ফাহমিদুল ইসলাম। ইতালির পেশাদার ফুটবল ক্লাব ওলবিয়া ক্যালসিওতে খেলা এই তরুণ আগামী ১০ জুন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য আবারও বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন। ৪ জুন একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে দল। মূল ক্যাম্প শুরু হবে ৩১ মে থেকে। জাতীয় দলের জার্সি এখনও গায়ে না জড়ালেও দেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পরিচিত এই তরুণকে নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
জাতীয় দলের জার্সি এখনও গায়ে না জড়ালেও ইতোমধ্যে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন ইতালিপ্রবাসী ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলাম। ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে গত মার্চে ক্যাম্পে ডাক পেলেও চূড়ান্ত দলে জায়গা হয়নি তাঁর। তখন তাঁকে বাদ দেওয়ায় উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। এবার সুখবর, আসন্ন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য আবারও বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন ফাহমিদুল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তাঁর ক্লাব ওলবিয়া ক্যালসিও, যা ইতালির পেশাদার ফুটবল ক্লাব। ক্লাবটি নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ফাহমিদুলকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ জুন। এর আগে ৪ জুন একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে দল। মূল ক্যাম্প শুরু হবে ৩১ মে থেকে।
সৌদি আরবে ক্যাম্পে ডাক পেয়েও.
গত ২৬ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সৌদি আরবে ক্যাম্পে ডাকলেও পরিকল্পনায় নেই বলে ফাহমিদুলকে বাদ দিয়েছিলেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তখন তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এবার তিনি বলেন, শুধু ফাহমিদুল নন, শমিত সোমকেও জুনের ম্যাচে রাখার সব চেষ্টা করা হচ্ছে। এর জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্নও করছে ফেডারেশন। ন্যাশনাল টিমস ম্যানেজমেন্ট কমিটির মিটিংয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের ভুলগুলো নিয়ে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা তোপের মুখে পড়েন জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির! ২৬ মার্চ শিলংয়ে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশের জেতা ম্যাচ ছিল বলে সবার অভিমত ছিল। সেখানে কোচের দল নির্বাচনে ভুল ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। কোচও তাঁর যুক্তি তুলে ধরেন। তবে প্রশ্নবাণে জর্জরিত কোচ হয়তো বুঝতে পারেন দলে দরকার ফাহমিদুলকে!
যাত্রা শেষ হয়নি, একদিন লাল-সবুজ
জার্সিতে মাঠে নামব
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়ে সৌদি আরবের অনুশীলন ক্যাম্পে থেকেও চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা না পেয়ে ফাহমিদুলকে ফিরে যেতে হয় ইতালিতে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। তবে নিজের ফেসবুকে এক আবেগঘন বার্তায় ফাহমিদুল জানান, এখনও থেমে যায়নি তাঁর স্বপ্ন, ভবিষ্যতে লাল-সবুজ জার্সিতে দেশের হয়ে মাঠে নামতে চান তিনি। ইতালির চতুর্থ স্তরের ক্লাব ওলবিয়া ক্যালসিও এফসিতে খেলা ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ ফরোয়ার্ড লিখেন–‘আমি ফাহমিদুল ইসলাম, বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালোবাসা, সমর্থন ও উৎসাহের জন্য সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ। আমার প্রতি আপনাদের অটল বিশ্বাস আমার যাত্রাপথে বড় ছাপ ফেলেছে এবং যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সবাইকে মনের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন স্পষ্টভাবে তুলে ধরে ফাহমিদুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল দলে খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম আমি। দুর্ভাগ্যবশত এবার সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোয়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি, যা হয় সেটি কোনো না কোনো কারণে হয় এবং আমার পথচলা কোনোভাবেই শেষ হয়ে যায়নি। সৃষ্টিকর্তা যদি চান, একদিন আমি লাল-সবুজের জার্সি পরে মাঠে নামব, দেশ ও সমর্থকদের জন্য আমার সবকিছু উজাড় করে দেব। ততদিন পর্যন্ত, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
একটু পেছনে ফিরে...
বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম প্রবাসী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে জামাল ভূঁইয়ার। ২০১৩ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলা ডেনমার্কপ্রবাসী এ মিডফিল্ডার এখন দলের অধিনায়কও। তাঁর পথ ধরে লাল-সবুজের জার্সিতে ২০২১ সালে অভিষেক ঘটে ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক রায়হান কাজীর। গত বছর তৃতীয় প্রবাসী হিসেবে বাংলাদেশ দল সুযোগ মেলে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত সৈয়দ শাহ কাজেমের। তিনি হলেন সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর ছেলে। কাজেমের জন্ম বাংলাদেশে হলেও বেড়ে উঠেছেন কানাডায়। তাঁকে আনতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বাফুফেকে। এর পেছনে বড় কারণ, কাজেমের জন্ম বাংলাদেশে আর কানাডার হয়ে যুব দলে না খেলা। ২০২৪ সালের ১১ জুন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ঘটে এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের। তবে হামজা, শমিতের পর বাংলাদেশ দলে এখন বড় চমক ফাহমিদুল ইসলাম।
স্বপ্ন পূরণের পথে
ঘরের মাঠে অভিষেকের আরও এক ধাপ এগিয়েছেন ইতালিপ্রবাসী তরুণ ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলাম। নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এবার তাঁর সামনে নতুন করে সুযোগ এসেছে। তিনি চূড়ান্ত একাদশে নিশ্চয় জায়গা করে নিজেকে তুলে ধরবেন। সেটিই এখন দেখার বিষয়!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ল সব জ ল দ শ দল জ ত য় দল র ফ টবল প রব স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।