Samakal:
2025-07-12@09:38:09 GMT

ফুসফুসের চিকিৎসায় এআই

Published: 25th, May 2025 GMT

ফুসফুসের চিকিৎসায় এআই

চিকিৎসার প্রয়োজনে গেলেন কোনো ক্লিনিকে। নাম নিবন্ধন করে চেম্বারে প্রবেশের পর দেখলেন, সেখানে নেই চিকিৎসক। আপনার সমস্যার কথা জানতে রয়েছে মানব অবয়বের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বট। ঠিকঠাক আপনার সমস্যা আর রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিল এআই ডাক্তার। এমন কথা কিছুটা ভাবাবে, সেটাই স্বাভাবিক। হয়তো ভেবে বসলেন, এমন আবার কীভাবে হয়! কিন্তু সৌদি আরবে ঘটেছে এমন ঘটনা। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর মেডিকেল ক্লিনিক চালু হয়েছে দেশটিতে। ‘ডাক্তার হুয়া’ নামে এআই চিকিৎসক সেখানে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত।

প্রথম এআই মেডিকেল ক্লিনিক
সৌদি আরবের আল-আহসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডক্টর ক্লিনিক খোলা হয়েছে। দেশটির আল মুসা হেলথ গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এমন ক্লিনিক খুলেছে চীনের স্টার্টআপ। চীনা সংস্থার রয়েছে বিশেষ দক্ষতার সিনে এআই। মূলত তার দক্ষতার মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে ডাক্তার হুয়াকে। মানুষের চিকিৎসায় কাজ করছে ডা.

হুয়া। কতটা দক্ষতা আর কীভাবে চিকিৎসা করছে এআই বট, তা গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

কীভাবে রোগ নির্ণয়
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সঙ্গে ট্যাবের মাধ্যমে বিশেষ যোগাযোগ স্থাপন করেছে এআই চিকিৎসক। ট্যাবলেটে নিজের সমস্যার কথা উল্লেখ করছেন রোগী। তারপর ট্যাবলেটের মাধ্যমে প্রয়োজনে যথাযথ প্রশ্ন করছে ডা. হুয়া। মেডিকেল রিপোর্টও যাচাই করছে সে। কার্ডিওগ্রাম বা এক্স-রের মতো রিপোর্ট পরীক্ষা করছে ডা. হুয়া। সব জেনেবুঝে তার পরই ট্রিটমেন্ট আর ওষুধের কথা জানাচ্ছে। প্রয়োজনে বদলে দেওয়া হচ্ছে নতুন ওষুধ।
ঠিক এখানে এসেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা হচ্ছে না। সৌদি আরবের ওই ক্লিনিকে এআই চিকিৎসককে সহায়তা করার জন্য রয়েছেন বিশেষ সহযোগী। তিনি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ডা. হুয়ার পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে ওই চিকিৎসক কিন্তু রোগীর সঙ্গে কোনো আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না। অন্যদিকে, কোনো বিপৎকালীন পরিস্থিতিতে ডা. হুয়ার বদলে মানব চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করছেন।

চিকিৎসা কেমন
গবেষণা ও পরীক্ষায় মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ভুল করেছে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত এমন যান্ত্রিক আর কৃত্রিম পদ্ধতি। হিসাব বলছে, ভুলের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে। বর্তমানে এমন ঘরানার ক্লিনিক পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এমন পর্যায়ে এআই সিস্টেমের ভুলের হিসাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন ডাক্তাররা।
অচিরে যার বিস্তারিত খবর পাওয়া যাবে। সন্তোষজনক আর মানোত্তীর্ণ হলেই বাণিজ্যিকভাবে এমন পরিষেবা বাস্তবায়নের কথা ভাবা হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
কী কী চিকিৎসা চলছে
বর্তমানে সৌদি আরবের বিশেষায়িত এআই ক্লিনিকে মূলত রেসপিরেটরি ইলনেস বা ফুসফুসের সমস্যার চিকিৎসা হচ্ছে। অ্যাজমা ছাড়াও প্রায় ৩০ রকমের ফুসফুস-সংক্রান্ত রোগের নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। দ্রুত আরও ৫০ রকমের রেসপিরেটরি সমস্যার চিকিৎসায় নিয়োজিত হবেন ডা. হুয়া। আবার গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিক্যাল ও ডার্মাটোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসায় দ্রুতই 
কাজ শুরু করবে এআই ডাক্তার।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এআই ই চ ক ৎসক র সমস য সমস য র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৭০ শতাংশ করদাতার ‘জিরো ট্যাক্স’: বাস্তবতা নাকি কর ফাঁকি?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, দেশে রিটার্ন দাখিলকারীদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই শূন্য আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। কিন্তু এই তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছেন না অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাদের মতে, এত বড় সংখ্যক মানুষ করযোগ্য আয় না থাকার কথা বাস্তবসম্মত নয়। যারা শূন্য কর দেখাচ্ছেন, তাদের প্রকৃত আয় ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখা দরকার। 

প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি সত্যিই করযোগ্য আয়ের বাইরে, নাকি আয় গোপন করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন? বর্তমানে বাংলাদেশে কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ সেই অনুপাতে বাড়ছে না। কারণ রিটার্ন জমাদানকারীদের একটি বড় অংশ ‘জিরো ট্যাক্স’ দিচ্ছেন, অর্থাৎ কর পরিশোধ করছেন না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪৫ লাখ রিটার্ন দাখিলকারী থাকলেও তাদের মধ্যে প্রায় ৩১ লাখই শূন্য আয় দেখিয়েছেন। এই সংখ্যা শুধু চিন্তার কারণই নয়, বরং কর প্রশাসনের দুর্বলতা ও দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার বড় সংকেত বহন করে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের মধ্যে এই ‘জিরো ট্যাক্স’ প্রবণতা বেশি? দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, টেন্ডার বা ব্যাংক লোনের জন্য টিআইএন নিয়েছেন এমন অনেকে; ছোট ব্যবসায়ী, যারা নগদ ভিত্তিক লেনদেন করেন এবং হিসাব রাখেন না; অনলাইন উদ্যোক্তা, যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়া লেনদেন করেন; মধ্যস্বত্বভোগী, কমিশনভিত্তিক আয়কারী, কিংবা এমন পেশাজীবীরা, যারা নিয়মিত ক্লিনিকে সেবা দেন কিন্তু রিটার্নে তা উল্লেখ করেন না। এদের বেশিরভাগই বাস্তবে করযোগ্য আয় করলেও তা গোপন করেন, রিটার্নে শূন্য আয় দেখান। অনেক সময় তারা কোনো হিসাব না দেখিয়ে শুধু টিআইএন রাখার খাতিরেই রিটার্ন জমা দেন।

এই পরিস্থিতি তৈরির পেছনে কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। যেমন দেশে কর সচেতনতার অভাব প্রকট, মানুষ মনে করে কর দেওয়ার পরও তারা রাষ্ট্রীয় সুবিধা পায় না। কর ব্যবস্থায় এখনও দুর্নীতি ও হয়রানি ভয় থাকে বলে অনেকে ইচ্ছা করেও কর দিতে চান না। এনবিআরের নিজস্ব তথ্য যাচাই ব্যবস্থাও দুর্বল। তারা রিটার্নে দেওয়া তথ্য সত্য কি না তা খতিয়ে দেখার মতো প্রযুক্তি, ডেটাবেইজ বা জনবল নিয়ে এখনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। 

আবার অনলাইন রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি যতটা সহজ হয়েছে, যাচাই ততটা কড়াকড়িভাবে হচ্ছে না। কেউ একজন নিজের সম্পদ, ব্যাংক হিসাব বা গাড়ি থাকার পরও অনায়াসে ‘জিরো ইনকাম’ লিখে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। এটা কর প্রশাসনের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন রাষ্ট্র নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে চাইছে। সরকারের বাজেট ঘাটতি বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের চাপ বাড়ছে, অথচ লাখ লাখ মানুষ কর ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য কী করেছে এনবিআর? বাস্তবতা হলো, এনবিআর কেবল রিটার্নের সংখ্যা বাড়ানোতে খুশি, কিন্তু রিটার্নের মান বা সত্যতা যাচাই করার কোনও কাঠামোগত প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। এই ৭০ শতাংশ ‘জিরো ট্যাক্স’ দাখিলকারীদের মধ্যে কয়েক হাজার জনকে অডিট করলে দেখা যাবে, এদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে করযোগ্য আয় লুকিয়ে যাচ্ছেন।

তাহলে সমাধান কী? প্রথমত, টিআইএন নম্বরকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রপার্টি রেজিস্ট্রেশনসহ সকল নাগরিক সুবিধার সঙ্গে ডিজিটালি সংযুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা রিটার্নে শূন্য আয় দেখান, তাদের মধ্য থেকে নিয়মিত অডিট করতে হবে। তৃতীয়ত, কর সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং করদানে উৎসাহ দিতে স্বচ্ছ ও গণমুখী ব্যয় দেখাতে হবে। যেমন আপনার করের টাকায় রাস্তাঘাট হয়েছে, স্কুল-হাসপাতাল গড়া হয়েছে- এই বার্তাটি জনগণের মনে গেঁথে দিতে হবে।

একই সঙ্গে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। যে ব্যক্তি আয় গোপন করে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই যেন সে কর না দিয়ে পার না পায়। অন্যদিকে যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের পুরস্কৃত করতে হবে, তাদের জন্য স্বতন্ত্র সুবিধা, বিশেষ সম্মাননা বা কর ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।

যদি ৩১ লাখ জিরো রিটার্ন দাখিলকারীর মধ্যে অর্ধেকও করযোগ্য আয় গোপন করে থাকেন, আর প্রত্যেকে গড়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা করে কর দিতেন, তাহলে রাষ্ট্রের কোষাগারে ১৫০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আসতো। এই অর্থ দিয়ে দেশের শতাধিক উপজেলার সড়ক, স্কুল, ক্লিনিক আধুনিকায়ন করা সম্ভব হতো।

অর্থাৎ, জিরো ট্যাক্স শুধু একটা পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত, যে আমাদের করব্যবস্থা এখনও আস্থা, জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতায় ভুগছে। কর সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রযুক্তি ব্যবহার, তথ্য যাচাই ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন- সবই এখন সময়ের দাবি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সন্দেহ যথার্থ। ৭০ শতাংশ করদাতার শূন্য আয় সত্যিই অস্বাভাবিক। এই সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্য উন্মোচন করা এখন শুধু এনবিআরের কাজ নয়, এটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক টিকে থাকার প্রশ্ন। সঠিক করদাতা চিহ্নিত করতে না পারলে কর ফাঁকির সংস্কৃতি আরও বাড়বে, সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন, আর উন্নয়ন কেবল কাগজে থাকবে,মাঠে নয়। এখনই সময় সাহসী সিদ্ধান্তের, নইলে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি আমরা হারিয়ে ফেলবো কর ন্যায়বিচারের শেষ ভরসাটুকুও।

লেখক: সাংবাদিক

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ