Samakal:
2025-09-18@07:28:53 GMT

সাঁতরে যমুনা পার

Published: 23rd, May 2025 GMT

সাঁতরে যমুনা পার

শৈশব থেকেই ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। খেলাধুলা, সাঁতার, দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসতাম। পড়ালেখার ব্যস্ততায় শৈশবের সেই প্রাণোচ্ছ্বল অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। এখন কর্মব্যস্ত জীবনে চেম্বার করার পাশাপাশি সুযোগ পেলে নিজেকে বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত করার চেষ্টা করি। 
ইকরামুল হাসান শাকিল তাঁর ‘সি টু সামিট’-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ইনানি বিচ থেকে হাঁটা শুরু করেন– গন্তব্য এভারেস্ট চূড়া। এ অভিযানের সম্পূর্ণ পথে তিনি কোনো যানবাহন ব্যবহার করেননি, শুধু হেঁটেছেন। যমুনা সেতু পার হওয়ার অনুমতি না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন, নদী সাঁতরে পার হবেন।
সাঁতরে যমুনা নদী পার হবেন শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে সাঁতার অভিযানে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি। শাকিল ভাই জানান, ঢাকা থেকে আরও কয়েকজন আসবেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। বিভিন্ন কারণে তাদের আর যাওয়া হয়নি। রাতে তিনি বলেন, প্রাণ গ্রুপের সমুদ্র ভাই যাবেন। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে শামীম ভাই আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। ভোর ৬টায় মোহাম্মদপুর থেকে আমি, শামীম ভাই আর সমুদ্র ভাই রওনা হয়ে গেলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশে।
টাঙ্গাইল থেকে সকালে হাঁটা শুরু করবেন মুন ভাই, টনি ভাই আর শাকিল ভাই। আমরা সকাল সাড়ে ৯টায় রাস্তায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হলাম। শামীম ভাই দুপুর নাগাদ হাঁটায় অংশীদার হয়ে বিদায় নিলেন ছুটি স্বল্পতায়। তখন ছিল রমজান মাস। আমি রোজা রেখেই পৌঁছে গেলাম। 
নদীর পাড়টা ভীষণ সুন্দর, পাড়ঘেঁষা সুন্দর পাকা রাস্তা। বিশাল আকৃতির বটগাছের ছায়ায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানের ছাউনিতে বসে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। সামনেই বিশাল আকৃতির চির যৌবনা যমুনা নদী, কিছুটা দূরে যমুনা ব্রিজ দেখা যায়। নদীর বুকে মাঝেমধ্যে বিস্তীর্ণ চর জেগে উঠেছে। এই পাড় থেকে ওই পাড় কেমন আবছা লাগে। কিছুক্ষণ পর মেহেরজান আপু আর এক ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। বেলা ৩টার পর পৌঁছালেন শাকিল ভাই, মুন ভাই ও টনি ভাই। এর মধ্যে বাকিরাও চলে আসেন। সব প্রস্তুতি শেষে ৪টায় গ্ৰুপ ছবি তোলা হলো, ড্রোন ফুটেজ সংগ্রহের পর আমরা নদীতে নামলাম। 
সাঁতারের দলে ছিলেন– ইকরামুল হাসান শাকিল, মো.

হেলাল উদ্দিন, হোমায়েদ ইসহাক মুন, শাকিল হোসেন, সালমান ভাই, মেহেরজান আপু ও আমি। 
আমাদের মধ্যে মুন ভাই ছিলেন নিয়মিত সাঁতারু, বাংলা চ্যানেল কমপ্লিট করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। হেলাল ভাই আর শাকিল হোসেন ভাই এ নদীতে সাঁতার কেটেছেন বহুবার। মেহেরজান আপু আর শাকিল হোসেন ভাই ছিলেন একসঙ্গে। মুন ভাই, ইকরামুল শাকিল ভাই আর হেলাল ভাই একসঙ্গে ছিলেন। আমি আর সালমান ভাই কাছাকাছি ছিলাম। এরপর একেক করে আমরা সবাই পাড়ে চলে এলাম। এখান থেকে সালমান ভাই ট্রলারে উঠে যান। 
আবার চলা শুরু করি বিস্তীর্ণ বালুর চরে। চারপাশ মরুভূমির মতো লাগছিল। মরুভূমিতে জোছনা দেখা আমার একটা স্বপ্ন, সাহারা মরুভূমিতে গিয়ে দেখা হবে কিনা জানি না। এখানে একবার পূর্ণিমা রাতে আসতে হবে। আমরা বিভিন্ন গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম। চরেই হেঁটেছিলাম প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সাঁতারে দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম, বাকিরা আমাদের থেকে অনেক সামনে চলে গেছেন। পানিতে নেমে পড়লাম। প্রথম অংশটুকুতে কাদা ছিল বেশি, মাঝে অল্প একটু পানি। দ্বিতীয় অংশ পার হয়ে আমরা যখন ধানক্ষেতের ভেতরে ঢুকে গেলাম, তখন ইফতারের সময় হয়ে গেছে। কিছু বাদাম আর পানি খেয়ে নদীর শেষ অংশে নামার প্রস্তুতি নিই। এখানে নদীর প্রশস্ততা সবচেয়ে বেশি। সূর্যকে পশ্চিম দিকে আর দেখা যাচ্ছিল না, সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় আবার সাঁতার শুরু করি আমরা ছয়জন। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা দুই ভাগে আলাদা হয়ে গেলাম। মেহেরজান আপু আর শাকিল হোসেন ভাই একসঙ্গে, আমি তাদের একটু পেছনে আর বাকি তিনজন স্রোতের কারণে আমাদের থেকে বামে সরে গিয়েছিলেন। মাঝনদীতে আসার পর আপু সিদ্ধান্ত নেন তিনি ট্রলারে উঠে যাবেন। 
আমি আর শাকিল হোসেন ভাই স্রোতের টানে ব্রিজের পিলারের কাছাকাছি চলে যেতে থাকি, অল্পের জন্য ধাক্কা থেকে বেঁচে যাই। তখন আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত; বাকিরা কোথায়, কিছুই জানি না। পাড় খুব কাছেই দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল এগোতে পারছি না। আমরা পাড়ের মাটি পায়ে স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু প্রাণপণ সাঁতার কাটছিলাম। শেষ দিকে নদী তার ভয়ংকর রূপ দেখাতে কার্পণ্য করেনি মোটেই।
শাকিল হোসেন ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি শেষের দিকে পাশে না থাকলে মানসিক শক্তি পেতাম না শেষ করার। পরের মুহূর্তগুলো ছিল চরম আবেগের। ইকরামুল হাসান শাকিল ভাইয়ের সাহসিকতা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।  তিনি অভিযানের শেষ গন্তব্য এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়ে এখন দেশে ফিরছেন। এ রেকর্ড অর্জন এখন শুধু ব্যক্তির বিষয় নয়; এ গর্বের অংশীদার এ দেশের প্রতিটি মানুষের। v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর শ ক ল হ স ন ভ ই ইকর ম ল আম দ র ভ ই আর

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগদানের গুঞ্জনের মাঝে হুমার রহস্যময় পোস্ট
  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল