আদনান আল রাজীব। নির্মাতা। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শাখায় বিচারকদের রায়ে ‘স্পেশাল মেনশন’ পেয়েছে তাঁর নির্মিত সিনেমা ‘আলী’। প্রথমবারের মতো কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বীকৃতি পেল  সিনেমাটি। কানে আলীর সাফল্য ও আগামী ভাবনা নিয়েই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আলী’ পেল স্পেশাল মেনশন। কেমন লাগছে?
এটা আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্যও। আপনারা জানেন, প্রথমবারের মতো আমাদের জন্য এটা অনেক বড় একটা অর্জন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মানুষ ভালোভাবে একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। এ পুরস্কারটি জিতে আমরা কিছুটা হলেও সেটাই দিতে পেরেছি। এটা দেশের মানুষের মাঝে একটা আশার সঞ্চার যেমন ঘটাবে, তেমনি বাংলাদেশ নিয়ে একটা ইতিবাচক ধারণাও তৈরি করবে। অন্যদিকে কান উৎসবকে সিনেমার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর  বলা হয়। সেখানে নিজের নামের পাশাপাশি দেশের নাম এক সঙ্গে উচ্চারিত হতে দেখা স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু। যখন শুনলাম আমাদের চলচ্চিত্রটিকে ‘স্পেশাল মেনশন’ দেওয়া হয়েছে, তখন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা। পুরোটাই স্বপ্নের মতো। মনে হচ্ছিল, ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি। বোঝানো যাবে না, হার্টবিট (হৃৎস্পন্দন) বেড়ে গিয়েছিল। তারপর যখন পুরো হল করতালিতে ফেটে পড়ল– সেই মুহূর্তটা সারাজীবন মনে রাখার মতো একটি বিষয়।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এমন একটি স্বীকৃতি পেল, আপনার অভিমত কী’
এমন কিছু অর্জন করব, এটা কখনোই ভাবিনি। আমি শুধু শৈল্পিক মাধ্যমে গল্পটি বলতে চেয়েছিলাম, যেটা আমি সব সময়ই চেষ্টা করি। কী বলব আসলে বুঝতে পারছি না। আমি এটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু এটাই বলব, এটা আমার জীবনের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। এমনকি দেশের জন্যও।

বিয়ের পর এমন সাফল্য…
[হাসি] আমার তো মনে হচ্ছে, বউ [মেহজাবীন চৌধুরী] আমার জন্য লাকি চার্ম। বিয়ের পরই ভাগ্য খুলে গেছে। প্রথম ভাগ্যটাই খুলল কান উৎসবে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। এবারই প্রথম কান উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বিভাগের মূল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কোনো ছবি জায়গা করে নিয়েছে। এরপর যখন সিনেমাটি ‘স্পেশাল মেনশন’ পেল, সেটিও ভ্যাগ্য। কারণ এখানে আরও অনেক দেশের সিনেমা দেখানো হয় আগামী দিনে ইনশাআল্লাহ আরও বড় কিছুই হবে বলে মনে হচ্ছে।

সিনেমাটি কাদের উৎসর্গ করতে চান…
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন। যারা অনেক কিছু বলতে চান, কিন্তু বলতে পারেন না নানা চাপের কথা মাথায় রেখে। আমি সেই সব মানুষদের সিনেমাটি উৎসর্গ করেছি, যারা নানা চাপে কথা বলতে পারেন না। বলা যেতে পারে আমার এই সিনেমাটি মূলত কণ্ঠস্বর জাগ্রত করা নিয়েই। যার মধ্য দিয়ে ভাঙা হয় নানা বাধা-বিপত্তি, মানুষের আত্মাকে কথা বলতে উৎসাহ জোগায়। প্রশ্ন করতে শেখায়, ‘তুমি কে?’ তাদের কথাই উঠে এসেছে আমার গল্পে।

ফিলিপাইনের সহ-প্রযোজনা ছাড়া ‘আলী’ নির্মাণ করা যেত না?
ফিলিপাইনের যারা আমার সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা সবাই আমার বন্ধু। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে পোস্টের কাজের ভালো সুযোগ নেই, যে কারণে একসঙ্গে আমরা কাজটি করেছি। তাদের ছাড়া এটা অসম্ভব ছিল।

‘আলী’ সিনেমার পেছনের গল্প কী? কী অনুপ্রেরণা ছিল?
‘আলী’ একটি ছোট ছেলের গল্প, কিন্তু তার ভেতরে আছে অনেক বড় একটা বাস্তবতা– মানবিকতা, হারিয়ে ফেলা এবং ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। গল্পটা একরকম আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, যত ব্যক্তিগত একটি গল্প হয়, সেটি ততই সর্বজনীন হয়ে ওঠে। দর্শকরা বিভিন্নভাবে সংযোগ তৈরি করেন। এটাই মনে হয় ‘আলী’র শক্তি।

আপনি প্রথমবার কানে অংশ নিয়েই স্বীকৃতি পেলেন। এ অর্জন কি আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য সাহস জোগাবে?
অবশ্যই। কানে স্বীকৃতি পাওয়া মানে শুধু সম্মান নয়, একটা দিকনির্দেশনাও। একটা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে যাওয়া মানে হলো বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে পৌঁছানো। এখন মনে হচ্ছে– হ্যাঁ, আরও সাহস নিয়ে, আরও আন্তরিকভাবে গল্প বলা উচিত।

‘আলী’র নির্মাণে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এক ঝাঁক নতুন শিল্পী নিয়ে কাজ করা। কিন্তু সেখানেই সবচেয়ে বড় আনন্দটাও ছিল। তারা এতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারফর্ম করেছে যে, ক্যামেরার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে চরিত্রগুলো। এ ছাড়া, বাজেট সীমাবদ্ধতা ছিল, লোকেশন ব্যবস্থাপনা কঠিন ছিল, কিন্তু আমাদের টিমের আন্তরিকতায় সবকিছু সহজ হয়ে গেছে।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আপনার ভাবনা কী?
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শুধু ‘প্রস্তুতির প্ল্যাটফর্ম’ না– এটাই নিজে এক শক্তিশালী মাধ্যম। অল্প সময়ে একটা গভীর বার্তা দেওয়া যায়। আমাদের দেশের তরুণ নির্মাতাদের এই মাধ্যমে আরও বেশি এগিয়ে আসা উচিত।

ভবিষ্যতে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে?
অবশ্যই আছে। ‘আলী’র সাফল্য আমাকে আরও সাহস দিয়েছে বড় পরিসরে কাজ করার জন্য। স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করছি। তবে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাই না। ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে, সঠিক গল্পটা নিয়ে বড় পর্দায় আসতে চাই।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কোথায় দাঁড়িয়ে?
আমার মনে হয়, আমরা এখন একটা রেনেসাঁর মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নির্মাতারা সাহসী, বৈচিত্র্যময় এবং আন্তরিক। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এখন শুধু দরকার ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ করে যাওয়ার। কানে ‘আলী’র মতো সিনেমা সম্মান পেলে সেটা অন্যদের জন্য পথ দেখাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আদন ন আল র জ ব র ঘ য চলচ চ ত র স প শ ল ম নশন ক ন উৎসব প রথমব র ক জ কর আম দ র র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়

হাতে মোমবাতি, ঠোঁটে প্রার্থনার সুর—এভাবেই দুই কিলোমিটারেরও বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেন হাজারো ভক্ত। গন্তব্য ছিল মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত স্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে শুরু হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব’।

দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন এই উৎসবে। আয়োজক ক‌মি‌টি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়।

গতকাল বিকেল চারটায় পবিত্র খ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর রাত সা‌ড়ে আটটার দিকে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আলোক শোভাযাত্রা। রাত ১১টায় মা মারিয়ার মূর্তিকে সামনে রেখে বিশাল প্যান্ডেলে অনুষ্ঠিত হয় আরাধনা, আর রাত ১২টায় নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশিজাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় কার্যক্রম।

আজ শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের তীর্থোৎসব। এ বছরের উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। এ সময় জেলা প্রশাসক (ডি‌সি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পু‌লিশ সুপার (এস‌পি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব।
এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
খাগড়াছড়ি থেকে আসা তীর্থযাত্রী জুয়েল ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। এর পর থে‌কে প‌রিবা‌রের সবাইকে নি‌য়ে প্রার্থনায় আস‌ব।’

মুক্তাগাছা থেকে আসা কারিশমা চাম্বুগং বলেন, ‘মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।’

তীর্থোৎস‌বে মা মা‌রিয়ার মূ‌তি নি‌য়ে মোমবা‌তি প্রজ্বালন ক‌রে আলোক শোভাযাত্রা বের করা হয়। গতকাল বৃহস্প‌তিবার রাতে শেরপু‌রের না‌লিতাবাড়ী‌র বা‌রোমা‌রি সাধু‌লিও ধর্মপ‌ল্লি থে‌কে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কে হবে নারী বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন
  • ভারত নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা, কে হবে নতুন নারী বিশ্বকাপ চ‌্যাম্পিয়ন
  • বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতি টিকিটের দাম দেড় লাখ টাকার বেশি
  • গোল্ডেন বুট হাতে এমবাপ্পে বললেন, রিয়ালে আরও বহু বছর থাকতে চাই
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
  • সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী