রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাদের নামে চাঁদাবাজি, জমি দখল, আওয়ামী লীগ নেতাদের পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনেছেন দলটির একাংশের নেতারা। রোববার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু। তিনি জানান, বিগত সব আন্দোলন-সংগ্রামে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এ কারণে তারা বিভিন্ন সময় জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। রাতের পর রাত বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন দিনের পর দিন।  

সাইদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে চাঁদাবাজি, হত্যা ও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা সরাসরি হামলায় জড়িত ছিল, তাদের রাজশাহী মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতা পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দলীয় পদ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অর্থের বিনিমিয়ে থানা ও ওয়ার্ডে পদ দিচ্ছেন। এর উদাহরণ হচ্ছে– রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ, মাহমুদল হক রুবেল, সাবেক জাসদ নেতা হারুনুর রশিদ, সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, একই কমিটির সাবেক সদস্য বদরুদ্দোজা বদর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মতাদর্শ যেমন জাসদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। 

অভিযোগে বলা হয়, মিজানুর রহমান মিজান ও আমিনুল ইসলাম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচনে সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোসহ দলীয় নেতাদের মতো ভূমিকা পালন করেছেন। 

বিগত সরকারের আমলে ত্যাগীরা যখন হামলা মামলায় জর্জরিত তখন বর্তমান মহানগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতেন। তাদের নামে সে সময়ে কোনো মামলা হয়নি। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং যোগসাজশ করে চলতেন। 

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ব্রিটিশ কাউন্সিল দখল করে বসে আছেন। অথচ এটা নিয়ে মামলা চলমান। বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি মোটর মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তাদের নেতৃত্বে চলছে খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। খুনিদের নামে মামলা হলেও পুলিশ তাদের নির্দেশে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করা হয়। 

সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলুর বাড়িতে গানপাউডার দিয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ পারভেজ পিন্টুসহ অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও দল থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং তাদের আহ্বায়ক থেকে সভাপতি, সদস্য সচিব থেকে সাধারণ সম্পাদক করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দলকে বাঁচাতে বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক কমিটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাজপাড়া থানার সাবেক সভাপতি শওকত আলী, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনসার আলী, শাহমখদুম থানার সাবেক সভাপতি মাসুদ, বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন দিলদার, শাহমখদুম থানার সাবেক সধারণ আব্দুল মতিন, রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খাজদার আলী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট ও মহানগর যুবদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন বাবলু। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান সমকালকে বলেন, তারেক রহমান নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন, আমরা এই কমিটির পক্ষে কাজ করছি। এতে তাদের গাত্রদাহ। আমি সবসময় বিএনপির পক্ষে রাজপথে থেকে কাজ করেছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছি। ১১টি মামলা হয়েছিল। ক্রসফায়ার দেওয়ার জন্য পুলিশ আমাকে খুঁজছিল, এ সময় জীবন বাঁচাতে আমি নেপালে পালিয়ে ছিলাম। এরা এখন শতভাগ মিথ্যা অভিযোগ আনছে। 
নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তারা মিথ্যাচার করছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ব এনপ র স ব ক স ম জ ন র রহম ন সরক র র কম ট র সদস য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ