শৈশব থেকেই ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। খেলাধুলা, সাঁতার, দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসতাম। পড়ালেখার ব্যস্ততায় শৈশবের সেই প্রাণোচ্ছ্বল অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। এখন কর্মব্যস্ত জীবনে চেম্বার করার পাশাপাশি সুযোগ পেলে নিজেকে বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত করার চেষ্টা করি।
ইকরামুল হাসান শাকিল তাঁর ‘সি টু সামিট’-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ইনানি বিচ থেকে হাঁটা শুরু করেন– গন্তব্য এভারেস্ট চূড়া। এ অভিযানের সম্পূর্ণ পথে তিনি কোনো যানবাহন ব্যবহার করেননি, শুধু হেঁটেছেন। যমুনা সেতু পার হওয়ার অনুমতি না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন, নদী সাঁতরে পার হবেন।
সাঁতরে যমুনা নদী পার হবেন শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে সাঁতার অভিযানে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি। শাকিল ভাই জানান, ঢাকা থেকে আরও কয়েকজন আসবেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। বিভিন্ন কারণে তাদের আর যাওয়া হয়নি। রাতে তিনি বলেন, প্রাণ গ্রুপের সমুদ্র ভাই যাবেন। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে শামীম ভাই আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। ভোর ৬টায় মোহাম্মদপুর থেকে আমি, শামীম ভাই আর সমুদ্র ভাই রওনা হয়ে গেলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশে।
টাঙ্গাইল থেকে সকালে হাঁটা শুরু করবেন মুন ভাই, টনি ভাই আর শাকিল ভাই। আমরা সকাল সাড়ে ৯টায় রাস্তায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হলাম। শামীম ভাই দুপুর নাগাদ হাঁটায় অংশীদার হয়ে বিদায় নিলেন ছুটি স্বল্পতায়। তখন ছিল রমজান মাস। আমি রোজা রেখেই পৌঁছে গেলাম।
নদীর পাড়টা ভীষণ সুন্দর, পাড়ঘেঁষা সুন্দর পাকা রাস্তা। বিশাল আকৃতির বটগাছের ছায়ায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানের ছাউনিতে বসে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। সামনেই বিশাল আকৃতির চির যৌবনা যমুনা নদী, কিছুটা দূরে যমুনা ব্রিজ দেখা যায়। নদীর বুকে মাঝেমধ্যে বিস্তীর্ণ চর জেগে উঠেছে। এই পাড় থেকে ওই পাড় কেমন আবছা লাগে। কিছুক্ষণ পর মেহেরজান আপু আর এক ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। বেলা ৩টার পর পৌঁছালেন শাকিল ভাই, মুন ভাই ও টনি ভাই। এর মধ্যে বাকিরাও চলে আসেন। সব প্রস্তুতি শেষে ৪টায় গ্ৰুপ ছবি তোলা হলো, ড্রোন ফুটেজ সংগ্রহের পর আমরা নদীতে নামলাম।
সাঁতারের দলে ছিলেন– ইকরামুল হাসান শাকিল, মো.
আমাদের মধ্যে মুন ভাই ছিলেন নিয়মিত সাঁতারু, বাংলা চ্যানেল কমপ্লিট করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। হেলাল ভাই আর শাকিল হোসেন ভাই এ নদীতে সাঁতার কেটেছেন বহুবার। মেহেরজান আপু আর শাকিল হোসেন ভাই ছিলেন একসঙ্গে। মুন ভাই, ইকরামুল শাকিল ভাই আর হেলাল ভাই একসঙ্গে ছিলেন। আমি আর সালমান ভাই কাছাকাছি ছিলাম। এরপর একেক করে আমরা সবাই পাড়ে চলে এলাম। এখান থেকে সালমান ভাই ট্রলারে উঠে যান।
আবার চলা শুরু করি বিস্তীর্ণ বালুর চরে। চারপাশ মরুভূমির মতো লাগছিল। মরুভূমিতে জোছনা দেখা আমার একটা স্বপ্ন, সাহারা মরুভূমিতে গিয়ে দেখা হবে কিনা জানি না। এখানে একবার পূর্ণিমা রাতে আসতে হবে। আমরা বিভিন্ন গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম। চরেই হেঁটেছিলাম প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সাঁতারে দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম, বাকিরা আমাদের থেকে অনেক সামনে চলে গেছেন। পানিতে নেমে পড়লাম। প্রথম অংশটুকুতে কাদা ছিল বেশি, মাঝে অল্প একটু পানি। দ্বিতীয় অংশ পার হয়ে আমরা যখন ধানক্ষেতের ভেতরে ঢুকে গেলাম, তখন ইফতারের সময় হয়ে গেছে। কিছু বাদাম আর পানি খেয়ে নদীর শেষ অংশে নামার প্রস্তুতি নিই। এখানে নদীর প্রশস্ততা সবচেয়ে বেশি। সূর্যকে পশ্চিম দিকে আর দেখা যাচ্ছিল না, সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় আবার সাঁতার শুরু করি আমরা ছয়জন। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা দুই ভাগে আলাদা হয়ে গেলাম। মেহেরজান আপু আর শাকিল হোসেন ভাই একসঙ্গে, আমি তাদের একটু পেছনে আর বাকি তিনজন স্রোতের কারণে আমাদের থেকে বামে সরে গিয়েছিলেন। মাঝনদীতে আসার পর আপু সিদ্ধান্ত নেন তিনি ট্রলারে উঠে যাবেন।
আমি আর শাকিল হোসেন ভাই স্রোতের টানে ব্রিজের পিলারের কাছাকাছি চলে যেতে থাকি, অল্পের জন্য ধাক্কা থেকে বেঁচে যাই। তখন আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত; বাকিরা কোথায়, কিছুই জানি না। পাড় খুব কাছেই দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল এগোতে পারছি না। আমরা পাড়ের মাটি পায়ে স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু প্রাণপণ সাঁতার কাটছিলাম। শেষ দিকে নদী তার ভয়ংকর রূপ দেখাতে কার্পণ্য করেনি মোটেই।
শাকিল হোসেন ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি শেষের দিকে পাশে না থাকলে মানসিক শক্তি পেতাম না শেষ করার। পরের মুহূর্তগুলো ছিল চরম আবেগের। ইকরামুল হাসান শাকিল ভাইয়ের সাহসিকতা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। তিনি অভিযানের শেষ গন্তব্য এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়ে এখন দেশে ফিরছেন। এ রেকর্ড অর্জন এখন শুধু ব্যক্তির বিষয় নয়; এ গর্বের অংশীদার এ দেশের প্রতিটি মানুষের। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর শ ক ল হ স ন ভ ই ইকর ম ল আম দ র ভ ই আর
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী