস্তায় চলাচল করতে খুব ভয় পেতেন। পরিষ্কার হলে আর সেই ভয় থাকবে না। ইজিবাইকচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, সন্ধ্যা হলেই ভয়ে ওই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যেতে পারতেন না। পুলিশের এই উদ্যোগে এখন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবেন বলে তাঁর আশা।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গল পরিষ্কার করলে সেটা সবার জন্য ভালো। বর্ষা মৌসুমে যে জঙ্গল তৈরি হয়, সেটা পরিষ্কার করলে কোনো আপত্তি নেই। তবে পরিষ্কারের নামে যেন গাছ কাটা না হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ষ ক র ক সড়ক র দ ই দ র ঘটন উদ য গ ছ নত ই
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হলভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত অন্তত ৪
ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ভবন থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত চারজন শিক্ষার্থী।
সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটিকে মাঝারি মাত্রার বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের চারতলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে তানজীর হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই হলের আরও দুজন শিক্ষার্থী ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী লাফ দিয়ে আহত হয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া কবি জসিম উদ্দীন হল, সূর্যসেন হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ায় খবর পাওয়ায় গেছে।
ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। মহসিন হলসহ কয়েকটি হলে এমন ঘটনা ঘটেছে।
মহসিন হলের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লিখেন, তিনি শুয়ে ছিলেন। ভূমিকম্প এত সময় ধরে হওয়ায় তাঁর হাত-পা কাজ করছিল না। দিশেহারা হয়ে ছাদে চলে যান। কয়েকজনকে তিনতলা, চারতলা থেকে লাফিয়ে পরতে দেখেছেন, আহত হতে দেখেছেন। কয়েকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী কারীব চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, বড় ধরনের কোনো ট্র্যাজেডি না হলে এই প্রশাসনের টনক নড়বে না। প্রাণের বিনিময় ছাড়া কোনো উদ্যোগ তারা নেয় না। শিক্ষার্থীদের ভাঙা বিল্ডিংয়ে রেখে তারা নতুন বিল্ডিংয়ে আরামে ঘুমায়। তারপর জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির মতো শিক্ষার্থীদের জীবন যাবে। আর তারা শিক্ষকদের নিয়ে একটা শোক দিবস পালন করবে।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ ফেসবুকে লিখেছেন, আজকের ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের কিছু ভবনে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ২টি হলে দেয়ালের ইট ভেঙে কিছু কিছু টুকরো অংশ ভেঙে পড়েছে। এই সব জীর্ণ দেয়ালের অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা ভীত হয়ে কেউ কেউ লাফ দিয়ে বা দ্রুত বের হতে গিয়ে আহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ছাত্রী হলে কিছু বোনেরা সেন্সলেসও হয়েছে।