পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “বালু মহাল অভিযানে শুধু শ্রমিক ধরা হয়। শ্রমিক ধরে নিয়ে গেলে তো কোনো লাভ হবে না। শ্রমিকের পেছনে কে বা কারা কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে তা জানতে হবে।”

তিনি বলেন, “কোর্টে লিখে দিলে হবে না অপরাধী পায়নি। এটা গ্রহনযোগ্য রিপোর্ট না। এমন রিপোর্ট সরকার আর গ্রহণ করবে না। বলতে হবে, বনবিভাগে বালু উত্তোলন ও পাথর উত্তোলনের সঙ্গে কারা জড়িত। নাম মুখে আনতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন নির্দেশনা জেলা প্রশাসকদের দেওয়া হয়েছে।” 

আরো পড়ুন: হাতি ও মানুষের সহবস্থান নিশ্চিত করা হবে: রিজওয়ানা

আরো পড়ুন:

হাতি ও মানুষের সহবস্থান নিশ্চিত করা হবে: রিজওয়ানা

নির্বাচন ৩০ জুনের ওই পারে যাবে না, সবাই সন্তুষ্ট: প্রেস সচিব

সোমবার (২৬ মে) সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দাওধারা এলাকায় সম্ভাব্য পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের মূল হোতাদের কেন ধরা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বাংলাদেশের ৮ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে বসেছিলাম। তাদের ১০টি নির্দেশনা দিয়েছি। বালু উত্তোলন যদি অনিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে বন্ধ করে দিতে হবে।” 

তিনি বলেন, “অতীতে কখনোই যারা মূলহোতা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা উল্টো দেখেছি, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে দেশের একটি জেলার জেলা প্রশাসক পর্যন্ত বদলি হয়ে গেছেন।”

আরো পড়ুন: শেরপুরে উপদেষ্টার গাড়িবহরে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা, আহত ৬

উপদেষ্টা বলেন, “আমি গতকাল শেরপুরের জেলা প্রশাসককে বলেছি, আপনি আসল হোতাকে ধরুন। রিপোর্টে কখনো একই কথা লিখবেন না যে কাউকে পাওয়া যায়নি। আপনি তাকে পাবেন না মানে কী? তাহলে পুলিশের কাজ কী? আপনাদের কাজই হলো অপরাধীকে খুঁজে বের করা।”

পরে উপদেষ্টা নালিতাবাড়ীর মধুটিলা রেঞ্জের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাগান প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি মধুটিলা ইকোপার্কে হাতির আক্রমণে নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের মধ্যে ৩ লাখ টাকা করে ৬ লাখ টাকার চেক এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ পরিবারকে ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যদের মধ্যে বাইনোকুলার, টর্চ লাইট, হ্যান্ডমাইক, হুইসেলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দাওধারা এলাকায় বনের ভেতর পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগের ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ। বনের ভেতরে দাওধারায় ২২৩ একর জায়গা রয়েছে ১ নম্বর খতিয়ানের। সম্প্রতি বিস্তীর্ণ এই জায়গাজুড়ে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর পর বন্য হাতি সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি ও বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার সুপারিশে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনে আপত্তি জানায় স্থানীয় বন বিভাগ।

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র জওয় ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্ট মার্টিন ভালো নেই, সেন্ট মার্টিনের মানুষ ভালো নেই

অমাবস্যা ও সমুদ্রের নিম্নচাপ একই সময় হওয়ার কারণে উপকূলজুড়ে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। সেখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ ও ক্ষতির পরিমাপ এতটা বেশি যে অনুমান করাও কঠিন।

প্রতিবছর বর্ষায় মোটামুটি দু-তিনটি ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়। কিন্তু এত ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস কখনো হয়নি। এত তাণ্ডব কখনো দেখেননি দ্বীপের মানুষ।

২৬ ও ২৭ জুলাই সমুদ্রের নিষ্ঠুর লীলাখেলা দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্বীপের প্রায় চারপাশ থেকে হু হু করে ঢুকেছে সমুদ্রের পানি। অনেক দিন এমন পানির তোড় দেখেননি দ্বীপের মানুষ।

দ্বীপে যা সামান্য কৃষিকাজ হয়, বিশেষ করে ধান চাষ ও সবজি চাষে এবার জলোচ্ছ্বাসের থাবা পড়েছে। লোনাপানি ঢুকে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

সমুদ্রের পাড়ের বাড়ি ও দ্বীপের মাঝখানের নিম্নাঞ্চলে (স্থানীয় ভাষায় মরং বলে) সাগরের পানি ঢোকার কারণে অনেক এলাকায় পানি লবণাক্ত হয়ে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

অনেক বাড়ি ও রিসোর্ট সমুদ্রের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গেছে।

দ্বীপে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় এবার জলোচ্ছ্বাস পূর্ণমাত্রায় আঘাত করতে পেরেছে! ফলে পুরোপুরি অনিরাপদ দ্বীপটিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।

দ্বীপের ভাঙন শুরু মূলত ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে। ওই দুই ঘূর্ণিঝড় দ্বীপের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ আশপাশের পাথরের স্তূপ নড়বড়ে করে দেয়। ফলে দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রের স্রোত সমুদ্রগর্ভের পরিবর্তে সৈকত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়।

এতে দ্বীপের উত্তর ও উত্তর–পূর্ব পাশে ব্যাপক ভাঙন হয়। উত্তর পাড়া ও ডেইল পাড়া নামের দুটি পাড়া বিলীন হয়ে যায়। বাসিন্দাদের ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গুচ্ছগ্রাম করে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সেন্ট মার্টিন নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক। নানা রাজনীতি। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র বলতে মানুষ সেন্ট মার্টিনই বোঝেন। কিন্তু সেই সেন্ট মার্টিনের দুর্যোগ ও ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে দেশের মানুষের কোনো ভাবনা নেই, এটি খুবই হতাশাজনক। দ্বীপের সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করা না হয়, আমরা দ্বীপবাসী কোথায় যাব?

সেই ১৯৯১ সাল থেকে আজ অবধি দ্বীপের ভাঙন চলমান। কিন্তু কোনো বেড়িবাঁধ নেই। আবার নতুন করে অপরিকল্পিত রিসোর্ট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণেও সৈকতের বালিয়াড়ি ও কেয়া ঝোপ উজাড় হয়েছে। এতে দ্বীপের ঢেউ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের, বিশেষ করে মুরব্বিদের কথায় এবারের মতো জলোচ্ছ্বাস তাঁদের জীবনে দেখেনি। তাঁরা দ্বীপের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। আদৌ দ্বীপে অদূর ভবিষ্যতে বসবাস করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে তাঁদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা মনে করেন, এ রকম আর দু–তিনটি জলোচ্ছ্বাস সহ্য করার মতো শক্তি সেন্ট মাটিনের নেই। দ্রুত স্রোতপ্রতিরোধী বাঁধ নির্মাণ করতে না পারলে সেন্ট মার্টিন ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে!

দ্বীপবাসী মনে করে, একটা টেকসই বেড়িবাঁধ যেটা সচরাচর উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধের মতো না। কারণ, এখানে কচ্ছপের ডিম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান। ফলে কাছিমের ডিম দিতে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয়, সেভাবে সৈকত থেকে সমুদ্রের দিকে লম্বালম্বি করে বাঁধ দিয়ে স্রোত সমুদ্রের দিকে ঠেলে দিতে হবে। দক্ষিণ ভারতে এ রকম বাঁধ অনেক কার্যকর প্রমাণিত।

পাশাপাশি দ্বীপের মানুষের আয়ের বিকল্প কর্মসংস্থান বা আয়ের উৎস সৃষ্টি করে পর্যটননির্ভরতা কমাতে হবে। একটা আবাসন নীতিমালা করে দ্বীপে পরিবেশবান্ধব বাড়ি ও ইকো রিসোর্ট করতে উৎসাহিত করতে হবে। যত্রতত্র রিসোর্ট করা বন্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত রিসোর্ট কমিয়ে ফেলতে হবে আর যেসব রিসোর্টের বিরুদ্ধে আইনি বাধা আছে, সেগুলো উচ্ছেদ করতে হবে।

সৈকত, জঙ্গল, খাল ও জলাভূমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনে কিছু জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বা ক্ষতিপূরণ হলেও সৈকতের ১০০ ফুট পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং সে জমিতে বনায়ন করতে হবে। ঝাউগাছের পরিবর্তে ভাঙনপ্রতিরোধী কেয়াগাছ, নারকেল ও সাগরলতা রোপণ, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সেন্ট মার্টিন নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক। নানা রাজনীতি। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র বলতে মানুষ সেন্ট মার্টিনই বোঝেন। কিন্তু সেই সেন্ট মার্টিনের দুর্যোগ ও ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে দেশের মানুষের কোনো ভাবনা নেই, এটি খুবই হতাশাজনক। দ্বীপের সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করা না হয়, আমরা দ্বীপবাসী কোথায় যাব?

তৈয়ব উল্লাহ, আন্দোলনকর্মী ও সেন্ট মার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেন্ট মার্টিন ভালো নেই, সেন্ট মার্টিনের মানুষ ভালো নেই