‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবির বক্স অফিস ব্যর্থতা আমির খানের জন্য ছিল ভীষণভাবে হতাশাজনক। সেই আঘাত থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবারও নতুন ছবিতে ফিরছেন বলিউড তারকা। তাঁর প্রযোজিত ও অভিনীত ছবি ‘সিতারে জমিন পার’ মুক্তি পাবে আগামী ২০ জুন। ছবিটির ট্রেলার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, আর সেটি ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে ছবিটি বর্জনের আহ্বান।

‘অপারেশন সিঁদুর’ পোস্ট থেকেই বিতর্কের সূচনা
আমির খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর প্রশংসা করে একটি পোস্ট দেয়। সেখানে লেখা হয়, ‘“অপারেশন সিঁদুর”–এর নায়কদের সালাম। আমাদের দেশের সুরক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতা ও নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বকে কুর্নিশ। জয় হিন্দ।’ এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক দানা বাঁধে। নেটিজেনদের একাংশের মতে, এটি আসলে আসন্ন ছবির প্রচারণার একটি চালাকি। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার সময় আমির খান নীরব ছিলেন, সেখানে হঠাৎ এমন দেশাত্মবোধক পোস্টের উদ্দেশ্য কী?

পুরোনো বিতর্কে আগুন
বিতর্ক থেমে নেই এখানেই। নতুন করে ভাইরাল হয়েছে তুরস্কে ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ানের সঙ্গে আমির খানের সাক্ষাতের একটি ভিডিও ক্লিপ। ওই সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনে, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের পাকিস্তানপ্রীতি নিয়ে।

‘সিতারে জমিন পার’ সিনেমার ট্রেলারে আমির খান। এক্স থেকে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র খ ন র ত রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

সময়ক্ষেপণ ও নতুন বিতর্ক কাম্য নয়

আমাদের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আমাদের শাসকেরা এই নীতি মান্য করেননি বলেই বাংলাদেশ বারবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে যে সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা প্রত্যাশিত ছিল, তা তাঁরা কতটা প্রতিপালন করেছেন, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, যার অংশ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে; যার সাফল্যের ওপরই ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো অনেকটা নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আন্তরিক হলেই হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও সমঝোতার মনোভাব পোষণ করতে হবে।

প্রত্যাশা ছিল, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবসের আগেই জাতীয় সনদের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে। দিনটি এ কারণে স্মরণীয় যে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়, যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ ও নারী আসনের ভোটপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকেই গেছে।

বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, নীতি ও আদর্শের ফারাক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। গণতন্ত্র মানে হলো একসঙ্গে চলা। সেখানে কাউকে যেমন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না, তেমনি ‘সালিস মানি, তালগাছ আমার’ মনোভাবও পরিত্যাগ করতে হবে।

বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে, সেসব বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। সবকিছু আবার গোড়া থেকে শুরু করলে জটিলতা আরও বাড়বে। সম্প্রতি কোনো কোনো দল সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা বলেছে।

ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন ও এখনো পরীক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে উভয় কক্ষে এই পদ্ধতি এখনই ব্যবহার না করে উচ্চকক্ষের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে। নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে যদি প্রত্যক্ষ ভোটে নারী সদস্যরা নির্বাচিত হতে পারেন, এখন কেন পারবেন না? কেন তাঁদের দলীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে?

আমরা যদি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, তাহলে বিভেদ ভুলে ঐক্যের ওপরই জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, সমাজের কোনো অংশকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না। নারী-পুরুষ-ধর্ম-জাতিনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মদানকে যদি আমরা অসম্মান না করতে চাই, তাহলে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ