রাজশাহীতে আওয়ামী দোসররা পদ পাচ্ছেন বিএনপিতে
Published: 11th, May 2025 GMT
রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাদের নামে চাঁদাবাজি, জমি দখল, আওয়ামী লীগ নেতাদের পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনেছেন দলটির একাংশের নেতারা। রোববার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু। তিনি জানান, বিগত সব আন্দোলন-সংগ্রামে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এ কারণে তারা বিভিন্ন সময় জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। রাতের পর রাত বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থেকেছেন দিনের পর দিন।
সাইদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে চাঁদাবাজি, হত্যা ও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা সরাসরি হামলায় জড়িত ছিল, তাদের রাজশাহী মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতা পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দলীয় পদ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অর্থের বিনিমিয়ে থানা ও ওয়ার্ডে পদ দিচ্ছেন। এর উদাহরণ হচ্ছে– রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ, মাহমুদল হক রুবেল, সাবেক জাসদ নেতা হারুনুর রশিদ, সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, একই কমিটির সাবেক সদস্য বদরুদ্দোজা বদর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মতাদর্শ যেমন জাসদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, মিজানুর রহমান মিজান ও আমিনুল ইসলাম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচনে সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোসহ দলীয় নেতাদের মতো ভূমিকা পালন করেছেন।
বিগত সরকারের আমলে ত্যাগীরা যখন হামলা মামলায় জর্জরিত তখন বর্তমান মহানগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতেন। তাদের নামে সে সময়ে কোনো মামলা হয়নি। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং যোগসাজশ করে চলতেন।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ব্রিটিশ কাউন্সিল দখল করে বসে আছেন। অথচ এটা নিয়ে মামলা চলমান। বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি মোটর মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তাদের নেতৃত্বে চলছে খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। খুনিদের নামে মামলা হলেও পুলিশ তাদের নির্দেশে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করা হয়।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলুর বাড়িতে গানপাউডার দিয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ পারভেজ পিন্টুসহ অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও দল থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং তাদের আহ্বায়ক থেকে সভাপতি, সদস্য সচিব থেকে সাধারণ সম্পাদক করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দলকে বাঁচাতে বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক কমিটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাজপাড়া থানার সাবেক সভাপতি শওকত আলী, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনসার আলী, শাহমখদুম থানার সাবেক সভাপতি মাসুদ, বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন দিলদার, শাহমখদুম থানার সাবেক সধারণ আব্দুল মতিন, রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খাজদার আলী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট ও মহানগর যুবদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন বাবলু।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান সমকালকে বলেন, তারেক রহমান নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন, আমরা এই কমিটির পক্ষে কাজ করছি। এতে তাদের গাত্রদাহ। আমি সবসময় বিএনপির পক্ষে রাজপথে থেকে কাজ করেছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছি। ১১টি মামলা হয়েছিল। ক্রসফায়ার দেওয়ার জন্য পুলিশ আমাকে খুঁজছিল, এ সময় জীবন বাঁচাতে আমি নেপালে পালিয়ে ছিলাম। এরা এখন শতভাগ মিথ্যা অভিযোগ আনছে।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তারা মিথ্যাচার করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ব এনপ র স ব ক স ম জ ন র রহম ন সরক র র কম ট র সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।
হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মসালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)
৫. অতিরিক্ত দোয়া
ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।
আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:
রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।
ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।
জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)
সালাতুল হাজতের ফজিলতসালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতর্কতানিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫