গাজীপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-জয়দেবপুর রোডের পাশে অবস্থিত চান্দনা ডাকঘর এখন স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয়৷ প্রাক্তন বাসন ইউনিয়ন ভবন যেখানে দিন ধরে ডাক সেবা চালু ছিল। সেই ভবনটি এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয় করা হয়েছে। 

এদিকে সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয় বানানোর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

চান্দনা চৌরাস্তার সড়ক ভবনের দেয়াল ঘেঁষে প্রাক্তন বাসন ইউনিয়ন ভবনটি এখন সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। সেটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়৷ তবে সেখানে বছরের পর বছর ধরে চান্দনা ডাকঘর-১৭০২ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

গতকাল সোমবার (১২ মে) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, চান্দনা ডাকঘর যেখানে ছিল সেখানে এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম লেখা। রয়েছে একাধিক ব্যানার ও পোস্টার। মূল ভবনের বাইরে পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডানপাশে একটি কক্ষে সাঁটার লাগানো। সেখানে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়। 

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪-৫ দিন আগে থেকেই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়ের জন্য ভবনটিতে লেখালেখি ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে। কিন্তু এটি সাবেক পৌরসভার ভবন তবে এখন এটির দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সরকারি সম্পত্তিতে দলীয় কার্যালয় হয় এটি তাদের জানা ছিল না। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজনও এটি করার সাহস করেনি। 

গাজীপুর বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুনসুর বলেন, “ওখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয় হয়েছে আমি জানি না। আমি আহ্বায়ক কিন্তু আমারও জানা নেই। কেউ করেছে কিনা সেটিও বলতে পারব না।” 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর যুবদলের এক নেতা বলেন, “সরকারি স্থাপনায় কোন দলীয় কার্যালয় হতে পারে না। কেউ হয়তো দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এটা করেছে।”

চান্দনা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার ফারজানা আক্তার বলেন, “বিএনপির কার্যালয় আপতত নিয়েছে। তারা অফিস করেছে কিছুদিনের জন্য। তারা কীভাবে কার্যালয় করেছে জানি না। আমাদের অফিস ওখানেই আছে, একটু সাইডে আসছি শুধুমাত্র।” 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, “রাজনৈতিক দলের অফিস সরকারি যায়গায় করা যায় না। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি আমাদের যায়গায় কিনা।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দল র ক র য য বদল র র জন য ক দল র ড কঘর এখন স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ

বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূল স্টিল নামে এই কারখানাটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানার ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে সেনা, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন। এর আগে জেলা প্রশাসনই বনের জায়গায় জাহাজাভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুইবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়েছিল। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানাটি স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।

ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানের সময় বলেন, ‘তুলাতলী মৌজায় কারখানাটি যেখানে হয়েছে, সেটি জাহাজভাঙা কারখানার অঞ্চলভুক্ত এলাকা নয়। তুলাতলী মৌজায় সরকারি খাসজমি ও বনাঞ্চল দখল করে এটি গড়ে উঠেছিল। সেটি এখন উচ্ছেদ করা হয়েছে।’

উচ্ছেদের জন্য এক্সকাভেটরের পাশাপাশি অন্তত ৩০ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। উচ্ছেদের সময় সেখানে লোকজনের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয় সীমিত পরিসরে। ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম কারখানার বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে।

এ সময় আবুল কাসেম দাবি করেন, ‘২০২২ সালে সরকারি নীতিমালার আলোকে ইজারা নেওয়া হয়। বর্তমানে যে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে, তা উত্তর সলিমপুর মৌজায় অবস্থিত। তুলাতলী মৌজাতে ছিল না। বিগত সরকারের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাতে ছিল উত্তর সলিমপুর মৌজা। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে একটি মহল আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ অবৈধভাবে ভাঙার বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানান তিনি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে–কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এই ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুইবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে। কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল ঘেরা হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।

বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আকতারের নামে নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘প্রথমে ব্যর্থ পরে “কৌশলে” ইজারা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামে ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জাহাজভাঙা কারখানার কারণে আমাদের অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখন ইয়ার্ড উচ্ছেদ হয়েছে। আমরা আবার বনাঞ্চল করব ওই জায়গায়।’

আরও পড়ুনপ্রথমে ব্যর্থ, পরে ‘কৌশলে’ ইজারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিত্যক্ত ভবনটি এখন মাদকের আখড়া
  • দোকানিদের ভবনে ফেরাতে পদক্ষেপ নিন
  • ডেমরায় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
  • সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ
  • অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘মুক্তি ঐক্যদল’, দলীয় প্রধান এমপি হয়ে আবার বিয়ে করতে চান