কানাডার নতুন সরকারের সঙ্গে কি সম্পর্ক উষ্ণ হবে ভারতের
Published: 26th, May 2025 GMT
কানাডার সঙ্গে ভারতের জমাটবাঁধা কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্ভবত গলতে শুরু করেছে। গতকাল রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা হয় কানাডার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের। এর আগে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে ‘এক্স’ বার্তায় অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
কানাডায় বসবাসকারী খালিস্তান আন্দোলনে মদদ দেওয়ার প্রশ্নে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিনন্দন বার্তা ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে জয়শঙ্করের ফোনালাপের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, সম্পর্ক ভালো করতে ভারত ও কানাডা দুই দেশই আগ্রহী। মনে করা হচ্ছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তার পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জমাটবাঁধা বরফ গলতে শুরু করবে।
ফোনে আলোচনার পর জয়শঙ্কর ‘এক্স’ বার্তায় বলেন, ‘কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে কথা হলো। নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি। দুই দেশের সম্পর্কের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁর সাফল্য কামনা করেছি।’
একইভাবে অনিতা আনন্দও ‘এক্স’ বার্তায় জয়শঙ্করকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো গভীরতর করা ও অভিন্ন অগ্রাধিকারগুলো ত্বরাণ্বিত করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। যৌথভাবে কাজ করতে মুখিয়ে আছি।’
ওই ঘটনার পর থেকে ক্রমেই ভারত–কানাডা সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ভারতের অভিযোগ, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো ট্রুডো শিখ সমর্থনের জন্য ওই অভিযোগ তুলেছেন। সম্পর্কের অবনতির ফলে দুই দেশই কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে।
গত এপ্রিলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মোদি। ‘এক্স’ বার্তায় লিখেছিলেন, দুই দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অভিন্ন। দুই দেশই আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। দুই দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণে একযোগে কাজ করার জন্য তিনি অপেক্ষায় থাকছেন।
জয়শঙ্কর–আনন্দের সংলাপ কতটা কার্যকর, তা বোঝা যাবে আসন্ন জি–৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতকে কানাডা আমন্ত্রণ জানায় কি না। বিগত ছয়টি শীর্ষ সম্মেলনে ভারত বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছে। এ বছর কানাডা জি–৭ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কানাডার আলবার্তায় শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে ১৫ জুন। চলবে ১৭ জুন পর্যন্ত।
কানাডা ইতিমধ্যেই এই সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদোমির জেলেনস্কিকে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা ছাড়া এই গোষ্ঠীর বাকি সদস্যদেশ হলো ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান।
ভারত আমন্ত্রিত হলে প্রধানমন্ত্রী কার্নির সঙ্গে মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। সে ক্ষেত্রে সম্পর্কের জমাটবাঁধা বরফও দ্রুত গলতে শুরু করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র আনন দ র আমন ত র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
২২ এপ্রিল থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ট্রাম্প–মোদির কোনো কথা হয়নি: জয়শঙ্কর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, তিনিই ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ থামিয়েছেন। বাণিজ্য চুক্তির কথা বলে দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামের হামলার পর থেকে ১৭ জুনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো ফোনালাপ হয়নি।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের বদলায় ভারতের অপারেশন সিঁদুর অভিযান চার দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্রমাগত বলে চলেছেন, তিনিই যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশকে রাজি করিয়েছেন। দুই দেশকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করতে গেলে যুদ্ধ থামাতে হবে। এই মধ্যস্থতা নিয়ে ভারতে প্রশ্ন উঠেই চলেছে; কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্তত ২৪ বার এই দাবি করেছেন। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী একবারও বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট অসত্য বলছেন। ভারতের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের কাছ থেকে এসেছিল। ভারত তা গ্রহণ করেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় ভাষণ দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামকাণ্ডের পর সহানুভূতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পর তিনি ফোন করেন ১৭ জুন। কেন মোদির সঙ্গে কানাডায় তাঁর দেখা হচ্ছে না, তা ব্যাখ্যা করতে। এই দুই তারিখ, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ও ১৭ জুনের মধ্যে একবারও মোদি–ট্রাম্প ফোনালাপ হয়নি। জয়শঙ্কর আরও বলেন, যদ্ধবিরতির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার কোনো সম্পর্কও নেই।
জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে অপারেশন সিঁদুর এক ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ (নিউ নর্মাল) সৃষ্টি করেছে। এই নতুন স্বাভাবিকতার পাঁচটি দিক। এক, সন্ত্রাসবাদীদের আর ঢাল হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না। দুই, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ্য জবাব সব সময় দেওয়া হবে। চুপ করে বসে থাকার দিন শেষ। তিন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলবে না। সন্ত্রাসের আবহে আলোচনায় বসার উদ্দেশ্য একটাই, কী করে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা হবে। চার, পরমাণু অস্ত্রের ব্ল্যাকমেলের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। পাঁচ, সন্ত্রাস ও সুপ্রতিবেশীমূলক মনোভাব পাশাপাশি চলবে না। রক্ত ও পানি একসঙ্গে বইতে পারে না। এ পাঁচ বিষয়ে ভারতের মনোভাব সুস্পষ্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই লস্কর–ই–তাইয়েবার ছায়া–সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই মাত্র তিনটি দেশ (চীন, তুরস্ক, আজারবাইজান) অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেছে। শত্রুতা ও বিরোধিতার লাল রেখা (রেড লাইন) অতিক্রম করার শাস্তি কী, তা বোঝানোই ছিল অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য।