পতনের ধারাতেই রয়েছে শেয়ারবাজার। টানা ষষ্ঠ দিনে গতকাল বুধবারও অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৭৩ শতাংশের দর পতন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬১৫ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান করোনাকালে ফিরেছে, যা ২০২০ সালের ১০ আগস্টের পর বা গত পৌনে পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন। গত ছয় কর্মদিবসে ডিএসইএক্স ১৮৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমেছে। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত সরকারের পতনের পর প্রথম চার কর্মদিবসে শেয়ারবাজার বেশ চাঙ্গা হয়েছিল। এর পর থেকে দর পতন চলছে। প্রতিদিনই শত শত বিনিয়োগকারী লোকসানে সব শেয়ার বেচে দিয়ে লোকসান আরও বড় হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। চলতি মাসে পৌনে তিন হাজার বিনিয়োগকারী বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে বাজার ছেড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময় বিবেচনায় সংখ্যাটি ৩২ হাজারের বেশি। এর বাইরে ৪৫ হাজারের বেশি বিও হিসাব পুরোপুরি শেয়ারশূন্য হয়েছে। 

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭৪টির পতন হয়েছে। এর মধ্যে দর কমপক্ষে অর্ধেকে নেমেছে হয়েছে ৫০টির। ২০ শতাংশের বেশি দর পতন হয়েছে ৩০৫টির।

সরকার ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাস পর শেয়ারবাজার সংস্কারে সুপারিশ করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কিন্তু টাস্কফোর্স আট মাস পর আইপিও, মার্জিন ও মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার কিছু সংশোধন প্রস্তাব ছাড়া কোনো প্রস্তাব দেয়নি।

জানতে চাইলে ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট তীব্র। যারা বিনিয়োগ করতে এসেছিলেন, তাদের উপলব্ধি তারা ভুল করেছেন। সাইফুল ইসলাম সমকালকে আরও বলেন, ‘এই বুঝি পতন বন্ধ হলো’– এমন আশায় যারা শেয়ার কিনেছিলেন, অপেক্ষাকৃত কম লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। যাদের লোকসান ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ, তারা এ লোকসান নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে বাজারে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন। এ হতাশার শেষ কবে, তার উত্তর কারও কাছে নেই। ফলে ক্রেতা সংকট বাড়ছে। 

ডিএসইতে লেনদেন দুইশ কোটির ঘরেই আটকে থাকছে। গতকাল কেনাবেচা হয় ২৬৫ কোটি টাকার শেয়ার, যা মঙ্গলবারের তুলনায় পৌনে আট কোটি টাকা কম। গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট শেষে ডিএসইএক্স সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৪৬৯৬ পয়েন্ট ছাড়ায়। দুপুর দেড়টার পর ওই অবস্থান থেকে ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬০০ পয়েন্টের নিচে নামে। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ১০ আগস্টের পর এই প্রথম ৪৬০০ পয়েন্টের নিচে নেমেছিল।

গত মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় বিও হিসাবের নবায়ন ফি ১৫০ টাকায় নামিয়ে আনা, বার্জার পেইন্টসের রাইট শেয়ার বিক্রির অনুমোদনসহ চার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। গতকাল ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সঙ্গে এক বৈঠকে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়ন নিয়ে খুবই আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হয়ে উৎসাহের সঙ্গে ভালো শেয়ারে নতুন বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। এর বাইরে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করা, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য মূলধনি মুনাফায় এবং নগদ লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র সরক র র পতন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২৭ পদের চাকরি পেতে আর কত অপেক্ষা

২০২০ থেকে ২০২৫—৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২৭ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। করোনা মহামারি, ফুটবল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ, এমনকি একটি গণ-অভ্যুত্থান পার হলেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটছে হাজারো চাকরিপ্রত্যাশীর।

২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৬ ক্যাটাগরির ১ হাজার ৫৬২টি পদের জন্য প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি আসে। কয়েক ধাপে লিখিত, মৌখিক এবং কয়েকটি পদের ব্যবহারিক পরীক্ষাও ২০২৩ সালে শেষ হয়। কিন্তু এরপরও ২৫ ক্যাটাগরির পদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে, দুটি ক্যাটাগরির পদের পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিতই হয়নি।

জানা যায়, ২০২৩ সালে একযোগে ২৬টি পদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও একই বছরের ১ নভেম্বর মাত্র ৩টি পদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এর আগে আরও ৬টি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, তবে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও ২৩টি পদের ফলাফল কেন প্রকাশ করা হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারছে না অধিদপ্তর।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলেও আটকে আছে ফলাফল, আশাহত প্রার্থীরা

গবেষণা সহকারী পদে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একজন প্রার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ‘একই সঙ্গে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েও কারও চাকরি হলো, কারও হলো না। দুই বছরের বেশি সময় পার হয়েছে, কিন্তু ফলাফল হয়নি। এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। আমরা অনেকবার স্মারকলিপি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি, কিন্তু অধিদপ্তর কোনো গুরুত্বই দেয়নি।’

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে আবেদনকারী একজন বলেন, ‘আবেদন করতে তো টাকা লাগে। আমরা যাঁরা ছোট পদে আবেদন করি, তাঁদের আর্থিক অবস্থাও ভালো থাকে না। এরপর পরীক্ষা না হলে আরও হতাশ হতে হয়। পাঁচ বছর হয়ে গেছে, এখন আর পরীক্ষা হবে সে আশা করি না।’

আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক নিয়োগে দুই ধাপের লিখিত পরীক্ষা ২ জানুয়ারি১৭ ঘণ্টা আগেনিয়োগপ্রক্রিয়া বিলম্বের কারণ

নিয়োগপ্রক্রিয়া এত দীর্ঘ হওয়ার বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মীর সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পদ সংরক্ষণের মেয়াদ থাকে তিন বছর। ফলে আমরা নতুন করে ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) করেছি। কোটাসংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। আমাদের কাজ প্রায় সমাপ্ত, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’ এত দিন কেন ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে আমি এই পদে যোগ দিয়েছি। আগে ঠিক কী কারণে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে ছিল, এ বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই।’

আরও পড়ুন৬৫৫০২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ এখন ১০ম গ্রেড১৭ ঘণ্টা আগে

এ ছাড়া, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (গ্রেড-১৬) ও অফিস সহায়ক (গ্রেড-২০) পদের পরীক্ষা নিয়োগবিধি সংশোধনের পর অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে পরিচালক জানিয়েছেন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের প্রশাসনের রদবদলসহ অভ্যন্তরীণ কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া পিছিয়েছে। আগের প্রশাসক অধিদপ্তরে অনেক পদ শূন্য রেখে গিয়েছে । এসবের স্পষ্ট কোনো কারণ আমরা জানি না।’

আরও পড়ুনকানাডায় ৫ হাজার চিকিৎসকের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, বাংলাদেশ থেকে আবেদন সম্ভব কি?১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই–এ চাকরি, পদ ১৩৭ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পানছড়িতে তিন ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
  • শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
  • পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২৭ পদের চাকরি পেতে আর কত অপেক্ষা