চিকিৎসার প্রয়োজনে গেলেন কোনো ক্লিনিকে। নাম নিবন্ধন করে চেম্বারে প্রবেশের পর দেখলেন, সেখানে নেই চিকিৎসক। আপনার সমস্যার কথা জানতে রয়েছে মানব অবয়বের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বট। ঠিকঠাক আপনার সমস্যা আর রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিল এআই ডাক্তার। এমন কথা কিছুটা ভাবাবে, সেটাই স্বাভাবিক। হয়তো ভেবে বসলেন, এমন আবার কীভাবে হয়! কিন্তু সৌদি আরবে ঘটেছে এমন ঘটনা। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর মেডিকেল ক্লিনিক চালু হয়েছে দেশটিতে। ‘ডাক্তার হুয়া’ নামে এআই চিকিৎসক সেখানে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত।
প্রথম এআই মেডিকেল ক্লিনিক
সৌদি আরবের আল-আহসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডক্টর ক্লিনিক খোলা হয়েছে। দেশটির আল মুসা হেলথ গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এমন ক্লিনিক খুলেছে চীনের স্টার্টআপ। চীনা সংস্থার রয়েছে বিশেষ দক্ষতার সিনে এআই। মূলত তার দক্ষতার মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে ডাক্তার হুয়াকে। মানুষের চিকিৎসায় কাজ করছে ডা.
কীভাবে রোগ নির্ণয়
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সঙ্গে ট্যাবের মাধ্যমে বিশেষ যোগাযোগ স্থাপন করেছে এআই চিকিৎসক। ট্যাবলেটে নিজের সমস্যার কথা উল্লেখ করছেন রোগী। তারপর ট্যাবলেটের মাধ্যমে প্রয়োজনে যথাযথ প্রশ্ন করছে ডা. হুয়া। মেডিকেল রিপোর্টও যাচাই করছে সে। কার্ডিওগ্রাম বা এক্স-রের মতো রিপোর্ট পরীক্ষা করছে ডা. হুয়া। সব জেনেবুঝে তার পরই ট্রিটমেন্ট আর ওষুধের কথা জানাচ্ছে। প্রয়োজনে বদলে দেওয়া হচ্ছে নতুন ওষুধ।
ঠিক এখানে এসেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা হচ্ছে না। সৌদি আরবের ওই ক্লিনিকে এআই চিকিৎসককে সহায়তা করার জন্য রয়েছেন বিশেষ সহযোগী। তিনি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ডা. হুয়ার পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে ওই চিকিৎসক কিন্তু রোগীর সঙ্গে কোনো আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন না। অন্যদিকে, কোনো বিপৎকালীন পরিস্থিতিতে ডা. হুয়ার বদলে মানব চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করছেন।
চিকিৎসা কেমন
গবেষণা ও পরীক্ষায় মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ভুল করেছে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত এমন যান্ত্রিক আর কৃত্রিম পদ্ধতি। হিসাব বলছে, ভুলের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে। বর্তমানে এমন ঘরানার ক্লিনিক পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এমন পর্যায়ে এআই সিস্টেমের ভুলের হিসাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন ডাক্তাররা।
অচিরে যার বিস্তারিত খবর পাওয়া যাবে। সন্তোষজনক আর মানোত্তীর্ণ হলেই বাণিজ্যিকভাবে এমন পরিষেবা বাস্তবায়নের কথা ভাবা হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
কী কী চিকিৎসা চলছে
বর্তমানে সৌদি আরবের বিশেষায়িত এআই ক্লিনিকে মূলত রেসপিরেটরি ইলনেস বা ফুসফুসের সমস্যার চিকিৎসা হচ্ছে। অ্যাজমা ছাড়াও প্রায় ৩০ রকমের ফুসফুস-সংক্রান্ত রোগের নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। দ্রুত আরও ৫০ রকমের রেসপিরেটরি সমস্যার চিকিৎসায় নিয়োজিত হবেন ডা. হুয়া। আবার গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিক্যাল ও ডার্মাটোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসায় দ্রুতই
কাজ শুরু করবে এআই ডাক্তার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এআই ই চ ক ৎসক র সমস য সমস য র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।