সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার (সংগঠন) যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না।

গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ খসড়া অনুমোদনের পর রাতেই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে বলা হয়, সত্তার যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যাবে। এ ছাড়া সত্তা বা তার পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা বা মুদ্রণ কিংবা গণমাধ্যম, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, অথবা মিছিল, সভা-সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলন আয়োজন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়া নিষিদ্ধ করা যাবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, ‘সত্তা’ বলতে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, অংশীদারি কারবার, সমবায় সমিতিসহ এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংগঠনকে বোঝায়।

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, সন্ত্রাসী কাজ প্রতিরোধ এবং তাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। এতে সরকার কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে আইনের অধিকতর সংশোধন করা প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় বিষয় যুক্ত করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ অধ্যাদেশ জারির পর এখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

গত শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ব্লক করার উদ্যোগ

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে পরিপত্র জারির পর দলটির ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব ব্লক করতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিপত্র প্রকাশের পর বিটিআরসির মাধ্যমে দলটির ইউটিউব, ফেসবুক ব্লক করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে ওয়েবসাইট বন্ধ করবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

ট্রাইব্যুনাল দলকে শাস্তি দিতে পারবেন

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। শনিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

অধ্যাদেশে বলা হয়, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এ আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তাহলে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার।

আইনে সংগঠন শব্দটির সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীন, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম গতকাল বলেছেন, সংশোধনীর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ। তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে গত জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে। সেই হিসাবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে জুনের মধ্যে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর র ব ভ ক ত কর স গঠন র উপদ ষ ট আইন র আওয় ম ত করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চীন কেন দূরে বসে দেখেছে

কয়েক বছর আগে আমি সাংহাই সফরে গিয়েছিলাম। সেই সফরে গিয়ে চীনের এক শীর্ষ কৌশলবিদকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে বেইজিং সেই যুদ্ধকে কীভাবে দেখবে? তখনো এ ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল প্রবল। আমি ভেবেছিলাম, তিনি বলবেন তেলের দাম বেড়ে কীভাবে চীনের উৎপাদন খাতের ওপর হুমকি তৈরি করবে, সে বিষয়ে।

কিন্তু এর পরিবর্তে তিনি যেটা বললেন, সেটা আমাকে বিস্মিত করেছিল। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি মধ্যপ্রাচ্যে আবারও একটি ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে সেটি চীনের জন্য লাভজনক হবে। কারণ, এ ধরনের যুদ্ধ ‘যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য অবসানের’ সূচনাবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। চীনারা বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যকে ‘সম্রাজ্যের কবরস্থান’ হিসেবে বিবেচনা করে।

বর্তমানে বৈরিতা কিছুটা স্তিমিত হলেও ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কাও রয়েছে। সেটা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইসরায়েলের পক্ষে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হতে পারে। আর চীন যদি ইরানকে (যেমনটা তারা পাকিস্তানকে করেছে) যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাবে।

আরও পড়ুনইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—কে জিতল এই যুদ্ধে২৪ জুন ২০২৫

কিন্তু এখন পর্যন্ত চীন অন্য কোনো দেশে তার সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা বজায় রেখে চলেছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বৈরিতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে এর ভূরাজনৈতিক সুফল চীন ঘরে তুলতে পারে।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে চীন সরকার। বিবৃতিতে চীন বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লক্ষ্য ও নীতির মারাত্মক লঙ্ঘন। এটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’

২২ জুন চীনের দ্য গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ‘যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষকে আরও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে’।

এটাও ঠিক যে মধ্যপ্রাচ্যে চীন তাদের উপস্থিতি ক্রমে বাড়াচ্ছে। মাসখানেক আগে চীনের বিমানবাহিনী মিসরে এক যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়। প্রথমবারের মতো যৌথভাবে আকাশে জ্বালানি ভরার মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়।

এই মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব খাটানোর সক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। একইভাবে চীনও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক দিক থেকে সক্রিয় না হওয়ায় পথে হাঁটছে। এটা এক দিক থেকে আশার কথা। কেননা, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেলে চীনের এই সংযমী অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এক দশক ধরেই চীনের যুদ্ধজাহাজগুলো নিয়মিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে আসছে। গত মার্চে রাশিয়া, ইরান ও চীনের নৌবাহিনীর মধ্যে এক ত্রিপক্ষীয় মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা এখন প্রতিবছরের নিয়মিত আয়োজন।

অবশ্য এই সামরিক মহড়াগুলো ছোট পরিসরে হয়েছে। এই মহড়াকে শক্তি প্রদর্শনের হুমকি হিসেবে দেখা যায় না। সামগ্রিকভাবে চীন তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পররাষ্ট্রনীতিতে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের নীতি নেয়নি।

২০১৯ সালের মাঝামাঝি ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনের নৌবাহিনীকে হরমুজ প্রণালিতে টহল দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সে সময় দেশটির নীতিনির্ধারকেরা সরাসরি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল।

একইভাবে হুতিদের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযানে অংশ নিতে বেইজিং অস্বীকৃতি জানিয়েছে; বরং হুতিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চীন লোহিত সাগরে নিজেদের জাহাজগুলোর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে চেয়েছে।

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েল যেভাবে ধরা খেল২৫ জুন ২০২৫

চীন তার পররাষ্ট্রনীতিতে সামরিক শক্তির বদলে কূটনীতিকে প্রাধান্য দেয়। তবে এটা সত্য যে জিবুতিতে একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে চীনের। তবে জিবুতি এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাপানেরও সামরিক ঘাঁটি আছে। ফলে জিবুতি বৈশ্বিক ক্ষমতা প্রদর্শন বা আঞ্চলিক আগ্রাসন বিস্তারের কেন্দ্র নয়।

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে চীনের অবস্থান ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি চীনের সহানুভূতির এখানে ভূমিকা রেখেছে। তবে চীন শুধু কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। মরক্কো ও ওমানের মতো তুলনামূলক শান্ত দেশগুলোতেও উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছে ২০২৩ সালে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় চীন। এটা পারস্য উপসাগরের ভূকূটনৈতিক রাজনীতিতে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়।

আরও পড়ুনচীন কেন চায় না ইউক্রেন যুদ্ধ থামুক১৩ মে ২০২৫

যাহোক, এ পরিস্থিতি যে যেকোনো সময় খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে, সেটা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা থেকেই স্পষ্ট। এ সময়ে ইরানে চীন গোপনে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে—এমন গুজবও রটে।

আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এমন খবর আসে যে তেহরানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করেছে চীন। ইরানে চীনের সামরিক সহায়তা পৌঁছনোর পথ হতে পারে পাকিস্তান—এমন কল্পনাও কেউ সহজেই করতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন এ বিষয়কে সতর্কতার সঙ্গে নিতে পারে।

এসব জল্পনার মধ্যে আমরা যেন মূল বিষয়টা ভুলে না যায়। সেটা হলো চীনের সঙ্গে ইরানের কোনো সামরিক জোট নেই। মধ্যপ্রাচ্যে দশকের পর দশক ধরে বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চীন ইরানের কাছে বড় কোনো অস্ত্রব্যবস্থা বিক্রি করেনি।

আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্য আর হয়তো ইসরায়েলের ছকে চলবে না২৫ জুন ২০২৫

এটি বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রশংসনীয় সংযমের নজির। ওয়াশিংটনকে অবশ্যই এটাকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত, কেননা, তারা আবারও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে।

এই মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব খাটানোর সক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। একইভাবে চীনও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক দিক থেকে সক্রিয় না হওয়ায় পথে হাঁটছে। এটা এক দিক থেকে আশার কথা। কেননা, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেলে চীনের এই সংযমী অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

সম্ভবত বেইজিং ‘পাহাড়ে বসে বাঘের লড়াই দেখার’ নীতি নিয়েছে।

লাইল গোল্ডস্টিন ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ প্রোগ্রামের এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ