ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে তাছমিয়া আক্তার (৩) ও তারা নূর (৩) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৪ মে) দুপুরে উপজেলার কুন্ডা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুই শিশু খালাত বোন। এতে এলাকায় শোক নেমে এসেছে।

মৃত তাছমিয়া আক্তার কুন্ডা গ্রামের মাফিকুল মিয়ার মেয়ে এবং তারা নূর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ধানতুলিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। তারা নূর খালার বাড়ি কুন্ডা গ্রামে বেড়াতে এসেছিল।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ১১টার দিকে বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে দুই শিশু খেলছিল। তাছমিয়ার মা পুকুরপাড়ের কাছে গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর শিশুদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আশপাশে না পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় মাইকিং করে নিখোঁজ হওয়ার খবর জানানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি পুকুরে কিছু-একটা ভাসতে দেখে এগিয়ে গিয়ে দুই শিশুর নিথর দেহ উদ্ধার করেন।

আরো পড়ুন:

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচুর বিচি গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.

সাইফুল ইসলাম দুই শিশুর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষাকালে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। তাই শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের আরো বেশি নজরদারি রাখা উচিত।’’

ঢাকা/পলাশ/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় বাদুড় আছে ১৫০ প্রজাতির, সেখানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৫টি। দেশের আয়তন কিংবা আবাসের বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাদুড় নিয়ে আমাদের গবেষণার ঘাটতি একটি বড় কারণ। গবেষণার উদ্যোগ যেমন কম, তেমনি আকার-আকৃতি, গুপ্তস্থানে বসবাস, চেনাজানার জটিলতায় দেশের বাদুড় সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি।

স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর নানা দিক মূলত আমার গবেষণার জগৎ। ফলে বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দেয়। তাই অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি গত দুই বছর যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে কিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি।

এই গবেষণাকালে গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রিতে যাই গুহায় বাস করা বাদুড়ের খোঁজে। সাঙ্গু নদের পাড়ঘেঁষা একটি মারমা পাড়ায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। সাঙ্গু নদের পশ্চিমে পাহাড়ি পথ। সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্র ও থানচি থেকে যোগ দেওয়া একজন গাইড। ওই পাহাড়ি পথও আমাদের অজানা। তাই গন্তব্যে যেতে একজন স্থানীয় গাইডের সন্ধানে থানচি থেকে যোগ দেওয়া গাইড আমাদের নিয়ে গেল পাশের একটি পাড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পাড়ায় বাস করে খুমি সম্প্রদায়।

পরদিন খুব সকালেই রওনা হলাম গুহার উদ্দেশে। আমাদের তিনজনের দলে খুমি পাড়া থেকে যুক্ত হন আরও চারজন। গুহাটি অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো আকৃতি। ফলে ওপর দিক থেকে গুহায় ঢুকতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে আমরা গুহার মাঝামাঝি উচ্চতা বরাবর খাঁজে দাঁড়াতে সক্ষম হই। কিন্তু গুহার ভেতরে নামার তেমন কোনো পথ নেই। গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে গুহার ভেতর নামার জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমার গবেষক ছাত্র অং শৈ নু মারমা কোনোমতেই আমাকে নামতে দিতে রাজি নয়, নামার পর যদি গুহা থেকে উঠতে না পারি! আমার মধ্যেও সাহসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিল। ফলে দিকনির্দেশনা দিয়ে খুমি পাড়ার গাইডদের ভেতরে পাঠালাম। ওরা গাছের শিকড় ধরে তর তর করে নেমে গেল নিচে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এল কয়েকটি বাদুড়ের নমুনা নিয়ে। দু–একটি বাদুড় দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলাম। এমন বাদুড় এর আগে তো দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বাদুড়ের নমুনার দৈহিক ও খুলির মাপজোখ নিলাম। কিন্তু প্রজাতি শনাক্তে তাতেও কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে দাঁতের গঠন পরীক্ষা করি। আর তখনই বেরিয়ে এল বাদুড়ের পরিচয়। প্রায় তিন মাস পর নিশ্চিত হলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি বাদুড়। এই বাদুড়ের ইংরেজি নাম মায়োটিস ব্যাট, অন্য নাম মাউস-ইয়ারড ব্যাট; লাতিন নাম মায়োটিস অ্যানেকটান্স। বাংলায় বলা যায় ইঁদুরকানী বাদুড়। এর কানের গঠন অনেকটা ইঁদুরের কানের মতো, তাই এমন নাম। তা ছাড়া এ বাদুড়ের মুখের চারপাশে কিছু লম্বা লোম থাকে। আকারে ছোট। ঊর্ধ্ববাহুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫ মিলিমিটার, লেজ তুলনামূলকভাবে লম্বা, যা প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ মিলিমিটার, দেহের তুলনায় কিছুটা লম্বা। এদের ওপরের চোয়ালের তিন নম্বর প্রিমোলার দাঁতটি অতিক্ষুদ্র, যা দাঁতের সারি থেকে ভেতরের দিকে সরে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যান্য নিকটাত্মীয় থেকে এদের আলাদা করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১২ প্রজাতির ইঁদুরকানী বাদুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু এই জাতের বাদুড়ের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। এই বাদুড় শুধু দেশের জন্য নতুন নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশ বিরল। ফলে প্রতিটি রেকর্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ম্যামালিয়া নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এই বাদুড় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করি। এই বাদুড় নথিভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বাদুড়ের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। এই বাদুড়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।

ড. এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
  • নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ