বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা থোয়াইংগ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে সাবার করার অভিযোগ উঠেছে বালাঘাটার স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। পাহাড় কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বর্ষার সময় ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত তিন দিন ধরে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে আশপাশের জনপদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত পাহাড়টি বেশ উঁচু এবং সবুজে আচ্ছাদিত ছিল। হঠাৎ করেই অজ্ঞাত লোকজন এসে সেখানে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটতে শুরু করে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, হয়ত সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজ চলছে কিন্তু পরে দেখা যায়, এটি অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষাকাল হওয়ায় কাঁচা রাস্তা অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি ট্রাকে করে অন্য জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। পাঁচটি ট্রাক মাটি নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাতায়াত করছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

উখিয়ায় পাহাড় ধসে শিশুর মৃত্যু

পাহাড় ধস
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদার হাট লিংক রোড

একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘আমরা তিনদিন ধরে দেখছি, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এতে শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের বাড়িঘরও হুমকির মুখে পড়ছে। পাড়ার বাচ্চারা প্রতিদিন ওই স্কুলে যায়। পাহাড় ধসে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

থোয়াইংগ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন বিদ্যালয়ের সংলগ্ন পাহাড় সারা দিন ধরে কাটা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সামনে নিয়মিতভাবে ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে, তার উপর ভারী মাটিবোঝাই গাড়িগুলোর চলাচল পরিবেশকে আরো বিপজ্জনক করে তুলছে। এ অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকতাকে জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

ট্রাক ড্রাইভার মামুন ও সাইফুল ইসলাম রিমন জানান, পাঁচটি ট্রাক দিয়ে মাটি টানা হচ্ছে মাটি।  একেকটি ট্রাক দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ বার মাটি নিতে পারে বলে জানান তিনি। 

স্কেভেটর ড্রাইভার জামাল উদ্দিন বলেন, তিনি দুইদিন ধরে পাহাড় কাটছেন। প্রতি ট্রাক ১৩০ টাকার বিনিময়ে মাটি কাটার কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘‘স্বর্ণমন্দির এলাকায় মাটি ভরাট করা কাজ নিয়েছি। তাই পাহাড় কেটে ভরাট করছি।’’ পাহাড় কাটা অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো  কথা বলেননি।

এ বিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নুর উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’

বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি বলেন, ‘‘পাহাড় কাটার বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যারা অবৈধভাবে পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ 

ঢাকা/চাইমং/বকুল  

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প হ ড় ধস ব ন দরব ন পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

বিনষ্ট করা বাবুই পাখির বাসা প্রতিস্থাপন 

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বিনষ্ট করা ৩০টি বাবুই পাখির বাসা এবং ২০টি বাবুই পাখির ডিম প্রতিস্থাপন করেছে বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকালে উপজেলার উত্তর আমখোলা গ্রামের তাল গাছে এ সব বাসা প্রতিস্থাপন করা হয়। 

বুধবার (৩০ জুলাই) ওই গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মোল্লা এ সব বাসা বিনষ্ট করেন। বাসা প্রতিস্থাপনের সময় গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক সফিকুল ইসলাম ও এনিমেল লাভারস অফ পটুয়াখালীর সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার কর্মী আসাদুল্লাহ হাসান মুসা উপস্থিত ছিলেন। 

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা বলেন, ‘‘কৃষক সিদ্দিক মোল্লার ধানক্ষেতের পাশের তালগাছে বাবুই পাখি এসব বাসা বুনন করেছিল। কৃষক সিদ্দিক মোল্লা এ সব বাসা বিনষ্ট করেন। আমরা খবর শোনামাত্র বিষয়টি বন বিভাগকে অবহিত করি। পরে আজ বাসাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’’ 

আরো পড়ুন:

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যায় ২ মামলা

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাসাগুলো ওই কৃষকের ধানক্ষেত সংলগ্ন তালগাছে বুননের কারণে তিনি বিনষ্ট করেছেন। তার পরিবার হতদরিদ্র। তিনি আর বাবুই পাখির বাসা বিনষ্ট করবেন না মর্মে মুচলেখা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাসাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।’’ 

গত মাসে ঝালকাঠিতে তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস ও ছানা হত্যার ঘটনা নিয়ে সমলোচনা হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
 

ঢাকা/ইমরান/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ