Prothomalo:
2025-07-31@12:32:28 GMT

গাছ নিয়ে এত কথার কী আছে...

Published: 27th, May 2025 GMT

‘অন্তর্বর্তীকালীন’ সুযোগ–সুবিধা, ব্যবসা, কমিশন, সুপারিশ ইত্যাদির মিছিলে গাছ কেটে হাপিশ করার চর্চা বেশ বেগবান হয়েছে। এসব দেখে অনেক দিন পর আমাদের ফেলে আসা নীলক্ষেত–জীবনের কথা মনে পড়ছে বারবার। না, আমি তখন নীলক্ষেতের বড় বড় তেঁতুলগাছ বা নিউমার্কেটের এক নম্বর গেটে রাস্তায় বটগাছের শ্যামল চাঁদোয়া বিনাশের কথা বলছি না। আমার শুধুই মনে পড়ছে এক শিক্ষকের কথা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমলাতন্ত্রের পাঠ যে শিক্ষকের দেওয়ার কথা, তাঁর কাছে বইয়ের নাম, রেফারেন্স ইত্যাদির জন্য ভিড় করলে তিনি প্রায় হলুদ হয়ে যাওয়া হাতে লেখা কয়েকটা পৃষ্ঠা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটা একটা জামগাছের গল্প, সবাই পড়ে আসবেন। বাংলায় লেখা গল্প। গল্পটির লেখক কৃষাণ চন্দ অবশ্য বাংলা লিখতেন না। এটা প্রথমে উর্দু থেকে ইংরেজি, পরে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। কোথায় ম্যাক্স ভেবার, জেমস কিউ উইলসন আর কোথায় উর্দু গল্পকারের ‘জামগাছ’। 

গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেন, অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না, গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে

বলা বাহুল্য, সহপাঠীদের অনেকেরই বিষয়টি পছন্দ হয়নি। এত বড় একটা কুলীন বিষয়ে ভর্তি হয়ে শেষে কিনা উর্দু গল্পের বাংলা অনুবাদ পড়তে হবে? রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে অনেকেই লিখেছেন গাছ নিয়ে, জগদীশচন্দ্র বসু খুঁজে পেয়েছেন গাছেদের প্রাণ–অনুভূতি এবং তা প্রকাশের ভাষা।

সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা গাছের ‘বলা শব্দ’ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ গবেষণা মর্যাদাপূর্ণ বৈজ্ঞানিক জার্নাল সেল-এ প্রকাশিত হয়েছে। 

সেখানে ইসরায়েলি গবেষকদের দাবি, তাঁরা শুধু গাছের শব্দই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তা নয়; বরং তাঁরা গাছের বিভিন্ন ভাষাও শনাক্ত করেছেন। গাছের একেক প্রজাতি একেক ধরনের ‘ভাষায়’ নিজেদের মধ্যে কথোপকথন চালায় বলেও তাঁরা জানতে পেরেছেন। বাংলার কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাই বুঝি শহরের ন্যাড়া গাছকে বলেছেন ‘গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া-ছন্নছাড়া’।

ফিরে আসি কৃষাণ চন্দের জামগাছে। গল্প পড়ে সেই সময় আমাদের কারও কারও মনে হয়েছিল, আমলাতন্ত্রে গাছ লাগানো যত সহজ, গাছ কাটা ততই কঠিন। কেউ ভেবেছিলেন আমলাতন্ত্র মানে যন্ত্রণাতন্ত্র। কারও বিশ্বাস হয়ে যায় গামছার মতো কাঁধে অথবা দড়িতে ঝুলিয়ে রাখাই হচ্ছে আমলাতন্ত্রের কাজ। কৃষাণ চন্দর বেঁচে থাকলে দেখতে পেতেন, সেই একই আমলাতন্ত্র কীভাবে এখন বিনা বাক্যব্যয়ে অবলীলায় গাছ কেটে সাবাড় করছে।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) নামের একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৪ মাসে দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে প্রায় ১১ লাখ ৫০ হাজার গাছ কেটেছে সরকারি নানা সংস্থা। গাছ কাটায় সবচেয়ে ‘পারদর্শী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বন বিভাগকে। 

সব মিলিয়ে ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সরকারের ২৫ প্রতিষ্ঠানের নাম। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও গাছ কেটেছে। সব মিলিয়ে প্রকৃত সংখ্যা কথিত প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের চেয়ে তিন গুণ। তবে কোনো কিছুই আইনের বরখেলাপ করে করা হয়নি। আমলাতন্ত্র যথাযথ বিধান বানিয়েই বৃক্ষনিধনের ব্যবস্থা করেছে। 

মাদারীপুরের কান্দি গ্রামের কুমার নদের খেয়াঘাটে পুরোনো বটগাছটা এখন কেটেকুটে সাইজ করা হয়ে গেছে। দেখে মনে হবে, হঠাৎ দুর্ঘটনায় হাত–পা হারিয়ে এক যুবক যেন ভিক্ষা চাইছে। পুরোটাই কাটা পড়ত। ফেসবুকের কল্যাণে গাছ কাটার দৃশ্য চারদিকে ছড়িয়ে দিলে স্থানীয় আমলাদের টনকে বাড়ি পড়ে। গাছটি পঙ্গু অবস্থায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ জীবন পেয়েছে। কিন্তু যশোরের চৌগাছার বটগাছটি রক্ষা পায়নি। দীর্ঘদিনের ‘অভুক্ত’ স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা পুরোনো গাছটি কেটে ফেলেছে। এটি কাটার সময় তেমন শোরগোল শোনা যায়নি। গোল বাধে নেতা যখন গাছের কাটা ডাল ও গুঁড়ি সবই একার ভোগে লাগাতে চান। এঁটোকাঁটার আশায় বসে থাকা ব্যক্তিদের বঞ্চিত করায় বিষয়টি নিয়ে হইচই হয়। কথিত রাজনৈতিক নেতা সবাইকে দিয়ে খেলে বাইরের কেউ কিছু জানতেই পারত না। গাছ কাটা এখন এমনই সোজা কাজ।

এই যেমন ধরুন, মাদারীপুরের বটগাছ কাটাকে আমলাতান্ত্রিক বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ৫ মে গাছটার সর্বনাশ করার পর হইচই শুরু হলে ৭ মে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বটগাছের মালিককে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। জানে বেঁচে যাওয়া বটগাছ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে, এটা কি কম খুশির কথা! 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির গাছ জমির মালিক নিজ উদ্যোগে বিক্রি বা কাটতে পারেন। বটগাছটিও ওই জমির মালিক নিজেই বিক্রি করেছেন। তিনি নতুন বাড়ি করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনের দাবি কি ঠিক? ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০২১’–এর খসড়ার অনুমোদনের সময় ব্যক্তিমালিকানায় থাকা গাছ কাটতে অনুমতির বিধান রাখার সিদ্ধান্ত হয়। 

সেই বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘যাঁরা সাধারণ বাগান করবেন বা স্থায়ী যে গাছ লাগাবেন, সেগুলোও তাঁরা তাঁদের ইচ্ছেমতো কাটতে পারবেন না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ রকম নিয়ম আছে। আমার বাড়িতে একটি গাছ পড়ে গেছে, এটা আমি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটতে পারব না। সৌদি আরবে.

..এটা ভারতেও আছে।’ 

এরপর গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেন, অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না, গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। তবে যে যা–ই বলুক, সত্যি ব্যাপারটা হচ্ছে গাছ আছে বলেই আমরা আছি। 

গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমল ত বটগ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কথাই বলেছেন, ভারতের অর্থনীতি মৃত।

আজ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রাহুল এই মন্তব্য করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও একই কথা লেখেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ভারতের অর্থনীতিকে মেরে ফেলেছেন।

গতকাল বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লেখেন, ‘ভারত ও রাশিয়া—দুই দেশের অর্থনীতিই মৃত। দুই দেশের মধ্যে কী বোঝাপড়া হয়েছে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তারা একই সঙ্গে মৃত অর্থনীতি নিয়ে রসাতলে যেতে পারে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুবই কম। ওদের শুল্কহার প্রচণ্ড চড়া। পৃথিবীর সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য হয় না বললেই চলে। অতএব, ও নিয়ে না ভাবলেও চলবে।’

আজ সংসদ ভবন চত্বরে গণমাধ্যম রাহুলকে ট্রাম্পের ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ভারতের অর্থনীতি যে মৃত, তা সবাই জানেন। আপনারা জানেন না? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ছাড়া এই সত্য সবার জানা। আমি খুশি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যি কথাটা বলেছেন। গোটা পৃথিবী জানে ভারতের অর্থনীতি মৃত। আদানিকে সাহায্য করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে বিজেপি।’

এরপর রাহুল একই কথা ‘এক্স’ মারফতও জানান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ভারতের অর্থনীতি মৃত। মোদি মেরে ফেলেছেন।’ এরপর পাঁচটি কারণ দেখিয়ে রাহুল ব্যাখ্যা করেন, কেন ও কী কারণে ভারতের অর্থনীতির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে—১. আদানি-মোদি অংশীদারত্ব; ২. নোট বাতিল ও ত্রুটিযুক্ত জিএসটি; ৩. ভারতে যন্ত্রাংশ জোড়া লাগানো বা ‘অ্যাসেম্বল ইন ইন্ডিয়া’ নীতি; ৪. মধ্যম ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস করে দেওয়া এবং ৫. কৃষকদের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া।

এই পাঁচ কারণ দেখানোর পর রাহুল লেখেন, ‘দেশের যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ মোদি তছনছ করে দিয়েছেন। কারণ, কোথাও কোনো চাকরি নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি নিয়ে রাহুল বলেন, ‘দেখে নেবেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি হবে। ট্রাম্পই সেই চুক্তির সংজ্ঞা ঠিক করবেন, মোদি স্রেফ তাঁর নির্দেশ মেনে নেবেন।’

রাহুল আরও বলেন, ‘মোদি স্রেফ এক ব্যক্তি বিশেষের জন্য কাজ করেন। শিল্পপতি গৌতম আদানি। দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পররাষ্ট্রনীতি তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ